Image description

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক-প্রকাশক মাহফুজ আনাম মনে করেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র নেই।’ তবে তিনি জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ‘ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ দেখছেন।

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নিয়ন্ত্রিত হয় পরিবারতন্ত্রের ধারায়। দলের ভেতরে কোনো ধরনের গণতন্ত্র নেই। দলীয় পদ-পদবি কারা পাবে, তা এক ব্যক্তির ইচ্ছাধীন, কোনো নির্বাচন নেই।’ 

তার মতে, ‘জামায়াতই একমাত্র দল, যারা তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব নির্বাচনের কাঠামো অনুসরণ করে।’

সম্প্রতি আয়োজিত জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ পেয়ে উপস্থিত ছিলেন মাহফুজ আনাম। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের (এনসিপি) ‘আমন্ত্রণ পাওয়া ছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সেখানে উপস্থিত থাকতে পারাটা আমি বেশ উপভোগ করেছি।’ 

ওই ইফতার মাহফিলে নিজের উপস্থিতিকে মাহফুজ আনাম তুলনা করেন ‘ষাটের দশকের শেষ দিকে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (ইপিএসইউ) দশম জাতীয় সম্মেলনে’ তার উপস্থিত থাকার মতো। যদিও ছাত্র ইউনিয়নের মতো প্রগতিশীল সংগঠনগুলো ষাটের দশকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেনি।

তিনি এনসিপি সম্পর্কে বলেন, ‘দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন, যেটি তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এবং গরিব ও নিপীড়িত মানুষকে সত্যিকারের ভালোবাসবে। এমন একটি দল প্রয়োজন, যারা অত্যাচার ও শোষণের শৃঙ্খল মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখবে। ... সেদিক থেকে এনসিপির সম্ভাবনা রয়েছে।’

তার মতে, ‘এনসিপি ইতোমধ্যেই সবার মাঝে ব্যাপক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।’ ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক কলামে মাহফুজ আনাম এসব কথা বলেন।

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণ, স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন ও স্বার্থপর ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন রাজনৈতিক দল (এনসিপি) গঠিত হয়েছে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরাই, যারা আমাদের মুক্ত করেছে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারের কবল থেকে।’

দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘দলগুলো সবসময় দলের চেয়ে নেতাকে এবং দেশের চেয়ে দলকে এগিয়ে রেখেছে। জনস্বার্থ নয়, দলীয় স্বার্থ রক্ষাই তাদের মূল লক্ষ্য। কোনো বড় রাজনৈতিক দলের ভেতরেই গণতন্ত্র নেই। তাদের দল পরিচালনার পদ্ধতি এতটাই কেন্দ্রীভূত যে, এক ব্যক্তিই সব সিদ্ধান্ত নেন, তার ইচ্ছাই দলের জন্য চূড়ান্ত আদেশ।’

তিনি লেখেন, ‘স্বজনপ্রীতি ও চাটুকারিতা তাদের (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) নিত্যদিনের চর্চা। এর ফলে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে, যারা নিজেদের আনুগত্য দেখিয়ে দলীয় কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে। তারা সাংগঠনিক নির্বাচন সময়মতো আয়োজন করেনি—সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে তো নয়ই।’

তিনি আরো বলেন, ‘দলের সর্বনিম্ন স্তর থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত কে কোন পদে থাকবে, তা মনোনীত হতো উপর থেকে—শুধু শীর্ষ পদ ও কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটা ব্যতিক্রম ছাড়া।’