Image description
 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারে মতো কক্সবাজার আসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে থাকবেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার (১৪ মার্চ) এশিয়ার বৃহৎ আশ্রয় শিবির হিসেবে খ্যাত উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন তারা। সেখানে একাধিক বৈঠক শেষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন দুজন।এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের একসঙ্গে ক্যাম্পে আসার খবরে রোহিঙ্গাদের মাঝে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। দুজনের প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসনের একটি গতি পাবেন বলে আশা করছেন রোহিঙ্গা নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব আগেও কয়েকবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এটিই প্রথম। 

জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ১৩ মার্চ চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। সফরের দ্বিতীয় দিন ১৪ মার্চ সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তিনি। কক্সবাজার বিমানবন্দরে জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। এরপর কক্সবাজার থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে নেওয়া হবে উখিয়ার ক্যাম্পে। অপরদিকে একই দিন বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আরআরআরসি আরও বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে ইফতার করবেন। এরপর তারা ঢাকার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করার কথা রয়েছে।বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় শিবির কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাস করছেন। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো আরাকানে চলমান সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছেন আরও ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় শুক্রবার (১৪ মার্চ) উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাদের এ সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অগ্রগতি আসবে মনে করছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জোবায়ের বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাবার পর জাতিসংঘের মহাসচিব ক্যাম্পে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখন এ মাসের ১৪ তারিখ আবার তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্প আসছেন শুনে ভালো লাগছে। মহাসচিব গুতেরেসকে একটা কথায় বলব, বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয়দাতা। ভিনদেশের এ ক্যাম্প জীবনে দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। এসব ঝুপড়িতে ৮ বছর কাটছে। আমাদের দেশ আছে, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব জাতিসংঘের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে নিরাপদ জোন করে, আমরা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানাবো।

অপরদিকে ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি একাধিক বৈঠকে অংশ নিবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব। এরপর ইফতার করবেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। এসব কারণে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কার্যক্রমগুলো তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করছে। থাকবে কয়েক স্তরের বলয়। কয়েকদিন হয় এসএসএফ কক্সবাজারে এসে সব বিষয় সমন্বয় করছেন। তাদের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে। এসব ভেন্যুতেও নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত উখিয়ার ক্যাম্পে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখেন ও শোনেন।এখন তিনি আবার যখন ক্যাম্পে আসছেন, তখন রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানোর ঘোষণা চলছে। তাই টেকসই প্রত্যাবাসন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবির পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতের দাবি জানাবেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিবরণও তুলে ধরা হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার প্রভাব, তহবিল সংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরা এবং ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাবেন রোহিঙ্গারা।

 

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের মো. সোলাইমান বলেন, ২০১৭ সালে আমরা নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। সবারই দেশে ধন-সম্পদ রয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনে নিরাপত্তা দিলে এখনই স্বদেশে চলে যেতে রাজি। আর আশ্রিত জীবন ভালো লাগছে না।