Image description

রাজধানীর রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক স্বর্ণ-ব্যবসায়ীকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাত্র ৩১ সেকেন্ড সময় নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করা হয়। এরপর তার কাছে থাকা নগদ টাকা ও ১৬০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। তাতে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর আত্মচিৎকারে এগিয়ে আসেননি স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। আশপাশের ভবন ও সড়কে থাকা ব্যক্তিরা শুধু ভিডিও ও ছবি তুলেছেন। গেটও ছিল খোলা। গোলা গেট পেরিয়ে রামপুরা-বনশ্রীর মূল সড়ক দিয়ে ডেমরা রোড হয়ে নির্বিঘ্নে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় পেশাদার ছিনতাইকারীরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে সাতজনকে দেখা গেছে। মামলায় আসামি আটজন। ছিনতাইয়ে জড়িতরা পেশাদার ছিনতাইকারী। তারা আগেই রেকি করেছিল বলে ধারণা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসার দারোয়ানকে হেফাজতে নেয় রামপুরা থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছে। একাধিক টিম কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই সুখবর জানতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি ব্লকে ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে স্বর্ণ-ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর একটি দল। পরদিনও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, তিনটি মোটরসাইকেলে করে মোট সাতজন ছিনতাইকারী ওই ব্যবসায়ীকে ঘিরে ধরে। ব্যবসায়ীকে একটি বাড়ির গেটের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে একজন ছিনতাইকারী তার কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। অন্যদিকে আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে দাঁড়ানো ছুরি দিয়ে আঘাত করে যাচ্ছিল। ওই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাগো মাগো করে চিৎকার করছিলেন। ছিনতাইকারীদের যখন ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিয়েছিলেন ওই ভুক্তভোগী তখন পাশে দাঁড়ানো আরেকজন ছিনতাইকারী তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ওই সময় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আরও জোরে জোরে চিৎকার দিতে দিতে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে কিছুটা দৌড়ে পিছনের দিকে পালিয়ে যান।

dhakapost

আরও দেখা যায়, সম্পূর্ণ এই দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি পাশে থাকা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিডিও করছিলেন। ছিনতাইকারীরা যখন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিলেন এবং গুলি ছুড়ছিলেন তখন ভিডিও করা লোকজনও জোরে জোরে চিৎকার করছিলেন। ‌এরই মধ্যে পাশ থেকে আরেকজন মহিলার চিৎকার শোনা যায় তিনিও মাগো মাগো করে করে চিৎকার করছিলেন। পরে ছিনতাইকারীরা ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তিনটি মোটরসাইকেলে করে চলে যান।

ওই ঘটনায় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আটজনকে আসামি করা হয়েছে। ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার তথ্য মামলায় তুলে ধরা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেনের দুই পায়ে দুটি ও পিঠে একটি গুলি লেগেছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের আশেপাশের দুই শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। ঘটনাস্থলে আমরা সাতজনকে দেখেছি। তিনটা বাইকে এসেছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ঘটনার সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্বল্প আলো দেখা গেছে। সংগত কারণে মোটরসাইকেলের নাম্বারপ্লেট স্পষ্ট দেখা গেছে। আর সবার মুখে ছিল মাস্ক ও হেলমেটে ঢাকা। একজনের মুখ শুধু দেখা গেছে। জড়িত অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গলির সামনে ও পেছনে বিশাল গেট। ঘটনার আকস্মিকতায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী চিৎকারও করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শিও ছিল। কেউ এগিয়ে আসেননি। গেট দুটো বন্ধ করে দিলেই আর কেউ বের হতে পারতেন না। সেটা কেউ করেনি। খোলা গেট গিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

তিনি বলেন, বনশ্রী এলাকার পাশেই দুটি বড় হাইওয়ে রোড। পালানোর রুট খুঁজতে গিয়ে আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছি, তিন মোটরসাইকেলযোগে খোলা গেট পেরিয়ে রামপুরা-বনশ্রীর মূল সড়কে উঠে ছিনতাইকারীরা। এরপর কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে ইউটার্ন করে ডেমরা রোড হয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে পেশাদার ছিনতাইকারীরা।

বনশ্রীতে গুলি করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে প্রাণনাশের চেষ্টা ও স্বর্ণ লুটের ঘটনায় তিনদিনেও কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে না পারায় বিক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বনশ্রী সড়কে ও থানার সামনে প্রতিবাদস্বরূপ বিক্ষোভ করেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার দেখা যায়।

বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট থাকলেও তাদের ধরতে পারছে না কেউ। সন্ত্রাসীদের চাঁদা দেওয়া বন্ধ করায় এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। টাকা পাঠানোর ম্যাসেজ চেক করলেই তো আসামি ধরা যায়। ঘটনার পর এতো সময় পার হলেও এখনো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

তাদের দাবি, পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত ফলাফল আসবে বলে আশা রাখার অনুরোধ জানান তিনি।