![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/80ddfcd4382ea975a7ac03859d04fda0.png)
সম্ভবত আয়না ঘর ভিজিট করা youngest সাংবাদিক আমি। এটা অত্যন্ত ট্রমাটিক ছিল, কিছু লেখার ভাষা পাচ্ছিলাম না। অন্যদিকে বাংলা টাইপ করাটা আমার জন্য একটা মহা ঝামেলা। যাইহোক, আমি কয়েকটি FAQ করব এবং কিছু পর্যবেক্ষণ বলব, যেগুলো হয়তো আপনি এখনো জানেন না বা মিডিয়ায় আসেনি।
১. ওয়ালে কীভাবে লেখা হতো?
উত্তর: প্রধানত মাছের কাঁটা। খাইতে দিলে সেগুলো জমিয়ে রাখতেন। এ ছাড়া কোনো ধারালো কণা বা কিছু পেলে। অনেককেই লেখার জন্য কলম ও কাগজ দেওয়া হতো, তারা সেই কলম ব্যবহার করেছে।
২. আয়না ঘর দেখাতে এতদিন লাগল কেন?
উত্তর: ডিজিএফআই বা স্পেসিফিক্যালি আর্মি আসলে কোনো দিনই এটা দেখাতে চায়নি, কারণ এটা তাদের ইমেজের জন্য হুমকি। কিন্তু নেত্র নিউজ এটার জন্য কাজ করে গেছে। গত বুধবারে আমাদের রিপোর্ট করা হয়েছিল যে আর্মি আয়না ঘর ভিজিট দিচ্ছেন না; এর পরের দিন সরকার আয়না ঘর ভিজিটের কথা জানান। আর্মি দোষী, তাই অবশ্যই তারা চায়নি তাদের পাপ সামনে আসুক। কিন্তু মিডিয়ার চাপে তা করতে বাধ্য হয়েছে।
৩. রিভলভিং চেয়ার নাকি কী?
উত্তর: এটাকে প্রথমে অনেকেই ইলেকট্রিক শক চেয়ার ভেবে ভুল করেছেন। মূলত এটাতে হাত-পা মাথায় বেঁধে জোরে ঘুরানো হয়। আর এটা ইলেকট্রিক, তার প্রমাণ আছে—এটার সাথে লাগানো তারের লেজ ছিল। মানে তার কেটে ফেলার পরেও কিছু তার রয়ে গেছে। যেহেতু অনেকেই রিভলভিং চেয়ার শাস্তির সাথে পরিচিত না, তাই এটাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার চেয়ার ভেবেছেন। এটা নরমাল।
৪. একটি মাত্র চেয়ার কেন?
উত্তর: এত মানুষকে একটা চেয়ারে কীভাবে শাস্তি দিতো? প্রথমত ডিজিএফআই অনেক আলামত নষ্ট করে ফেলেছে। গুম কমিশন এই চেয়ারটাও অনেক কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছে। এটাও লুকানো হয়েছিল। আর সবাইকে একই শাস্তি দিতো না। অনেক রকম সাজার ব্যবস্থা ছিল। যেমন এই রুমে ঝুলিয়ে মারার মতো ব্যবস্থা ছিল, যা পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।
৫. তাসনিম খালিলের ছবিতে করোনা আইসোলেশন সেন্টার লেখা কেন?
উত্তর: ছবিটি আমিই তুলেছি এবং লেভেলটা ইচ্ছে করেই ফ্রেমে রাখা হয়েচজে। আইসোলেশন সেন্টার আসলে একটা ভ্রম। এর ভিতরেই রাখা হতো বন্দীদের। আর এই কল্যাপসিবল গেটের কথা একাধিক সারভাইভার আমাদের বলেছেন।
৬. এতদিন শুনে আসলাম আয়না ঘর হল অনেক ছোট রুম, আলো-বাতাস অসহ্য। এখন দেখি অনেক রঙ করা, আলো ভরা—এগুলো কেন?
উত্তর: যতগুলো গোপন বন্দিশালা আছে (ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টারসহ), সবগুলাতে আলাদা মাপের রুম আছে। কোথাও রুমের ভিতরেই টয়লেট, কোথাও কয়েকটি সেলের জন্য বাইরে শেয়ার্ড টয়লেট। আর সেখানে সব টয়লেটের দরজায় ফুটো করা থাকত, যেন বন্দী টয়লেটে গিয়ে কী করছে দেখা যায়। একদম ছোট—৩ হাত যায় এমন রুমও আছে। আল্লাহ জানেন এগুলোর ভিতরে মানুষ কীভাবে বেঁচেছে! আবার একদম অন্ধকার, চারপাশ কালো ওয়াল, ছাদও কালো রঙ করা এমন রুম আছে। আমি যেটা ক্যামেরায় ঠিকমতো আনতে পারিনি আলোর অভাবে। কিছু রুম তুলনামূলক ভালো ছিল, সেগুলোকে ভিআইপি রুম বলা যায়।
৭. একটি লাল তোয়ালে কীভাবে এলো? উত্তর: লাল তোয়ালেটা আমার চোখে পড়েনি। তবে র্যাব-২-এ এখন নতুন করে যারা কাজ করতে আসছেন, তাদের অনেক সেনা সদস্যের ট্রাঙ্ক, জিনিসপত্র আছে। হতে পারে তাদের কেউ এটা রেখেছে।
এবার আমার কিছু শকিং পর্যবেক্ষণ:
১. প্রথমত ওয়াশরুমের দরজায় ফুটো করা। দ্বিতীয়ত, ওয়াশরুমগুলো এত ছোট যে কমোডগুলো সোজা বসানো যায় না—ডায়াগোনালি বসাতে হয়েছে! আমি জানি না ওরা এখানে কীভাবে বসতেন। নিশ্চয় অর্ধেক বসেই কাজ সারতে হতো! তার ওপর ফুটো দিয়ে গার্ড এসে দেখবে! ভাবা যায়! সারভাইভারদের মুখে শোনা কিছু কোথাও কোথাক ওয়াশরুমেও সিসি ক্যামেরা লাগানো।
২. যতটা সম্ভব এটাকে ট্রান্সফর্ম করার চেষ্টা হয়েছে। অনেক জায়গায় ওয়াল রং করা হয়েছে, লেখা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অনেক জায়গায় নতুন ওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। গুম কমিশন অনেক কষ্ট করে এসব খুঁজে বের করেছে। ডিজিএফআইয়ের আয়না ঘর ের দুপাশের ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে, যার কারণে রুমগুলোতে এখন অনেক আলো। রুমের সামনে এই ওয়ালগুলো থাকলে নিশ্চিত এখানে একটা ভৌতিক পরিবেশ হতো! এমনকি র্যাব-১-এর একটা ওয়াল না ভাঙলে গুম কমিশন সবচেয়ে ছোট খুপরির মতো রুম খুঁজে পেত না। অথচ কেউ ভাবেনি এর ভিতরে রুম থাকা সম্ভব!
৩. স্কুইড গেম সিরিজ হয়তো দেখেছেন, যেখানে গার্ডদের আইডেন্টিটি যেন না বোঝা যায়—তারা একই জামাকাপড়-মুখোশ পরে থাকে। এখানেও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যেমন এক গার্ড আরেক গার্ডকে শিস দিয়ে ডাকত, নাম ধরে ডাকত না। বন্দীদের সাথে ফিসফিস করে কথা বলত, যাতে তাদের আসল ভয়েস শোনা না যায়।
৪. আরমানকে যে রুমে ৮ বছর রাখা হয়েছিল, তার সামনে সাদা টাইলস ছিল। ওরা টাইলস চেঞ্জ করার চেষ্টা করছে। টাইলসগুলো ফ্লোর থেকে তুলে একটা সেলের মধ্যে ঢুকিয়ে, সেলের সামনে আরেকটা ওয়াল তুলে রং করে দিয়েছে। আবার সেলের ভিতরে ছোট একটা ওয়াশরুম—তার সামনেও আলাদা ওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে।
৫. জঙ্গি নাটক বানানোর জন্য ওদের স্টকে অনেক ইসলামিক বই আছে। যেগুলোর একটা স্ট্যাক পাওয়া গেছে।
৬. আমি প্রিজন ব্রেক মুভি পছন্দ করি—শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন, এস্কেপ প্ল্যান, প্রিজন ব্রেক—এমন অনেক সিরিজ দেখেছি। সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকে মনে হয়, আয়না ঘর থেকে পালানোর কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
৭. উপদেষ্টা আসিফ ও নাহিদ তাদের সেলগুলো চিনতে পারে। আসিফ প্রথমে চিনলেও একটু কনফিউজ ছিল, তারপর আমরা যখন ওকে ওয়াশরুম দেখাই, সে ওয়াশরুম ও ওয়াশরুমের আয়না, বেসিন এগুলো দেখে চিনতে পারে যে এটাই সেই রুম। একই বিল্ডিংয়ে নাহিদও তাকে যে রুমে রাখা হয়েছিল, সেই রুম খুঁজে পায়। তবে রুমগুলাতে কিছু মডিফিকেশন করা হয়েছে, ভিন্ন দরজা লাগানো হয়েছে, এক্সস্ট ফ্যান খুলে ফেলা হয়েছে, অনেক জায়গায় দুটি রুম ভেঙে একটি রুম বানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের এই ট্রমা কাটানোর জন্য একটি ক্লোজার দরকার ছিল।যেটা তারা পেয়েছে।
৮. তাসনিম খালিল একজন ব্রিলিয়ান্ট সাংবাদিক।
9. এটি মেনে নেওয়া কঠিন! মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে দেখেছি—কালো দেয়ালে লেখা আছে মানুষের ফোন নম্বর, কাকুতি-মিনতি, ঠিকানা, বন্দিদের জন্য মেসেজ! ভাবাই যায় না, একজন মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই বন্দিশালায় কাটিয়েছেন! প্রতিদিন ঘুম ভাঙতেন একটা হোপলেস পৃথিবীতে! ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুভয়! এভাবে কি বেঁছে থাকা যায়?
এ মুহূর্তে আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। রাত তিনটা বেজে গেছে, ঘুমাতে পারছি না। ভাবতে ভাবতে... মানুষ মানুষের সাথে কীভাবে এত নিষ্ঠুর হতে পারে?
NB: এই ছবিটা আপলোড করেছি, কারন আমার নিজের কোনো ছবি তোলা হয়নায়। শফিক ভাইয়ের ওয়াল থেকে ছবিটা নেওয়া।
PS: যারা বলে আয়নাঘর ভুয়া, বানানো, fuck you!