![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/dfd77c88f109bc7aa04a0f97a7420f9a.webp)
মহাকাশ দেখার জন্য তৈরি নভোথিয়েটারে দেখানো হতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত ফিল্ম। ২০১৫ সালে ২০ কোটি টাকায় তৈরি করা হয়েছিল ৩০ মিনিটের ফিল্মটি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন বন্ধ রয়েছে এই ফিল্ম প্রদর্শনী। নভোথিয়েটারের কর্মকর্তারাই বলছেন, বিজ্ঞানকেন্দ্রিক থিয়েটারে দেখানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর বানানো প্রমাণ্যচিত্র ছিল পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক। ফিল্মটি দেখে দর্শনার্থীরা বিরক্ত হতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে ও প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের সম্পাদনায় জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান এই ফিল্মটি নির্মাণ করে। যার মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে পুরো অর্থই। পুরো ফিল্মটির মধ্যে অধিকাংশ ফুটেজই আর্কাইভ ভিডিও।
মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ের প্রদর্শনী হয়ে থাকে নভোথিয়েটারের প্ল্যানেটেরিয়ামে। যা শিক্ষা-বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষায় উৎসাহিত করতে সহায়তা করে। এক শত টাকা দিয়ে এক ঘণ্টার প্রদর্শনী হয়ে থাকে প্লানেটেরিয়ামের ভেতরে। দিনে এক ঘণ্টার ৪-৫টি করে বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখানো হয়। নভোথিয়েটারের কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক দশক ধরে এসব প্রদর্শনীর প্রতিটিতে শুরুর ৩০ মিনিটই দেখানো হতো বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটি। বাকি সময় দেখানো হতো মহাকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়। বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো বিষয় বঙ্গবন্ধুর প্রামাণ্যচিত্রে না থাকায় তা নভোথিয়েটারে দেখানোর জন্য উপযোগী নয়। থিয়েটারে আসা দর্শনার্থীরাও এতে বিরক্তবোধ করতেন।
নভোথিয়েটারের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালে সরকারি অর্থায়নে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক ৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়। এটি নির্মাণ করে ‘গোটো ইনক জাপান’ নামে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে নভোথিয়েটারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফিল্মটি করার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরা। সে সময় প্রামাণ্যচিত্রটি রচনা, ধারাবর্ণনা, সম্পাদনা ও পরিচালনা করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের একজন কর্মকর্তা বলেন, সৈয়দ শামসুল হক নভোথিয়েটারের তৎকালীন মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বসে প্রামাণ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট রচনা করতেন। পরে সেটি সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতে গিয়ে সংশোধনী নিয়ে আসতেন। ২০১৬ সাল থেকে প্রামাণ্যচিত্রটি নভোথিয়েটারে দেখানো হতো।
বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত ৩০ মিনিটের ওই প্রামাণ্যচিত্রটি সংগ্রহ করেছে মানবজমিন। সেটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংবাদ ও বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্রের অবলম্বনে সেটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিও’র বিভিন্ন অংশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণসহ বিভিন্ন সময়ে দেয়া ভাষণকে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যও ভিডিওতে সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো ভিডিওতে সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের ধারাভাষ্যের ওপর ভিত্তি করে সম্পাদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিডিও’র কিছু অংশে টুঙ্গিপাড়া এলাকা, বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও কমপ্লেক্সে পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষরের প্রতিনিধিত্বকারী মূর্তি, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও ছিল। বাকি সবই নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে। এই ফিল্ম তৈরিতে ২০ কোটি টাকা খরচ হওয়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন নভোথিয়েটারের কর্মকর্তারাও। নভোথিয়েটারের আরেক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, প্ল্যানেটেরিয়ামে একটি ফিল্ম চালানোর জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। প্ল্যানেটেরিয়ামের পুরো স্ক্রিনে ফিল্ম প্রদর্শনের জন্য ৮টি কম্পিউটারের সাহায্যে দু’টি প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ফিল্ম চাইলেই প্ল্যানেটেরিয়ামে দেখানো যায় না। একটি ফিল্মে বিশেষ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্ল্যানেটেরিয়ামে প্রদর্শনের উপযোগী করতে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. নূরুল আলম বলেন, নভোথিয়েটারে বিজ্ঞানের ইতিহাস দেখানো যেতে পারে। রাজনৈতিক ইতিহাস দেখানোর কাজ না নভোথিয়েটারে। গত ৫ই আগস্টের পর এখন বন্ধ রয়েছে। এই ফিল্মটি ৩০ মিনিটের ছিল। দর্শকরা এটি নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করতো। কারণ তারা বিজ্ঞানভিত্তিক ফিল্ম দেখতে নভোথিয়েটারে আসতো। এটার জন্য আমাদের দর্শকও কমে যেতো।