![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/93b254cc5f105a423ff67453a1b7d7a1.webp)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নেতৃত্বাধীন সরকার, তার দল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কীভাবে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল তার প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করেছে জাতিসংঘ। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (ওএইচসিএইচআর) যে ১১৪ পৃষ্ঠার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার পরতে পরতে আছে এমন বর্ণনা। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত কীভাবে শেখ হাসিনা নৃশংসতার নির্দেশ দিয়েছিলেন তা
উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, আন্দোলনের শেষ দিন ৫ই আগস্ট যখন লাখ লাখ মানুষ ‘মার্চ অন ঢাকা’ কর্মসূচিতে নেমে পড়েন, শুধু সেই একদিনেই হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৪০০ মানুষকে। নিহতের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ওএইচসিএইচআর এই হিসাব করেছে। এতে তথ্য মিলেছে যে, বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে যাদের হত্যা ও আহত করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে শিশুও। গাজীপুরে ১৪ বছর বয়সী একটি বালককে গুলি করা হয়েছে। তার শরীরে বিদ্ধ হয়েছে ৪০টি গুলি। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ১৪ থেকে ১৫ই জুলাই রাতে সশস্ত্র ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত বেশ কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা পুরো ক্যাম্পাসে ভীতির পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই রাত তিনটার দিকে ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন রাজু ভাস্কর্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ১৫ই জুলাই সোমবার থেকে বাংলাদেশের রাজপথে কোনো রাজাকার থাকবে না। প্রতিটি জেলা, শহর, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতাদের তিনি পরিষ্কার নির্দেশনা দেন যে, যারাই নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে, শহীদদের নিয়ে উপহাস করবে- তাদেরকে রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে। ১৫ই জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তখনকার সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, এদেরকে শায়েস্তা করতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলে আরোহণের সময় ব্যবহৃত হেলমেট পরে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে এভাবে ভীতি প্রদর্শন করে। ১৪ই জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ধাতব বার ও কাঠ নিয়ে এ হামলা চালায়। বেশ কিছু নারী শিক্ষার্থীকে মৌখিকভাবে যৌন নির্যাতনের হুমকি দেয়। পরের রাতে আওয়ামী লীগের আরও কিছু নেতাকর্মী মাথায় হেলমেট পরে এবং কুঠার, ছুরি, আগ্নেয়াস্ত্র সহ ক্যাম্পাসে র্যালি করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবনের সামনে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানেও তাদের ওপর হামলা হয়। ওই বাসভবনের গেট বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিবাদী নেতাদের প্রকাশ্য ঘোষণা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাওয়া তথ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জানানো হয়। বলা হয়, ৫ই আগস্ট ঢাকামুখী বড় র্যালির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় ৪ঠা আগস্ট তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন। এতে অংশ নেন সেনাপ্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিজিবি’র প্রধান, ডিজিএফআই’র প্রধান, এসএসআই প্রধান, পুলিশ ও তার বিশেষ শাখার প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ৫ই আগস্ট ‘মার্চ অন ঢাকা’ প্রতিরোধ করতে তারা নতুন করে কারফিউ জারি করা নিয়ে আলোচনা করেন। মিটিং শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে কোনোরকম বিরতি না দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কঠোরভাবে কারফিউ থাকবে। অন্যদিকে প্রতিবাদীদেরকে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করেন। তিনি কঠোর হাতে এসব ‘সন্ত্রাসী’কে দমন করতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানান। ৪ঠা আগস্ট বেশ রাতে দ্বিতীয় আরেকটি মিটিং হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। তাতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার/ভিডিপি’র প্রধানগণ, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল প্রমুখ। মিটিংয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করা হয় যে, ঢাকাকে নিরাপদ রাখা যেতে পারে। ওই মিটিংয়ের একটি সূত্র বলেছেন, এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনায় সবাই একমত হন। তার অধীনে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের সুযোগে বাধা দিতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং বিজিবি মোতায়েন থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করা হবে। সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে। এ জন্য ব্যবহার করা হবে সাঁজোয়া যান এবং সেনা, বিজিবি সদস্য। নিশ্চিত করা হবে বিক্ষোভকারীরা যাতে প্রবেশ করতে না পারেন। ওই মিটিংয়ে থাকা একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এ সময়ে পুলিশের দায়িত্ব ছিল ‘মব নিয়ন্ত্রণ’ করা। এসব সাক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৪ঠা আগস্ট রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে অর্থাৎ ৫ই আগস্ট দিনের সূচনালগ্নে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেসের সাবেক মহাপরিচালক বিজিবি মহাপরিচালককে হোয়াটসঅ্যাপে পর পর দু’টি বার্তা পাঠান। ওএইচসিএইচআর’কে ওই বার্তার হার্ডকপি সরবরাহ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম বার্তাটি ছিল একটি ব্রডকাস্ট মেসেজ। ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রবেশের রুটগুলোতে কীভাবে পৌঁছাতে হবে বিক্ষোভকারী নেতারা সে বিষয়ে এতে তথ্য দেন বলে মনে হয়। দ্বিতীয় বার্তায় একটি ভিডিও ছিল। তাতে কীভাবে লড়াই চালাতে হবে, প্রতিরক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন নির্ধারণ হবে, একটি লং রেঞ্জের তৃতীয় ইউনিট থাকবে, একটি ব্যাকআপ ইউনিট থাকবে। ৫ই আগস্ট সকালে সেনাবাহিনী এবং বিজিবি সদস্যরা ব্যাপক অর্থে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরিকল্পনায় তাদেরকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা তা বাস্তবায়ন করেননি। সিনিয়র একজন কর্মকর্তা সাক্ষ্যে বলেছেন, যাদেরকে মোতায়েন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সেনাবাহিনী তাদেরকে মোতায়েন করেনি। অন্য একজন বলেন, বিজিবি সদস্যরা প্রতি ঘণ্টায় এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে প্রবেশ করতে দিয়েছিলেন। এসব পয়েন্ট তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল। তৃতীয় একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি কীভাবে জানতে পারেন যে কিছু ভুল হয়ে গেছে, যখন তিনি সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পারেন উত্তরা থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ বিক্ষোভকারী ঢাকার কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসছে। তাদেরকে সেনাবাহিনী বাধা দিচ্ছে না। চতুর্থ একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে তখনকার প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ফোন করেন এবং তাকে জানান, পরিকল্পনামতো হচ্ছে না কিছুই। তা সত্ত্বেও তখনো পর্যন্ত ‘মার্চ অন ঢাকা’ থামাতে পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে বিভিন্ন স্থানে। একজন পুলিশ কমান্ডার বলেন, ওইদিন দিনের শুরুতেই সেনাবাহিনী জেনে গিয়েছিল শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু পুলিশ জানতো না। তাই সরকারকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য তখনো তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
পুলিশ যে বিভিন্ন স্থানে গুলি করছিল তার বেশ কিছু ঘটনা প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরেছে ওএইচসিএইচআর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা এবং পুলিশের অন্য সদস্যরা রাইফেল থেকে প্রাণঘাতী গুলি ছুড়েছে। বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর শাহবাগে জড়ো হওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদেরকে থামাতে তারা কম-প্রাণঘাতী অস্ত্রও ব্যবহার করেছেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, যাকে দেখেছে তাকেই গুলি করছিল পুলিশ। বাড্ডায় রামপুরা ব্রিজ অতিক্রমের চেষ্টা করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের দিকে পুলিশ গুলি করেছে। কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। সকালে এসব ঘটনায় আহত অনেক ভিকটিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজমপুরে ১২ বছর বয়সী একটি বালককে পুলিশ গুলি করে। সে বলেছে, বৃষ্টির মতো সবদিক থেকে গুলি করছিল পুলিশ। একই সঙ্গে ওই লোকেশনে কমপক্ষে এক ডজন মৃতদেহ দেখেছে বলে জানায়। সাভারের আশুলিয়াতে বিক্ষোভকারীদের থামাতে এবং আটক করার জন্য শুরুতে বেশ কিছু চেকপয়েন্ট বসায়। কিন্তু বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার পর তারা কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। তাতেও তাদেরকে দমাতে না পেরে তারা শটগান থেকে প্রাণঘাতী গুলি করে। আহত অন্য বিক্ষোভকারীকে সহায়তা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এক প্রত্যক্ষদর্শী। বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করে পুলিশ। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহত হন। ওই এলাকায় বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন একজন সাংবাদিক। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেন, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা তাদেরকে মোতায়েন করতে বাধ্য করেছেন। কিন্তু সাধারণ পুলিশ সদস্যরা কেউ হতাহত হোক এটা দেখতে চাননি। ওই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী একটি বালকের মৃতদেহ দেখেছেন। তাকে ওইদিন ৫ই আগস্ট হত্যা করা হয়েছে। তিনি ওএইচসিএইচআর’কে বলেছেন, ৫ই আগস্ট ছিল আমাদের জন্য আনন্দের দিন। কিন্তু ওই বালকটির জন্য ছিল সবচেয়ে বেদনার।
৫ই আগস্ট যাত্রাবাড়ী পুলিশ স্টেশনের পুলিশ ও আনসাররা থানা ও এর কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দিতে বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি করার নির্দেশ পায়। বিপুল পরিমাণ বিক্ষোভকারী ওই থানার চারপাশে অবস্থান নিলে তারা রাইফেল ও শটগান দিয়ে প্রাণঘাতী গুলি চালাতে থাকে। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এদিন সেখানে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী নিহত ও আহত হন। এর মধ্যে ছিলেন একজন অটিস্টিক ব্যক্তি। দু’টি গুলি বিদ্ধ করে তাকে। ওই এলাকায় মোতায়েন করা সেনাসদস্যরা বিকাল নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারপর তাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়। এর অল্প পরেই থানার গেটের বাইরে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করে এবং বেশ কিছু নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে খুব কাছ থেকে। ৫ই আগস্ট বিকালে জনতা শেখ হাসিনার বিদায়কে উদ্যাপন করতে থাকেন। তখনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি করছিল পুলিশ। এতে মারা যায় বেশ কিছু শিশু। উত্তরায় ৬ বছর বয়সী একটি শিশুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার পিতামাতা বিজয় র্যালি করতে তাকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। ওই শিশুকে উরুতে গুলি করা হয়েছিল। পরে সে হাসপাতালে মারা যায়। কে তাকে গুলি করেছিল তা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলতে পারেননি। কারণ, তখন পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল। নিরাপত্তা রক্ষাকারী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তখনো সাউন্ড গ্রেনেড মারছিল। মিরপুরে বিজয় র্যালিতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি করে একজনকে। ৫ই আগস্ট বিকালে গাজীপুরে ১৪ বছর বয়সী বালককে ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়। শান্তিপূর্ণ র্যালিতে গুলি করা হয়। তাতে তার ডানহাতে গুলিবিদ্ধ হয়। প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা ছিলেন নিরস্ত্র এবং তারা বড় কোনো হুমকি ছিলেন না। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষাকারীরা কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই গুলি করা শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আনসার গেটে সমবেত জনতার মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা পালাতে থাকেন।
ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ মেলে যে, ওই বালকটিকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। এতে তার ডানহাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তার শরীরে কমপক্ষে ৪০টি গুলি বিঁধে যায়। হাড় ও টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি করেছে। আরেকটি ঘটনা ঘটে গাজীপুরে। সেখানে এক অজ্ঞাত রিকশাচালককে ঘেরাও করে পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে। এরপর তার লাশ টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে নেয়। আর তা ফেরত দেয়নি। ফলে তার পরিবার প্রিয়জনের লাশ দাফন করার সুযোগ পায়নি। তাকে যে পুলিশ কর্মকর্তা গুলি করেছিল, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেপ্টেম্বরে। তার পরিবারের একজন সদস্য ওএইচসিএইচআর’কে বলেছেন- আমি ন্যায়বিচার চাই, পক্ষপাতিত্বহীন তদন্ত চাই ও তার মৃতদেহ ফেরত চাই। ওদিকে আশুলিয়াতে এদিন বিকালে পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আশুলিয়া পুলিশ স্টেশনে টার্গেট করেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ থানা ঘেরাও করেন। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। জবাবে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করে। ব্যবহার করে প্রাণঘাতী গুলিভর্তি মিলিটারি রাইফেল। চলে যাওয়ার পর পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় পুলিশ। এ সময় গুলি চালাতে থাকে। উত্তেজিত জনতাকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছে- এমনটা মনে হতে পারে। এর ফলে বিক্ষোভকারী ও পথচারীরা হতাহত হন। খুব কাছ থেকে ছোড়া গুলি একটি ১৬ বছর বয়সী বালকের মেরুদণ্ডে বিদ্ধ হয়। এতে তিনি প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ পরে গুলিতে নিহতদের মৃতদেহ একটি ভ্যানে তোলে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর মধ্যদিয়ে তারা দেখাতে চায় যে, বিক্ষোভকারীরা এদেরকে হত্যা করেছে। এমন একটি মিথ্যা আবহ তৈরির বাসনা ছিল তাদের।