Image description

জনশক্তি রপ্তানির সনদ পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস লিমিটেড। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জানুয়ারি মাসে লাইসেন্স পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সদস্যপদ পেয়েছে। বায়রার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির রিক্রুটিং লাইসেন্স (আরএল) নম্বর ২৮০৬।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী নজরুল হক গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদে কর্মরত আছেন। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মিরপুর-১-এর চিড়িয়াখানা সড়কের ৫৩/এ বক্সনগরের টেলিকম ভবনে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস লিমিটেডের আবেদনটি ২০০৯ সালের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১৭ বছরেও আবেদনটি নিষ্পত্তি করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত জানুয়ারি মাসে গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডকে জনশক্তি রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তারা প্রয়োজনীয় ফি ও জামানত জমা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে আরএল নম্বর পেয়েছে। এর পরই প্রতিষ্ঠানটিকে বায়রার সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের ৯০ শতাংশ শেয়ার ইউনূস সেন্টারের এবং ১০ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ শিক্ষার।

 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সারওয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, ‘গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নামে জনশক্তি রপ্তানির জন্য আগেই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বিগত সরকার তাদের লাইসেন্স দেয়নি। পরে গত জানুয়ারি মাসে তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ফি গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিশোধ করেছে। ফি পরিশোধের পর আরএল নম্বর দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা বায়রার সদস্যপদ পেয়েছে।

 
 

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিং একটি আধুনিক ও উন্নতমানের নার্সিং কলেজ। এই কলেজ থেকে যারা লেখাপড়া করেন, তারা পাস করার আগেই ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে চাকরির সুযোগ পান। কারণ তারা ইংরেজি বলা, আইএলটিএসসহ সব বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ হয়। নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস নিজেরাই জনশক্তি রপ্তানির একটি এজেন্সির জন্য আবেদন করেছিল। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

 

গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী নজরুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তাদের বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে পাঠানো আমাদের লক্ষ্য। দক্ষ লোকবল দেশের বাইরে পাঠালে রেমিট্যান্স বেশি আসবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক শক্তিশালী হবে। গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের মালিকানায় রয়েছে গ্রামীণ শিক্ষা ও ইউনূস সেন্টার।’

কাজী নজরুল হক আরও বলেন, ‘এ বছর লাইসেন্স পেলেও ২০০৮ থেকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে গ্রামীণ শিক্ষা। গত বছরও ১ হাজার ২০০ জনকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি, এ বছর ১ হাজার ৩০০ জনের প্রশিক্ষণ চলছে। তিনি জানান, গ্রামীণ শিক্ষা ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা প্রতিষ্ঠান। তিনি গ্রামীণ শিক্ষার চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তিনি গ্রামীণ শিক্ষার চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।’ গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস থেকে কোনো কর্মী বিদেশে পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে কাজী নজরুল হক বলেন, ‘না আমরা এখনো কোনো কর্মী পাঠাইনি। এখন যেহেতু লাইসেন্স পেয়েছি শিগগির লোক পাঠানো শুরু করব।’

গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-এর মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে বায়রার সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস লিমিটেড। আমার জানামতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস প্রবাসী কল্যাণ ও জনশক্তি রপ্তানি মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পর তারা লাইসেন্সের কপিসহ আমাদের কাছে আবেদন করেছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে তাদের সদস্যপদ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধি অনুযায়ী বায়রার সদস্য ছাড়া কেউ বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করতে পারবে না। তাই জনশক্তি রপ্তানির আগে বায়রার সদস্যপদে নেওয়া বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স পাওয়া

দু-একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের সদস্যপদ নেয়নি। তারাও এখন সদস্য হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীনে গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি নামে দেশে নতুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই প্রথম অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।