
প্রতিদিনই জমা পড়ছে অভিযোগ। কিন্তু হচ্ছে না শুনানি ও নিষ্পত্তি। কমিশনার না থাকায় কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে তথ্য কমিশন। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শেষ শুনানি হয় তথ্য কমিশনে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৪২টি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগকারীরা বলেন, একে তো তারা তথ্য না পেয়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন, উপরন্তু অনেক কার্যালয় জেনে গেছে তথ্য কমিশন কাজ করছে না। তাই তারাও তথ্য দিচ্ছে না, তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিশনার নিয়োগ দিয়ে তথ্য কমিশন কার্যকর করার দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান তথ্য কমিশনার ও একজন তথ্য কমিশনার পদত্যাগ করেন। পরে অপর কমিশনারকে অপসারণ করা হয়। ফলে ছয় মাস ধরে তথ্য কমিশনের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওস্থ তথ্য কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, প্রশাসন, অর্থ ও আইটি পরিচালক এ কে এম আজিজুল হক এবং গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ পরিচালক মু. মিজানুর রহমান খন্দকারকে এক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা এখনো পর্যন্ত কমিশনের কার্যাবলির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। মিজানুর রহমান খন্দকার জানান, ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ১২০টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত সব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা পড়া ৩১৬টি অভিযোগের মধ্যে ২৫টি নিষ্পত্তি হয়নি। কোনো সপ্তাহে একটি, আবার কোনো সপ্তাহে ১০টি অভিযোগ জমা পড়ে। তবে এখন অভিযোগ ঝুলে আছে অপেক্ষাকৃত কম অভিযোগ জমা পড়ছে বলে।
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক অরূপ রায় ২০০৯ সাল থেকে তথ্যের জন্য বিভিন্ন সময় ৫৫৬টি অভিযোগ করেন তথ্য কমিশনে। এখন পর্যন্ত তার ১৪টি অভিযোগ জমা আছে। ২০২৪ সালের আছে চারটি, ২০২৫ সালের ১০টি অভিযোগ জমা আছে। কমিশনার না থাকায় শুনানি ও সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আগে আবেদন করে তথ্য পাওয়া যেত, এখন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ সবাই জানে, তথ্য না দিলে তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে না। ফলে আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
২০০৯ সালে তথ্য কমিশন শুরু করে। তথ্য অধিকার আদায়ে কাজ করছে তথ্য অধিকার ফোরাম। ফোরামের সদস্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, এতদিন কমিশন অকার্যকর এটা দুঃখের বিষয়। যদিও শুরু থেকে সরকারের লোক কমিশনের দায়িত্বে থাকায় কমিশন কার্যকর ছিল না। তাই কমিশনারদের নিয়োগ নিরপেক্ষভাবে করা উচিত। কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনকে নাগরিকের ক্ষমতায়ন ও স্বচ্ছতা প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন একটা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ছয় মাসের অধিক সময় কমিশনার নেই—এটা বিশ্ব রেকর্ড। সরকারের কাছে তথ্য আছে, তার পরও কেন এত দিন পর্যন্ত তথ্য কমিশন কার্যকর করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
ফোরামের সদস্য ও এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, আমরা সরকারের কাছে দুটি দাবি করেছি, প্রথমত কমিশনার নিয়োগ দিয়ে কমিশন কার্যকর করা। দ্বিতীয়ত-আইনের পরিবর্তন এনে কমিশনকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন করা।