Image description

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার দুই মামলার একটিরও তদন্ত শেষ হয়নি। সাত মাস পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি, এমনকি সাত পুলিশ কর্মকর্তাসহ মূল আসামিদের কেউই গ্রেপ্তার হয়নি।

দুই মামলার অবস্থান: ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পুলিশের কনস্টেবল সুজন চন্দ্র ও এএসআই আমীর আলীকে। এ ছাড়া সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামসহ মোট ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকেও আরেকটি মামলা করা হয়। তবে আইনগত জটিলতা না থাকলেও কোনো মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। বাদীপক্ষের আইনজীবী রোকনুজ্জামান জানান, ‘পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনও করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ চাইলে তাদের দায়ের করা মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারত এবং নিহতের পরিবারের করা মামলায় চার্জশিট দেওয়া যেত। কিন্তু সাত মাসেও তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।’

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ও মামলার অগ্রগতি: ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তবে শুরুতে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পুলিশের গুলির পরই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এ ঘটনায় তৎকালীন সরকারের প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠে, তারা সবাই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তদন্তে গতি নেই, আসামিরা অধরা: ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেনকে।

তবে সাত মাস পার হলেও এজাহারভুক্ত ১৭ আসামির মধ্যে শুধু চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—কনস্টেবল সুজন চন্দ্র, এএসআই আমীর আলী, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ নেতা আকাশ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত শুরু: ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার ময়নুল করিমের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি তদন্ত দল রংপুরে আসে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, ‘আমি মামলাটি ঘটনার ৩৩ দিন পর পেয়েছি। এর আগেই অনেকে পালিয়ে গেছেন। আমরা বেশ কয়েকজনের পাসপোর্ট জব্দ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও (আইসিটি) তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’

একই ঘটনার দুটি মামলা থাকা নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচলিত আইনে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতের আলাদা স্ট্যাটাস থাকে। যেহেতু আইসিটি এতে যুক্ত হয়েছে, তাই কোনো আইনগত সমস্যা নেই।’

৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে আইসিটি: ২০২৫ সালের ২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চার আসামিকে আগামী ৯ এপ্রিল আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। তারা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।’

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। মূল আসামিরা এখনো ধরা পড়েনি। ৯ এপ্রিলের শুনানির পর এ মামলায় নতুন মোড় আসতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।