
৯টি র্যাম্পের (যানবাহন ওঠানামার স্থান) একটিও এখনো চালু হয়নি। এসব র্যাম্প ছাড়াই চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়ালসড়কে (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) যানবাহন চলাচল করছে। এই মূল উড়ালসড়কে দুই মাস আগে টোল আদায়ের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও তা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। কোনো র্যাম্প চালু না হওয়ায় বাস-মিনিবাস উঠছে না। যেসব গাড়ি চলছে তার বেশির ভাগই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার।
মূল উড়ালসড়কে বিভিন্ন স্থান থেকে যানবাহন ওঠানামার জন্য প্রথমে ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের কথা ছিল প্রকল্পটিতে। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে ছয়টি র্যাম্প কমিয়ে ৯টি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এখনো একটি র্যাম্পও চালু হয়নি।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে র্যাম্পসহ উড়ালসড়ক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা।
র্যাম্প চালু না হওয়ায় উড়ালসড়কটিতে যানবাহন কম উঠছে। এতে উড়ালসড়কের নিচে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার সময় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ওই সড়ক দিয়ে বন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড, কেপিজেড, বিমানবন্দর, বিপিসি, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কম্পানির একাধিক ডিপোসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। প্রকল্পের সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া না যাওয়ায় অনেকে হতাশ।
জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মো. মাহফুজুর রহমান গত শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, মূল উড়ালসড়ক চালু হয়েছে। ৯টি র্যাম্পের মধ্যে নিমতলা এলাকায় (একটি) র্যাম্পের কাজ শেষ। ঈদের পর এটি চালু করা হবে। একটির কাজ শুরু হয়নি। অন্যগুলোর কাজ চলমান আছে। চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে সব র্যাম্প চালু করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, মূল উড়ালসড়ক নির্মাণসহ প্রকল্পে কাজের মোট অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৭.৫১ শতাংশ। নির্মাণের পর র্যাম্পগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে প্রকল্পের পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে। সড়কে যানজট কমবে।
গত ৩ জানুয়ারি টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয় এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। র্যাম্প চালু না হওয়ায় লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা প্রান্ত এবং পতেঙ্গা থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত শুধু সরাসরি যানবাহন চলাচল করছে। ১৫.২ কিলোমিটারের মূল উড়ালসড়কে গাড়ি চললেও নির্মাণ না হওয়ায় এখনো ৯ র্যাম্পের সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলছে না।
মূল উড়ালসড়কে দৈনিক কতটা যানবাহন চলাচল করে জানতে চাইলে সিডিএ থেকে টোল সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চালুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার থেকে ছয় হাজার ৫০০ যানবাহন চলাচল করছে। এর বেশির ভাগই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহন। টোল আদায় হচ্ছে দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটি গ্রহণের সময় সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। অবশ্য শনিবার প্রকল্প পরিচালক জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার থেকে আট হাজার যানবাহন চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, র্যাম্প চালু হলে চট্টগ্রাম নগরের যেকোনো এলাকা থেকে এই উড়ালসড়কে উঠলে মাত্র ২০ মিনিটে সরাসরি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাবে। এ ছাড়া যানজট নিরসনসহ যান চলাচলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থা সিডিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে যেসব যানবাহন কর্ণফুলী টানেল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে, সেগুলো দ্রুততম সময়ে শহরে প্রবেশ করতে পারে।