
রাত যত গভীর হয়, বখাটেদের আড্ডাও তত বাড়তে থাকে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, গাড়িতে উচ্চ শব্দ ব্যবহার, বাইক ও কার রেসিং এবং আরো নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দেখা মেলে।
গত বুধবার রাতে সরেজমিনে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। ছিল না পর্যাপ্ত তল্লাশি বা নজরদারি। এই সুযোগ নিয়ে গভীর রাতে বখাটেসহ উপদ্রবকারীদের নানাভাবে লোকজনকে নাজেহাল করতে দেখা যায়।
রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৩০০ ফিট সড়কে অবস্থান করে দেখা যায়, নীলা মার্কেটে তখনো মানুষের ভিড়। বিভিন্ন দোকানে ঘুরে কেনাকাটা করছে ক্রেতারা।
কেউবা বসে খাবার খাচ্ছে। আড্ডায় মেতেছে সঙ্গী ও পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা ব্যক্তিরা। এর মধ্যেই এক শ্রেণির বখাটের আড্ডা জমাতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু তা-ই নয়, আসা-যাওয়ার পথে সড়কে যত্রতত্র গাড়ি রাখা হয়েছে।সড়কে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ছবি তুলছে। উচ্ছৃঙ্খল কিছু তরুণ চিৎকার করে, অসংলগ্ন কথা বলে পরিবেশ নষ্ট করছিল।
রাত দেড়টার দিকে কাঞ্চন ব্রিজ এলাকায় সড়কের ইউটার্ন ঘিরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল অন্তত ছয়-সাতজন কিশোর-তরুণ। একই সময় পাশে আরো অন্তত ১১ জন কিশোর ছিল। তারা সড়কে দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয় একজন বলেন, এরা মূলত ছিনতাইকারী দলের সদস্য। শিকারের জন্য ওত পেতে আছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০০ ফিট এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ভিড় বেশি থাকে নীলা মার্কেট ও জলসিঁড়ি এলাকায়। এ এলাকা ঘিরে বখাটেদের উৎপাতও বেশি। এখানে প্রায়ই নানা অঘটন ঘটে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন নজরদারি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম এসে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো।
ভুক্তভোগীরা বলছে, রাত হলেই এলাকায় বখাটেদের উৎপাতে সাধারণ পথচারীরা নাস্তানাবুদ হয়। রাস্তার দুই পাশে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার দাঁড় করিয়ে তারা বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাতে সড়কের পাশে এবং ইউ টার্নের মাঝখানে বসে ভ্রাম্যমাণ খাবারের কিছু দোকান। এতে মূল রাস্তা সরু হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়। উচ্ছৃঙ্খল কিছু তরুণ এ সময় মোটরসাইকেল আর গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে। এতে প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আচমকা সাইরেন বাজিয়ে হাজির হয় পুলিশের টহল গাড়ি। সড়কে অবস্থানকারীদের দ্রুত স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেয় তারা। এ সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেও দেখা যায়। তা দেখে স্থানীয় এক ভ্রাম্যমাণ দোকানদার বলেন, ‘এহন বিশেষ অভিযান চলছে, তাই হেরা (পুলিশ) আইছে। আগে এদের তেমন দেখা মিলত না...!’
টহলরত এন্টি-টেররিজম ইউনিটের সদস্য মো. গজনবী মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপ্রয়োজনে আমরা কোনো ব্যক্তিকে রাত ১২টার পর সড়কে দেখতে চাই না। যারা সড়কে এলোপাতাড়ি গাড়ি চালাবে, বা গাড়িতে উচ্চশব্দ ব্যবহার করবে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কাজ ছাড়া যারা গভীর রাতে সড়কে অবস্থান করে, তারা হয় ছিনতাইকারী, নয়তো বখাটে। এমন বখাটেদের নিয়ন্ত্রণে আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে।’
৩০০ ফিট সড়কের ১ নম্বর গেট থেকে নীলা মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অন্তত তিনটি চেকপোস্ট দেখা গেছে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাঁচ-ছয়টি টহল গাড়িকে অবিরাম দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
পাথর ব্যবসায়ী শাহ পরান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাবসায়িক কাজে প্রায় গভীর রাতে আমার যাতায়াত করতে হয়। এ সময় রাত সাড়ে ৩টার দিকেও বখাটেদের এমন উৎপাত দেখেছি। তবে গত রবিবার থেকে এই উৎপাত অনেকটাই কম। রাত ১০টার পর থেকে পুলিশের কড়াকড়ি দেখা যায়। এতে সড়ক অনেকটাই নীরব হয়ে গেছে।’
এ এলাকার ২ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় ৩০০ ফিট রাস্তায় কিছু ট্রাকের দেখা মেলে। এসব ট্রাকচালককে কেন্দ্র করে তখনো তিনটি ভ্রাম্যমাণ চা দোকানিকে দেখা যায়। আশপাশে এলোমেলো গাড়িও চোখে পড়ে।
দোকানিদের একজন মো. বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকায় প্রায়ই ছিনতাই হয়। সেই সঙ্গে বখাটেদের উৎপাতে এলাকায় টিকে থাকা মুশকিল। রাতে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেলসহ প্রাইভেট কারও চলে। ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের কাছ থেকেও ছিনতাইকারী ও বখাটেরা টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।