Image description
  হাসনাত আবদুল্লাহ
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল বঞ্চিত, নিপীড়িত ও শোষিত ছাত্র-জনতার এক গৌরবময় বিপ্লব, যা ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতনের অনিবার্য ভূমি নির্মাণ করেছে। সেসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। দুঃশাসনের শৃঙ্খল ভেঙে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শপথ নেয় তারা। দেশের সব ছাত্রসংগঠনই এই আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, যা ছিল আমাদের স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির।
 
আমাদের সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সাহসী বিপ্লবী তরুণ-তরুণীরা, রক্ত ঢেলে তাঁরা ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লিখেছেন স্বাধীনতার নতুন অধ্যায়। পিচ্চি রিয়া গোপ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা, এমন শত শত নিরপরাধ মানুষের শাহাদাত এই আন্দোলনকে নৈতিক এবং আত্মিক ভিত্তি নির্মাণ করে দিয়েছে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে এই আন্দোলনের ন্যায্য ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে রাজনৈতিক সংলাপে অংশগ্রহণের প্রধান দাবিদার।
 
আজ যারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আমাদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করতে চাই— ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের সময় এই ব্যানারে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন কেন? ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হলো, তখন কোন প্রটোকল-এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? তখন তো কোনো আপত্তি বা প্রশ্ন শোনা যায়নি! আজ কেন হঠাৎ করে এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা হলো?
 
যারা আজ 'মনিটরিং'জনিত কৃত্রিম বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, তারা আন্দোলনের মৌলিক ভিত্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাই— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিলো এই গনঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মের নেতৃত্ব মেনেই বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। সেই হিসেবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই প্লাটফর্ম কোন মাদারপার্টির মনিটরিংয়ে তাদের কোন পার্পাস সার্ভ করে না।
আবারও বলি, এখন যারা 'দায় চাপিয়ে দেয়া' ও দোষারোপের রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছেন, তারা যেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পরিণতি ভুলে না যান। ইতিহাস আমাদের শত্রুদের ক্ষমা করেনি, ভবিষ্যতেও কাউকেই করবে না। রাষ্ট্রীয় সংলাপ ও নতুন রাজনৈতিক পথরেখায় আমাদের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই। কোন অজুহাতেই দেশ সংস্কারের প্রক্রিয়া থেকে আমাদের বিরত রাখার সুযোগ নেই। ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একমাত্র সর্বজনসমর্থিত প্লাটফর্ম, এবং আমরা এই বৈধতার দাবিতে অটল থাকব, প্রয়োজনে যে কোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আমাদের হাজারো ভাইয়ের রক্তের দায় আমাদের উপর আছে, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়েই সেই রক্তের দায় আমরা শোধ করবো। কোন মিথ্যাচার বা দোষারোপের রাজনীতি করে খুনি হাসিনা যেমন আমাদের থামাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কেউ থামাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
ফ্যাসিবাদের পতন অনিবার্য! গণজাগরণ অপ্রতিরোধ্য! বিজয় আমাদেরই হবে!