
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে ছাত্রপ্রতিনিধি আশিকুর রহমান সিয়ামের মাদক সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন অন্য ছাত্রপ্রতিনিধিরা। গত দুদিন ধরে ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ভিডিওটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন অনেকে।
১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক সমন্বয়ক আশিকুর রহমান সিয়াম কোনও এক জায়গায় বসে ইয়াবা সেবন করছেন। চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে আছে। পাশে বসে তাকে ইয়াবা সেবনে অন্য একজন সহযোগিতা করছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির চেহারা ভিডিওটিতে দেখা না যাওয়ায় শনাক্ত করা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ছাত্রপ্রতিনিধির মাদক সেবনের এ ধরনের ভিডিও প্রকাশ্যে এলে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জেলার সাবেক সমন্বয়ক আহমেদ কাওসার ইবু বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটিগুলো অনেক আগেই বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্র। কাজেই এখন কেউ সমন্বয়ক নেই, সবাই সাবেক। আশিকুর রহমান সাবেক সমন্বয়ক। তার মাদক সেবনের ভিডিওটি দেখেছি। তবে কেউ অপরাধ করলে তার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয়, ব্যক্তিকেই দায় বহন করতে হবে।
মাদক সেবনের ভিডিওটির লোকটি আপনি কিনা জানতে চাইলে আশিকুর রহমান সিয়াম বলেন, আপনাকে কেন এ বিষয়ে উত্তর দেবো? পরে আবার জানতে চাইলে বলেন, ভিডিওটি এডিট করা। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। প্রতিপক্ষরা এই ভিডিও এডিট করে নোংরা খেলা করছে।
কেউ কেউ বলছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে আপনি এলাকায় ছিলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি গলাচিপা উপজেলায় থাকাকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। ঢাকায় বিএএফ শাহীন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার পর রাজনীতি করতে পারিনি। ওই কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে মোহাম্মদপুরে আন্দোলন করেছি, আন্দোলনের সময়কার আমার ছবিগুলো ফেসবুকে দেওয়া আছে।
গলাচিপা থানার দুজন পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, মাদক সেবনের ভিডিওতে দেখা যাওয়া ছেলেটি আশিকুর রহমান সিয়াম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিল। এখন ছাত্রপ্রতিনিধি। তার মতো আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে। আমরা সতর্ক করলে আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয় তারা।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও সাবেক সমন্বয়ক ইশরাত জাহান অহনা বলেন, সিয়াম ঢাকাতে আন্দোলন করেছেন। গলাচিপায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠানে ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিতেন। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতাম।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুর রহমান বলেন, ভিডিওটি দেখেছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রপ্রতিনিধিদের কীভাবে বাছাই এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় জানতে চাইলে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে কে কোথায় অংশ নিয়েছে, তাতো আমরা জানি না। গলাচিপার দায়িত্বশীলরা ছাত্রপ্রতিনিধি বাছাই করেন। আমরা তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতাম। সিয়ামকে ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবেই চিনি আমরা।
আজকালের খবর