Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শুধুমাত্র পুলিশেই নিয়োগ পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬৩ জন। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই এএসপি, এসআই, সার্জেন্ট ও কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য। এই ১৫ বছরে কোটায় নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষক হিসেবে এই সময়ে নিয়োগ পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৮৫ জন। যা কোটায় মোট নিয়োগ পাওয়াদের প্রায় অর্ধেক। পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে সহকারী ও প্রধান শিক্ষক পদে প্রতি জেলায় অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ জন কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাসিনা সরকার পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই গত ১৫ই আগস্ট সরকারি চাকরিতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির পদে এই পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া জনবলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য চেয়ে সকল মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। চিঠিতে প্রার্থীর নাম, পিতার নাম, নিয়োগপ্রাপ্ত পদ, শ্রেণি নম্বর ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঠিকানা ও সনদ-গেজেট নম্বর চাওয়া হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, পরিদপ্তরসহ মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানে পৃথকভাবে এই চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চিঠি পেয়ে ওই বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল মন্ত্রণালয় ও তাদের আওতাধীন দপ্তরগুলো থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পাওয়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য ডাকযোগে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৮৬ জন। সূত্র বলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ওই তালিকা পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই চলছে। ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ যাচাই-বাছাই কাজ শেষ করেছে মন্ত্রণালয়। যাচাই করা তথ্যে দেখা গেছে, কোটায় নিয়োগ পাওয়াদের ৬০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি।

কোন মন্ত্রণালয়ে কতো জন চাকরি পান: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেতু বিভাগ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পান ১২ জন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ২৯ জন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৪২৮৬ জন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ৫৬ জন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে ৭৯ জন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০৯ জন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ১০ জন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৫ জন, লেজিসেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ৯ জন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২৭ জন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২২১ জন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৬৮১ জন,  স্থানীয় সরকার বিভাগ ১১৯১ জন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪৮৯ জন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১৮ জন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৮১০ জন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ ২৬৮ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৪ জন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২২৫ জন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৮১১ জন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩২৮ জন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৯,৪৮৫ জন, বাংলাদেশ পুলিশ ২৩,০৬৩ জন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ৫৬ জন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৪৮৩৫ জন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৯৯৭ জন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ৩০৩ জন, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৫৭ জন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬৮ জন, অর্থ বিভাগ থেকে ১৮৯ জন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ২৮৩০ জন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৩৭ জন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫৮ জন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ১২৫২ জন, শিল্প মন্ত্রণালয় ৫৪২ জন, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২১০১ জন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ ১৭৩২ জন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ১৭ জন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১২ জন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ১০১ জন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ১৩ জন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ১৩২ জন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ১ জন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০৬ জন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ১৮১ জন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১২ জন, সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় ৭৪০৭ জন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৩২ জন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৭১ জন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৩৩০ জন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১১৫ জন, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৬৬ জন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদাশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১০০ জন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৬১৭ জন, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৮৫২ জন, দুর্নীতি দমন কমিশন ৫১ জন, ভূমি মন্ত্রণালয় ৭৬ জন ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পান। কোটায় চাকরি পাওয়াদের অধিকাংশই ২০১০ সাল থেকে ২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাকরি পেয়েছেন। 

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেয়াদের একটি অংশ ভুয়া তথ্য দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ে সেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই শেষে এর তথ্য পাওয়া যাবে।