Image description
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত দিতে বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সময় চেয়েছে। সাতটি দল কমিশনে মতামত জমা দিয়েছে। সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে বা যোগাযোগ করেছে ১৬টি দল। বাকি দলগুলো গতকাল পর্যন্ত কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই তথ্য জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো মতামত দেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় চেয়েছে। এসব দল কমিশনের পাঠানো নির্ধারিত ফরমে টিক চিহ্নে জবাব দিতে চাইছেন না। তারা বিস্তারিত মতামত দেয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তারা মতামত জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন। 

এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চও কয়েকদিন সময় চেয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে। মঞ্চও টিক চিহ্ন দেয়ার বিরোধিতা করেছে। বলছে, শুধুমাত্র টিক চিহ্ন চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবমাননা করা হয়েছে।  

গত ১০ই মার্চ মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সুপারিশের বিষয়ে ১৩ই মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল ও জোটকে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। এরমধ্যে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ফোনে কথা বলে কয়েকদিন সময় চেয়েছে। জামায়াতও সময় চেয়েছে। ওদিকে গণতন্ত্র মঞ্চ কয়েকদিন সময় চেয়ে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। এই মতামত পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু করবে কমিশন।

গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাতটি রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মতামত দিয়েছে। ১৬টি রাজনৈতিক দল পূর্ণাঙ্গ মতামত দিতে আরও কয়েকদিন সময় চেয়েছে। বাকি ১৪টি দলের সঙ্গে কমিশন আবার যোগাযোগ করছে। গতকাল বিকাল ৪টার মধ্যে মতামত দেয়া সাতটি দল হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও ‘আমজনতার দল’।

এ দলগুলোকে নিয়ে আগামী মঙ্গল ও বুধবার নাগাদ আলোচনা শুরু করা হতে পারে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ভবনে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ছয়টি কমিশন করেছে, তার আলোকে ছায়া কমিটি করেছে বিএনপিও। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ চেয়েছে, সেসব নিয়ে এই ছয় কমিশন কাজ করছে। পূর্ণাঙ্গ মতামত তৈরি হতে আরও কিছু সময় লাগবে। রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর দলটি যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটের সঙ্গে কথা বলবে। এরপরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে। আর টিক চিহ্ন বিষয়ে দলটি অনীহা প্রকাশ করেছে। এটাকে দলটি সংক্ষিপ্ত মনে করছে। কারণ দলটি সংবিধানের সংস্কারের জন্য যে প্রস্তাব তৈরি করেছে তার ইতিমধ্যে ১ হাজার পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে গেছে। তারা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করছি। রিপোর্ট তৈরি হওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রিপোর্ট চূড়ান্ত হওয়ার পরে আমরা জমা দেবো।    
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে মতামত দেয়ার জন্য আমরা সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। আমরা পূর্ণাঙ্গ মতামত দেবো। তবে যেসব বিষয়ে একমত, সেখানে টিক চিহ্ন দেবো। 

ওদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো চিঠির সঙ্গে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর সারসংক্ষেপ স্প্রেডশিটে ছক আকারে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে, সেগুলো হলো-একমত, একমত নই এবং আংশিকভাবে একমত। এরমধ্যে যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়তটি হলো, প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এজন্য ছয়টি ঘর রয়েছে, সেগুলো হলো: সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়ন- নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’ ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। এসব ঘরের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর মন্তব্য দেয়ার একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখনো মতামত দেইনি। বৃহস্পতিবার সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আর টিক চিহ্ন চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবমাননা করা হয়েছে। আমরা বিস্তারিত মতামত দেবো। আর যেখানে আমাদের মতামতের সঙ্গে মিল রয়েছে, সেখানে টিক চিহ্ন দেবো।  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা কমিশনের কাছে সময় চেয়েছি। এখন রমজান মাস বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ইফতার মাহফিল থাকে। অনেকে ওমরাহ’য় গিয়েছেন, কেউ কেউ গ্রামে রয়েছেন। যার কারণে আমরা সবাই একসঙ্গে বসতে পারছি না। এজন্য সময় চেয়েছি কমিশনের কাছে। ঈদের পর দিতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হতো।