Image description

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি ও তার সহযোগীরা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি পল্লিতে কীভাবে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন, কী পরিচয়ে, কীভাবে থাকতেন- তা নিয়ে কথা বলেছেন বাড়ির কেয়ারটেকার ও আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।

তারা জানান, তিনি পরিচয় দিতেন মসজিদের ইমাম ও মাছ ব্যবসায়ীর। আরসা প্রধান আতউল্লাহ মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হতেন পাঞ্জাবি, টুপি ও পাগড়ি পরে আলেম সেজে। একটানা ১০-১২ দিনের বেশি থাকতেন না।

জানা গেছে, ভূমি পল্লির ৬নং সড়কের ৭৪নং বাড়িটি ভূমি পল্লি টাওয়ার হিসেবে পরিচিত। দশ তলা এ ভবনটির মালিক ১৮ জন। ফ্ল্যাট সংখ্যাও ১৮টি। আতাউল্লাহ ও তার সহযোগীরা ভবনটির ৮ তলার যে ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন সেটির মালিক ইতালি প্রবাসী আব্দুল হালিম সরকার। তার অবর্তমানে দেখভাল করেন পল্লির বাসিন্দা বন্ধু খোরশেদ। মাসে ২০ হাজার টাকা করে ৫ মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে আরসা সদস্যরা ফ্ল্যাটে ওঠেন। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ গত নভেম্বর মাসে হুমায়ূন কবিরের মাধ্যমে ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে ১ মাস থাকার পর চলে যান ৮ তলায়।

 

হুমায়ুন কবির বলেন, ভাড়ার নোটিশ দেখে গত অক্টোবর মাসে এমরান নামে একজন ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে আসেন। তার আত্মীয় অসুস্থ তাকে নারায়ণগঞ্জ পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে এ কথা বলে আমার কাছ থেকে ভাড়া নেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরসা প্রধান হিসেবে যিনি পরিচিত হয়েছেন তাকে নিয়ে নভেম্বর মাসে তিনি ফ্ল্যাটে ওঠেন। আসরা প্রধান হাঁটতেন লাঠির ওপর ভর করে। ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হতেন। প্রথমে বাসায় এক শিশুসহ তিনজন থাকতেন। কয়েকদিন পর থেকে মাঝে মাঝে কিছু লোকজন আসতেন। কয়েকদিন থেকে তারা আবার চলে যেতেন। মাসের শেষের দিকে এমরান বলেন, তাদের লোক বেশি এ ছোট ফ্ল্যাটে হবে না, তাই বাসা ছেড়ে দেবেন। পরে ১ মাস ১০ দিন থাকার পর ২ মাসের ভাড়া দিয়ে চলে যান ৮ তলায়।

 
 

আট তলা ফ্ল্যাটের দেখভালের দায়িত্বে থাকা খোরশেদ ও ভবনের কেয়ারটেকার ইমরান জানান, যিনি আরসা প্রধান আতাউল্লাহ তিনি নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের কাতারের একটি মসজিদের ইমাম বলে পরিচয় দেন। তিনি ও তার সঙ্গে যারা ছিল তারা চট্টগ্রামে কয়েকটি ট্রলার দিয়ে মাছের ব্যবসা করেন বলে পরিচয় দিতেন। মাসে ভাড়া দিতেন ২০ টাকা। ভাড়া দেওয়ার সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে দিব, দিচ্ছি বলে দিন কাটিয়ে দেন। আতাউল্লা বাসায় ১০-১২ দিন থেকে চলে যেতেন। আবার ১০-১২ দিন পর আসতেন।

 

পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, তারা প্রায় তিন মাস আমাদের পাশে থাকলেও কোনো দিন তাদের সঙ্গে কথা হয়নি। সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে রাখতেন। বাসায় নারী ও দুজন শিশু ছিল। অথচ কোনো দিন দেখা হয়নি। বাসায় নারী ও শিশু আছে তা বোঝাই যেত না। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ মাঝে মাঝে বাসা থেকে বের হতেন পাঞ্জাবি, টুপি ও মাথায় পাগড়ি পড়ে আলেম সেজে। যখন বের হতেন, তখন দরজা সামান্য খুলতেন। তাকে দেখে বোঝাই যায়নি যে তিনি এত ভয়ংকর একজন লোক। এখন এ বাসার দরজার দিকে থাকালে ভয়ে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে এই ভেবে, আমাদের পাশে এত ভয়ংকর লোকজন ছিল।

ভবনের একটি ফ্ল্যাট মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, তারা খুব চুপ চাপ বাসায় আসা যাওয়া করতেন। তারা কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আতঙ্কবোধ করছি। আমাদের পাশে এত বড় ভয়ংকর লোক বসবাস করেছিল।

উল্লেখ্য, সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি পল্লি আবাসন প্রকল্পের ১০ তলা ভূমি পল্লি টাওয়ারের ৮ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গত সোমবার দিবাগত গভীর রাতে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। গ্রেপ্তার অন্যরা হলো- তার সহযোগী মোস্তাক আহাম্মদ, সলিমুল্লাহ, আসমাউল হোসনা ও মো. হাসান। পরে তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সকালে র‌্যাবের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. শাহনেওয়াজ খান বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শাহাদাত হোসেন ও উপরিদর্শক ওমর ফারুক তাদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠান। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদিরের আদলাত ২ মামলায় ৫ দিন করে ৬ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।