Image description

শেখ হাসিনার সরকার পতনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও ব্যবসাবাণিজ্যে স্বস্তি ফেরেনি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনো নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সরকারের সেবাদানকারী সংস্থাগুলোতেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। এমন পরিস্থিতির কারণে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিকভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন অনেক ব্যবসায়ী। ব্যাংকিং খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এখনো উপেক্ষিত। ফলে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি।

অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত স্থবির হওয়ায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও স্বাভাবিক গতি ফেরেনি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। যদিও বলা হচ্ছে, জুলাই-আগস্টে উৎপাদন খাতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কাটিয়ে পণ্য রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। টানা ৭ মাসে ২ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ঋণখেলাপি, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের অসহযোগিতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে। লাখো শ্রমিক বেকার হয়েছেন। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ডলারের দর ১২২ টাকার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বেসরকারি বিনিয়োগ আটকে আছে ২৩ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি আমাদের মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের কথা বলি সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা রয়ে গেছে। কাজেই সবকিছু মিলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে একটা স্থবিরতা বিদ্যমান। কোথাও চলমান হওয়ার সম্ভাবনাটা চোখে পড়ছে না। তিনি আরও বলেন, ৬ মাসের বেশি হয়ে গেলেও সমস্যাগুলো এখনো জিইয়ে আছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো এখনো ওই ভাবেই চলছে। ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের একটা বড় বিষয় ছিল। সেই বাজার ব্যবস্থাপনার কী উন্নয়ন হয়েছে, আগের মতোই রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৮ মাসেও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রত্যাশিত পরিবেশ ফিরেনি। তবে আমরা এখনো আশবাদী সরকার দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে বিনিয়োগের চিন্তাই করছি না। ব্যবসা পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ নানা জায়গায় নীতি সহায়তা দরকার।