Image description
পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে বসবে মেলা, হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি

ঈদুল ফিতরের উৎসবকে এবার জাতীয়ভাবে আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠানে রূপ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশাপাশি রাজধানীর আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে ঈদের নামাজ ও ঈদমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে নারী-পুরুষ সবাই অংশ নিতে পারবেন। যেখান থেকে ঈদের বর্ণাঢ্য র‌্যালিও বের করা হবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া নয়া দিগন্তে বলেন, আমরা ঈদ উৎসবের সুলতানি আমলের সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। বর্তমানে তরুণরা ঘরে বসে মোবাইল-টিভির সামনে ঈদের দিন পার করেন। আমরা এ থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চাই। এজন্য নামাজের আয়োজনের পাশাপাশি মেলা, সাং¯ৃ‹তিক অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হচ্ছে। এতে নারী-পুরুষ-শিশু সবাই অংশ নেবে। এতে ঈদের উৎসব একটি অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। এবার এ জাতীয় উৎসবের শুরু জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এবার ঢাকায় প্রথম শুরু করছি। সারা দেশে উৎসব করার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির সময় না থাকায় সবার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আহবান জানাতে পারছি না। তবে যাদের সুযোগ থাকবে তারাও যেন ঈদ উৎসবের আয়োজন করেন সে আহবান থাকবে আমাদের। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আসুন, সবাই মিলে একসাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নয়া দিগন্তকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ কোনো উৎসব করার সুযোগ পায়নি। এজন্য ডিএনসিসির উদ্যোগে এবার ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের উৎসবের আয়োজন করছি। এ উৎসবে আমরা নগরবাসী সবাইকে অংশগ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। এখানে সকাল ৮টায় একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদ উৎসবে কয়েক লাখ লোকের আয়োজন থাকবে। নামাজের জন্য নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। ওজুর ব্যবস্থা, টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হবে। মেলায় কাপড়, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসবে। আর সবাই মিলে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে। যেখানে সুসজ্জিত ঘোড়া-হাতিও থাকবে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান : পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবারের মতো এবারো ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এরই মধ্যে জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ মাঠে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেখানে চলছে প্যান্ডেল তৈরির কাজ। জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশের খুঁটি বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে মাঠের ত্রিপল টাঙানোর কাজ। মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রেন। মশা তাড়ানোর জন্য প্যান্ডেলের নিচে মশকনিধন কাজ চলছে। নারীদের জন্য পৃথক তিনটি গেট তৈরি এখনো বাকি।

কর্মরতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ত্রিপল টাঙানো শেষ হলে শুরু হবে ভেতরে চট ও কাপড় বিছানোর কাজ। দু-একদিনের মধ্যেই সাজসজ্জার কাজ শেষ হবে। সবশেষে ইমামের মেহরাবের ধোয়া মোছার পর রঙ করার কাজ চলছে। এ ছাড়া মাঠের আশপাশে রঙ করা এবং ঝাড়ু দেয়া চলছে। জানা গেছে, মাঠের মধ্যে মিনার ও ইমামের মেহরাব বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত সবচেয়ে উঁচু বাঁশের খাটালসহ (খুঁটির সারি) মোট সাতটি খাটাল বসানো হয়েছে। পুরো মাঠে মোট ১৬টি খাটাল (খুঁটির সারি) বসানো হয়েছে। প্যান্ডেলের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, প্রতি বছরই আমরা প্যান্ডেল তৈরির কাজে থাকি। রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৫-২৬ জন শ্রমিক কাজ শুরু করেছি। ১৫ রমজানের পর ধীরে ধীরে শ্রমিক বাড়তে থাকে। পরে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক কাজ করে এখন আবার শ্রমিক কমেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজ চলছে।

জাতীয় ঈদগাহ মাঠসহ আশপাশে প্রায় অর্ধলাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এর মধ্যে সাড় পাঁচ হাজার নারীর জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকছে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে রাষ্ট্রপতি, উপদেষ্টা পরিষদ, কূটনৈতিক, সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদ জামাতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ময়দানে ৩৫ হাজার লোকের ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে আশপাশেও নামাজের ব্যবস্থা থাকবে।