Image description
 

মাগুরায় ধর্ষণের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এতে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এশার নামাজের পর নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় শহরের নোমানী ময়দানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছে শিশুটির মরদেহ। হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। সন্ধ্যা ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েক হাজার মানুষ। চোখের জলে শিশুটিকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তারা।

মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় আসেন। পরে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা রাষ্ট্র বা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কারণ এত ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ের ধর্ষিত হওয়া মেনে নেওয়া যায় না, এটা কারও জন্য মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি (নাম) আমাদেরই মেয়ে। কাজেই আমরা সেভাবেই দেখছি।’

একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। সন্ধ্যা ৭টার দিকে নোমানী ময়দানে জানাজায় অংশ নেন তারা। এরপর মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানেও জানাজা হয়েছে। জানাজায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। জানাজার আগে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও মামুনুল হক বক্তব্য রাখেন। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জানাজার পরপরই স্থানীয় জনতা দোষীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন তারা। এ সময় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তারাবির নামাজের পর তার গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

 

এর আগে দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ দুপুরে বলেন, আজ সকালে দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তার হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। দুপুর ১টায় মৃত ঘোষণা করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। সেদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।