
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশকে শক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পুলিশের শীর্ষ ১২৭ কর্মকর্তার মাধ্যমে পুরো বাহিনীকে দলনিরপেক্ষ থাকার স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন সরকার প্রধান। বিশেষ বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, ‘কোনো ছাত্রসংগঠন এবং কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি যেন পুলিশ অনুরাগী না হয়। এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সেখানে কোনো দলের পক্ষে কাজ নয়। মোকাবিলা করতে হবে যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি।’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ওইসব দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বক্তব্য দেন।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
বক্তব্যে ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ পুলিশের নানা সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি পুলিশের সংস্কার চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের গাড়ির অনেক সংকট। যে কারণে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের থাকার ব্যাপক সংকট রয়েছে। আমরা যে কাজ করি, এতে আমাদের কর্মঘণ্টা অনেক বেশি। আট ঘণ্টার বেশি কাজ করা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্যাট্রোলিং করার জন্য যে গাড়ির দরকার সেসব গাড়ি নেই। এজন্য আমাদের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি হায়ার করতে হয়। এ কারণে যাদের কাছ থেকে গাড়ি হায়ার করা হয় তাদের কাছে পুলিশ দুর্বল হয়ে পড়ে। যারা গাড়ি দেয় তারা আবার পুলিশের কাছে এই সুযোগে অনৈতিক আবদার করে। আর মামলা তদন্তে যে পরিমাণ ব্যয় হয় সেই তুলনায় বরাদ্দ নেই। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকা দরকার। আসবাবপত্রের ব্যাপক সংকট রয়েছে, এর সমাধান দরকার।
বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য গভীরভাবে শুনেছেন এবং তিনি শুধু পুলিশের না, সব সংস্কারই করতে চান। তিনি পুলিশের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন যে, কতটুকু সংস্কার করতে পারবেন তা বলতে পারবেন না। তবে সংস্কার এবং পুলিশের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন- এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তিনি দলনিরপেক্ষভাবে পুলিশকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ কোনো ছাত্রসংগঠন এবং কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি যেন অনুরাগী না হন সে বিষয়ে বলেছেন। নির্বাচনে যেন পুলিশ কারও প্রতি অনুরাগী না হয়, সে বিষয়ে বলেছেন। নারী ও শিশুদের প্রতি পুলিশকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে বলেছেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। শক্তিশালী লোক যেন দুর্বল লোকদের হেনস্তা করতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশকে সজাগ থাকতে বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা এও বলেছেন, আমরা এখন এক ধরনের যুদ্ধাবস্থায় আছি, পরাজিত শক্তি আমাদের নানাভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে আইনের শাসন থাকলে শান্তি থাকবে, শান্তি থাকলে সবাই ভালো থাকবে। তাই আইনের শাসন নিশ্চিতে কঠোর ভূমিকা যেন পুলিশ পালন করে সেই আহ্বান জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে নিজ নিজ এলাকায় পরিকল্পনাভিত্তিক কাজ করতে বলেছেন। আমাদের সম্ভাবনাময় জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা। পুলিশ যেন নিজের এলাকায় ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করে। এই প্রতিযোগিতায় যদি কেউ পিছিয়ে পড়ে তাহলে তার সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া যাবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পুলিশের একটি স্বাধীন কমিশনের মতো একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ আলাদা কাঠামো হবে। ভারসাম্যমূলক কাঠামোতে সবার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা যাবে। এতে সব পক্ষের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকবে। অন্যায় বা অবিচার করার সুযোগ কমে যাবে।