
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরাজমান অস্থিতিশীলতায় কঠিন সময়ের মুখে পড়েছে রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলোয় শ্রম অসন্তোষ বিরাজমান আছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা, ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। এরই মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন ও ঈদের বোনাসের বিশাল চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি খাতের প্রণোদনার ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আটকে গেছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের মালিকদের শঙ্কা প্রণোদনার টাকা না মিললে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়তে হবে।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে শিল্প মালিকদের এ শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। তাদের মতে, ঈদের আগে বেতন-ভাতা ও বোনাস দেওয়া না গেলে দেশে বৈরী পরিবেশ তৈরি হতে পারে। সরকারের অর্থ সংকটের কারণে ঈদের আগে এই টাকা ছাড় করা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন এলএফএমইএবির পক্ষ থেকে প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড় করতে চলতি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে প্রণোদনার বকেয়া পাওনার তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, জুলাই থেকে মার্চ-এই নয় মাসে পোশাকশিল্পে বকেয়া প্রণোদনা ৫২২৭ কোটি টাকা, নিটওয়্যার শিল্পে ৭০০০ কোটি টাকা এবং চামড়া-চামড়াত পণ্য শিল্পের ৩০৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এ অর্থ দ্রুত ছাড় করার দাবি জানানো হয়।
প্রণোদনার বিষয়টি অবহিত আছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি তিনি এ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানি শিল্পের নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শিল্প খাত সচল রাখার চেষ্টা চলছে।
বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে জানান, রপ্তানি খাতের নগদ সহায়তার অঙ্ক খুব বেশি নয়। কিন্তু সেটি পেতে গিয়ে জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। এটি পরিহার করতে অর্থ উপদেষ্টাকে সরাসরি বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার মতো প্রণোদনা আটকে আছে। ঈদের আগে প্রণোদনার অর্থ পাওয়া গেলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস নিয়ে মালিকপক্ষের কোনো দুশ্চিন্তা হবে না। নগদ সহায়তার অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগ রয়েছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সম্ভব নয়। আর যদি হয়েও থাকে এর জন্য ব্যাংকগুলো দায়ী। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকই একমাত্র পারে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করতে।
সূত্রমতে, গত ৪ মার্চ অর্থ উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে বিজিএমইএ বলেছে, ঈদের আগে পোশাকশিল্পের মালিকরা বহুমুখী আর্থিক চাপের মধ্যে থাকেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বোনাস ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল এবং অন্যান্য খরচ পরিশোধ করতে হয়। ফলে স্বল্পসময়ের মধ্যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজনে তারল্য সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে নগদ সহায়তার অর্থ পাওয়া না গেলে বেতন ও বোনাস পরিশোধ কঠিন হবে। আর সেটি ঘটলে দেশে বৈরি পরিবেশ তৈরি হতে পারে। ওই চিঠিতে বেতন, বোনাস ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যয়ের জন্য বড় অঙ্কের অর্থের জোগান দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তত ৬ (ছয়) মাসের দাবিকৃত নগদ সহায়তার অর্থ ছাড়করণ খুবই জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়।
সূত্রমতে, পোশাকশিল্পে গত জুন থেকে মার্চ পর্যন্ত এ নয় মাসে কোনো নগদ সহায়তার অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এতে বকেয়ার মধ্যে জুনে ৩৪৪ কোটি, জুলাইয়ে ৬৫৫ কোটি এবং আগস্টে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ কোটি টাকা। এছাড়া সেপ্টেম্বরে ৭১৬ কোটি, অক্টোবরে ৬১১ কোটি, নভেম্বরে ৬৫৫ কোটি, ডিসেম্বরে ৭২৪ কোটি, জানুয়ারিতে ৬৬৩ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২১২ কোটি এবং মার্চে ২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিকেএমইএ-এর পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টার কাছে লিখিত চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে নগদ সহায়তা বাবদ মার্চ পর্যন্ত জমা ৭ হাজার কোটি টাকা। এদিকে অর্থ উপদেষ্টাকে বকেয়া নগদ সহায়তার অর্থ চেয়ে চিঠি দিয়েছে লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলএফএমইএবির প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর যুগান্তরকে জানান, আপৎকালীন রপ্তানি শিল্পকারখানাগুলোকে সচল রাখার স্বার্থে টাকার অত্যন্ত প্রযোজন। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই দাবিকৃত নগদ সহায়তা ছাড় না হলে শ্রমিক-কর্মচারীদের ঈদ বোনাস ও বেতন প্রদান করা সম্ভব হবে না।