Image description
বিচারকদের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, শহিদ মুগ্ধর লাশ বহনকারী জানিয়েছেন, শহিদ মুগ্ধ মারা যাওয়ার পর কোনো হাসপাতাল তার লাশ নিতে চায়নি। তার পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়নি। তার লাশ অ্যান্ট্রি করতে রাজি হয়নি প্রশাসন। মিডিয়া ঘটনাগুলো তুলে এনেছে। এখন আপনি ন্যায়বিচার করতে গিয়ে যদি বলেন- ওই আসামি হত্যা করেছে, সেটা তো পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সাপোর্ট করছে না। তাহলে আমি কী করব? 
 
তিনি বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আপনি নতুন পুলিশ রিপোর্ট তৈরি করুন। আইনের স্বাভাবিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রগতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন। ৫ আগস্টের আগের তত্ত্বে বিচার করলে হবে না। আপনাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণ।’
 
শনিবার যশোর পিটিআই মিলনায়তনে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।
 
পুলিশের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা গর্বের সঙ্গে বলি ৫ আগস্টের আগের পুলিশ বাহিনী আর পরের পুলিশ বাহিনী এক নয়। ৬০ লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছিল। তার প্রায় শতভাগ গায়েবি মামলার বাদী হয়েছিল পুলিশ। ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলাও করেনি। ৫ আগস্টের আগে সাতশর বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছিল। বিনা বিচারে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করে ৬০ লক্ষাধিক গায়েবি মামলা করা হয়েছিল। এসব ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সব উপাদানে ভরপুর। ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর হাত দিয়ে একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়নি।
 
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার ও পুলিশ বিভাগের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে সুশাসন ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক। পুলিশকে তদন্তের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়।’
 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এ রাষ্ট্র ট্রান্সফরমেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির কাছে নয়, আপনারা আইন ও সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কাদের পক্ষে দাঁড়াবেন। অনেক চক্রান্ত চলছে।প্রতিবিপ্লব শক্ত হাতে দমন না করলে এ রাষ্ট্র ধরে রাখতে পারব না। আমরা যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের ধরতে হবে।
 
কর্মশালায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, সিআইডির অতিরিক্ত আইজি মতিউর রহমান শেখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খান বক্তব্য দেন।
 
যশোর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কর্মশালায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও ১৬ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, জেলা ও দায়রা জজ, সিনিয়র জুডিশিয়াল ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পাবলিক প্রসিকিউটর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ ৩২০ কর্মকর্তা অংশ নেন।