Image description
ছেলেটা অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ত, ফ্রি ল্যান্সিং করত। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, আইন শৃঙ্খলা "রক্ষাকারী" বাহিনী এক সকালে তাকে হোস্টেলের পাশ থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যায়। অনেকেই জিজ্ঞেস করেন বাহিনীগুলো এরকম র্যান্ডম গুম কেন করত? নিশ্চয় কোন কারণ ছিল, তাই না? জেনে অবাক হবেন যে নিছক সন্দেহের বশে, বা মিসটেকেন আইডেন্টিটির কারণে, বা পূর্ব শত্রুতার জেরে, বা টাকার স্বার্থে, বা স্রেফ প্রমোশনের আশায়, অথবা ঢাকায় একটা পোস্টিঙের লোভে -- কত হরেক রকম ফালতু কারণে যে গুম করা হত তার ইয়ত্তা নেই। এমনকি যখন লেজিটিমেট কারণও থাকত কাউকে এরেস্ট করার, বিজ্ঞ মশাইগুলো আইনত এরেস্ট না করে, উলটা আসামীকে গুম করে অধিক পুণ্য কামাই করত। ১৫ বছর ইনএফিশিয়েন্ট এবং অকর্মণ্য মানুষ সমাজের অন্য সব জায়গায় জেঁকে বসার সাথে সাথে গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর মাঝেও ছড়ায়।
 
অতঃপর তারা গুম করে নির্মম টর্চার করাকেই গোয়েন্দাগিরির সমার্থক ধরে নিয়েছিল।যাহোক ছেলেটার কথায় ফিরি। গুম থেকে জীবিত ছাড়ার কালে অবধারিত কয়েকটা ভুয়া মামলা ঠুকে দিত উর্দিওয়ালারা। সেই সুবাদে বহুদিন পর জেল খেটে, ছেলেটা এখন বাসায় ফিরেছে। এইটুক বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল। "আমার ফ্যামিলি আমাকে বার্ডেন ভাবে, ম্যাডাম। গুম হওয়ার কারণে আমি পড়াশোনা শেষ করতে পারি নাই, তাই কোন চাকরি পাইনা। মাসে মাত্র ৩০০০ টাকা আয় করি। আমার মেয়ের চিকিৎসার পয়সা দিতে পারিনা। আমার ফ্যামিলি আমাকে বার্ডেন ভাবে, ম্যাডাম।" ছেলেটা অঝোরে কাঁদছে আর কাঁদছে। সে আমার কাছে কিচ্ছু চাচ্ছে না।
 
জাস্ট তার ওপর করা এই হরিফিক অবিচারটা কারও সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি ফোন করে ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে বললে কোন লাভ হবে কিনা। বলল, মনে হয় না। তারা আসলে বুঝে ওর কোন দোষ নাই কিন্তু ওকে ছাড়াতে যে পরিবারের ভিটামাটি সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে... অভাব হ্যাজ ইটস ওউন ল্যাংগুয়েজ - আমার সান্ত্বনায় তো সেই ল্যাংগুয়েজ পরিবর্তন হওয়া সম্ভব না।গুমের বিচার যারা হতে দিচ্ছেন না--অভিযুক্তদের সেফ এক্সিট দিচ্ছেন--তারা প্লিজ ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। আমাদের কাছেই প্রায় ১৮০০ কেস, অনুমান করি এর ডবল কেসলোড এখনও আমরা হদিস পাইনি। এই ছেলেটার কান্নার মত ১৮০০টা পরিবারের কান্না দুনিয়াতে তো বটেই আখেরাতেও কিন্তু আপনাদের তাড়া করবে। কথা দিচ্ছি, প্রস্তুত থাকেন।