আলী আহমদ মাবরুর (Ali Ahmad Mabrur)
জামায়াত আর জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমি একটু ইনপুট যোগ করার প্রয়োজনবোধ করছি। নরমালি এ ধরনের আলাপে আমি জড়াই না। কিন্তু কাল থেকে অনেকের লেখা স্ট্যাটাস পড়লাম, অনেকের সাথে কথা হলো। অনেকে ফোন দিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বললেন। সেই সব সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের আলোকে কিছু বিষয় শেয়ার করি।
কোনো সন্দেহ নেই যে, এখানে বড়ো ধরনের একটি গ্যাপ ছিল। এই গ্যাপটি মূলত সময় বা টাইমলাইন নিয়ে। যারা জামায়াতের সাথে জাতিসংঘের বৈঠকের কথা বলছেন সেগুলো শুরু হয়েছে আগষ্ট মাসের শেষের দিক থেকে। স্বাভাবিকভাবেই তারা প্রশ্ন তুলেছেন, জাতিসংঘের সাথে জামায়াতের বৈঠক যদি হয়েই থাকে তাহলে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের সাথে আবার গ্যাপ হলো কেন? আর অপরপক্ষ বলছেন, গ্যাপ হয়েছে কেননা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম এসেছিল আগষ্টের শুরুতে।
যারা এমনটা বলছেন তাদের সূত্র অনুযায়ী, এই তদন্ত হয়েছে ২,৩, ৪ আগষ্টে, যখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতায়। জামায়াত সে সময়ে খুব জটিল অবস্থায় ছিল এবং জামায়াতের সাথে যোগাযোগ করার মতো সুযোগও সেভাবে ছিল না।
কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকালের সংবাদ সম্মেলনে পরিস্কার বললেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস অনুরোধ করার প্রেক্ষিতে তারা এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইউনুস সাহেব দায়িত্ব নিলেন ৮ আগষ্ট তাহলে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কীভাবে ২-৪ আগষ্ট দেশে কাজ করে? আর আওয়ামী লীগের শেষদিকের সেই কঠিন সময়ে তদন্ত করার মতো কোনো পরিবেশ দেশে আদৌ ছিল কি?
তাছাড়া প্রতিবেদনে পরিস্কার বলা হয়েছে,অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে একটি দল পাঠায়। এই দলে মানবাধিকার তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা প্রাণঘাতী এসব ঘটনার ওপর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান পরিচালনা করেন।
সেপ্টেম্বরে জামায়াতের কোনো প্রতিকূল অবস্থা ছিল না। সুতরাং তখন জামায়াতকে পাওয়া যায়নি- এই দাবি ধোপে টেকে না। জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস তখন ফুল ফাংশন করছে। জামায়াত তখন হট কেক। সব চ্যানেল সাক্ষাতকার নিচ্ছে। নেতারা শহীদ ও আহতদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তাই জামায়াত সে সময়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে নয়, বরং স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান।
আরেকটি পয়েন্ট বলি। আমার কাছে সরলভাবে যা মনে হয়, শিবিরের যে ভাইয়েরা এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমকে নিয়ে ঘুরেছেন, ভিকটিমদের কাছে নিয়ে গেছেন- তাদেরকে তদন্তকারীরা সোর্স হিসেবে গন্য করেছেন। দায়িত্বশীল হিসেবে নয়। জামায়াত বা শিবিরের দায়িত্বশীলদের কাঠামোগত অবস্থান সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় এই গ্যাপ হতে পারে।
আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো যে গ্যাপটি ধরা পড়েছে, তাহলো, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশে তাদের যে প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করেছেন, সম্ভবত তারা এখানে সঠিক ভূমিকা পালন করেননি। এন্টি আওয়ামী লীগ বলয়ের বহু মানুষ যে জামায়াত বিরোধী রয়েছেন, এমন প্রমাণ তো গত ৬ মাসে আমরা বহুবারই পেয়েছি। সুতরাং তারা এখানে সচেতনভাবেই একটি গ্যাপ তৈরি করতে পারেন।
আর জামায়াতের দায় হলো, তাদের এক্ষেত্রে ডায়নামিক কনটাক্ট পারসন নেই। জামায়াত হয়তো মনে করছে আছে, কিন্তু বাহির থেকে যারা আসবেন বা পর্যবেক্ষন করবেন, তারা যদি ঐ কনটাক্ট পারসন সম্পর্কে অবগত না হন বা তাকে খুব গুরুত্ব না দেন- তাহলেও গ্যাপ হতে পারে। এ কারণে দায়িত্ব ও কাজকর্মের ডিসেন্ট্রালাইজ করা এবং অনেকগুলো ফিগার তৈরি করা প্রয়োজন। এককেন্দ্রীকতা স্ট্র্যাটেজি হিসেবে সঠিক নয়।
যারা দেশের বাইরেও জামায়াতের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, অথবা নিজেরা এরকম কেনো পদে থাকার দাবি করেন- তারাও এসব প্রতিনিধি দলের সফরের কথা আগাম জেনেছিলেন কিনা এবং কেন্দ্রীয় সংঠনকে অবহিত করেছিলেন কিনা সেই অনুসন্ধানও করা প্রয়োজন। তারা যদি এ ধরনের সফরের কথা না জানেন, তাহলে তাদের ব্যর্থতাও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা দরকার।