![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/ae489fe23553669d4bf6b64f063388ad.jpg)
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়াকে সিটি করপোরেশন করার প্রস্তাব দিয়েছেন ওই জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হোসনা আফরোজা। আর গ্রাম পুলিশের চাকরি ২০তম গ্রেডে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতীয়করণের প্রস্তাব দিয়েছেন মানিকগঞ্জের ডিসি ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা ও সিরাজগঞ্জের ডিসি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মাঠ প্রশাসনের এ ধরনের অন্তত সাড়ে ৩০০ প্রস্তাব নিয়ে আগামী রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন। সম্মেলন শেষ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বগুড়ার ডিসি বলেছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পৌর এলাকার জনসংখ্যা অন্তত চার লাখ হতে হবে। বগুড়া পৌরসভার বাসিন্দা রয়েছে সাড়ে চার লাখ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে তিন হাজারজন প্রয়োজন হলেও বগুড়া শহরে আছে পাঁচ হাজার ৮৪৩ জন।
ডিসির এমন প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতিবাচক মতামত দিয়ে বলেছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসংক্রান্ত সুস্পষ্ট মতামত পাওয়া গেলে স্থানীয় সরকার বিভাগ বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন হিসেবে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বগুড়া বহু আগেই সিটি করর্োরেশন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার জন্মভূমি হওয়ায় সরকারি কোনো কর্মকর্তা এ নিয়ে প্রস্তাব করার সাহস করেননি। রাজনৈতিকভাবে রোষানলে পড়ার ভয়ে বগুড়ার কোনো রাজনীতিবিদও এ নিয়ে কথা বলেননি। এখন বগুড়ার ডিসির পক্ষ হতে এমন প্রস্তাব আসায় মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তা অনুমোদন পেলে এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন।
এদিকে গ্রাম পুলিশের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবে মানিকগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ডিসি বলেন, বর্তমান বাজারে চার সদস্যের একটি পরিবারে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয়। দিন মজুরি হিসেবে ৫০০ টাকা হারে কাজ করলেও মাসিক ১৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। সুতরাং তাদের বেতন ২০তম গ্রেডে দেওয়ার প্রস্তাব করেন তাঁরা। এই প্রস্তাবটিও ইতিবাচক হিসেবে দেখছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরই মধ্যে গ্রাম পুলিশের বেতন-ভাতা বাড়াতে অর্থবিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এবারের ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে এক হাজার ২৪৫টি প্রস্তাব পায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া অন্তত সাড়ে ৩০০ প্রস্তাবের ওপর সম্মেলনে আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ দ্বিমত করায় এবং আগের ডিসি সম্মেলনে উপস্থাপিত হওয়ায় অনেক প্রস্তাব কার্যপত্রে রাখা হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা হবে। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা হবে। রাতে হবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নৈশভোজ। দ্বিতীয় দিন কার্য-অধিবেশনের বাইরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ রাখা হয়নি। এবার ডিসি সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে মোট ৩৪টি কার্য-অধিবেশন হবে। কার্য-অধিবেশনগুলো ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন এবং সমাপনী অধিবেশন সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নবনির্মিত ভবনে হবে।
কাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ডিসি সম্মেলনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সরকারের নীতিনির্ধারক এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।