Image description

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা সরকারের প্রতিনিধি হয়ে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের মানুষের নিরাপত্তা, জনসেবা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করেন। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা ক্রমাগত হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে আব্দুর রাজ্জাক ফাহিম নামের এক যুবকের অতর্কিত হামলায় রাজধানীর পল্লবী থানায় ওসি নজরুল ইসলামসহ পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি সাভার, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, মৌলভীবাজারসহ অন্য স্থানে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

 

কোথাও কোথাও হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণে এসব ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসেই পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও থানায় ঢুকে পুলিশ সদস্যদের শাসানো এবং প্রকাশ্যে পুলিশকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত মাসে পুলিশের ওপর ২৬৭টি হামলার ঘটনায় সমপরিমাণ মামলা হয়েছে। গত বছর আগস্টে ২৪টি, সেপ্টেম্বরে ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪টি, নভেম্বরে ৪৯টি, ডিসেম্বরে ৪৩টি, জানুয়ারিতে ৩৮টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরেও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বিরূপ আচরণের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে বেশ কয়েকটির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

হামলার এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের ওপর হামলা মানে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ প্রদর্শন। এতে করে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। কারণ এটি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, বরং আইন ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে হামলা। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে, তারা হয়তো স্বল্প মেয়াদে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারছে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এর খেসারত দিতে হবে দেশের নাগরিকদের।

গত বৃস্পতিবার রংপুরে একটি কর্মশালায় আইজিপি বাহারুল আলম বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে মানুষের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।

 

নাগরিক সমাজের প্রতি অনুরোধ, পুলিশকে আপনারা আবার কাছে টেনে নিন। পুলিশকে কাজ করতে সহায়তা করুন।’ পুলিশকে আবার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আমরা চেষ্টা করছি যারা অপরাধী (পুলিশ), তাদের বিচারের আওতায় এনে ও সরিয়ে দিয়ে পুলিশকে আবার সগৌরবে ফিরিয়ে আনা, কর্মক্ষম করে তোলা, পুলিশকে আবার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।’

এদিকে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের ওপর হামলা, হুমকি ও আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বাহিনীটিকে নতুন সংকটে ফেলছে। যখন একটি রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা হামলার শিকার হন, তখন সেটি রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দেয়। এতে দেশের সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা হুমকিতে পড়ে। রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে প্রথমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র।

 

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা চায় পুলিশ সব সময় নিষ্ক্রিয় থাকুক। তাহলে তারা তাদের ইচ্ছামতো অপরাধ ও স্বার্থসিদ্ধি করতে পারবে। রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, ফেরারি আসামি ও মাদককারবারিরাও যখন পুলিশের ওপর হামলা করে, তখন এটি উদ্বেগের বিষয়। আর এসব অপরাধীকে কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। একই সঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও শান্তির কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আইন প্রয়োগে পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। না হলে দেশে অরাজতকা বাড়তে থাকবে।’