Image description

সুন্দর ছিমছাম প্রবাসী লাউঞ্জ। এগিয়ে আসছেন বহির্গামী যাত্রীরা। কেউ বসে অপেক্ষা করছেন, কেউ কফি পান করছেন। কেউ স্যান্ডউইচ, আবার কেউবা খাচ্ছেন তেহারি। গন্তব্যে রওনা দেওয়ার আগে এভাবেই সময় পার করছেন যাত্রীরা।

এটা বদলে যাওয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্র। লাউঞ্জে আসা ওমরাগামী একজন যাত্রী জানান, বিমানবন্দরের অন্য স্টলগুলো থেকে প্রবাসী লাউঞ্জে খাবার অনেক সুলভ হওয়ায় তারা বেশ খুশি। তা ছাড়া এখানকার খাবারের মানও ভালো।

যাত্রীদের বিশ্রাম ও সুলভমূল্যে খাবার সরবরাহের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রবাসীদের জন্য সম্প্রতি চালু হয়েছে এ প্রবাসী লাউঞ্জ। গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হয় প্রবাসী লাউঞ্জ এবং ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন হয় ওয়েটিং লাউঞ্জের।

দুটি লাউঞ্জই উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এগুলো প্রবাসীদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত লাউঞ্জ। প্রবাসীদের লাউঞ্জটির অবস্থান ইমিগ্রেশনের পরবর্তী স্থানে। ওয়েটিং লাউঞ্জে রয়েছেÑ বহুতল কার পার্কিং ভবনের দ্বিতীয় তলায়, এ দুটির নিরাপত্তায় রয়েছে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

শুধু প্রবাসী লাউঞ্জেই নয়, বরং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ থেকে শুরু করে আরো নানা বিষয়ে আসছে ইতিবাচক এবং অনেক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক রুটে প্রায় ৫৫ হাজার ফ্লাইট, অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৪৫ হাজার ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বার্ষিক এক কোটি দুই লাখের বেশি যাত্রী আন্তর্জাতিক রুটে এবং ২৩ লাখ যাত্রী অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াত করেন। তবে সব ধরনের ফ্লাইটের চাহিদা বেশি থাকায় এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিগত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ পুরোনো এয়ারপোর্টের চাপ বেড়েছে বহুগুণ। এত বিপুলসংখ্যক যাত্রী সামাল দিতে গিয়ে এয়ারপোর্টকে বারবারই নানা ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। দেশের এত বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে মোকাবিলা করাটা আসলেই যে একটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং কাজ, সেটা দেশের অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও স্বীকার করেন।

তবে গত সপ্তাহে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কর্মীদের অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ নৈপুণ্য, নিরলস প্রচেষ্টা, আন্তরিক সেবা ও সমন্বয়ের ফলে আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে গেছে বিমানবন্দরের সার্বিক চিত্র। যিনি আগে দায়িত্ব পালনে অনীহা কিংবা গড়িমসি করতেন, এখন তাকেই দেখা যায়, যাত্রীদের স্যার সম্বোধন করে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে।

এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীরা গালিগালাজ করতেন। ইমিগ্রেশন কাস্টমসে হয়রানির শিকার হতেন। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে এ কয়দিনেই সেটা বদলে গেছে।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৮৮ শতাংশ যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত হয়েছে। লাগেজ বহনের সুবিধার্থে বিমানবন্দরে নতুন সংযোজনের পর ট্রলির সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৬০০টিতে দাঁড়িয়েছে। ক্যানপি থেকে বের হয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তা পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ট্রলিতে করে লাগেজ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাত্রীদের সেবা দিতে বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

মালয়েশিয়া থেকে আগত একজন যাত্রী আমার দেশকে বলেন, ‘বিমনবন্দরে আগে যেখানে লাগেজ পেতাম দুই ঘণ্টায়, এখন সেটা পেয়েছি এক ঘণ্টায়। আগে যেখানে ট্রলি পাওয়া যেত না, এখন দেখা গেছে ট্রলিম্যান দাঁড়িয়ে ডাকছেন, ‘কিছু লাগবে’ বলে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। আগে যেখানে মাথায় করে লাগেজ নিয়ে ক্যানপি থেকে গোলচত্বর যেতাম, এখন সেখানে পেয়েছি শাটল বাস।’

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবির্ক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুরুল কবীর ভুইঞা আমার দেশকে বলেন, যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যাত্রীদের প্রতিটি অভিযোগকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সম্মান দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেবার মানসিকতা বা হসপিটালিটির মনোভাব নিয়েই কাজ করতে হবে প্রত্যেককে।

যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিভিন্ন তথ্যসেবা অনলাইনের মাধ্যমে নিতে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি সিমকার্ড না থাকায় যাত্রীদের অসুবিধায় যাতে না পড়তে হয়, তাই বিভিন্ন কোম্পানি দ্বারা যাত্রীদের ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবস্থা। নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ওটিপি কোডের প্রয়োজন হয়। এ কোডটি দিয়ে সহায়তার জন্য জনবলসহ প্রয়োজনীয় ওয়াইফাই ডেস্কের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য টেলিফোন।

আগমন ও বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা দিতে নতুন করে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী এলাকায় দুটি এবং বহির্গমন এলাকায় তিনটি হেল্পডেস্কে ৫৪ জন কাজ করছে। বিমানবন্দর থেকে কাছাকাছি বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে আসা-যাওয়া সহজ করতে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে এই উদ্যোগটি চালু করা হয়।

নামমাত্র ভাড়ায় এসিযুক্ত বাসে যাত্রীরা তাদের লাগেজসহ চলাচল করতে পারেন। প্রবাসী যাত্রীদের যাত্রাকালীন বিশ্রাম ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে বহুতল কার পার্কিংয়ের দোতলায় বিস্তৃত স্থানজুড়ে প্রবাসী যাত্রীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অপেক্ষাগার। ফ্লাইটের আগে ও পরে যাত্রীরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এ ছাড়া সহযাত্রীরা এসেও এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন।

এ লাউঞ্জে রয়েছে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা, নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের স্থান, প্রক্ষালন কক্ষ, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাফে ও মাতৃদুগ্ধ পান কক্ষ। ওয়েটিং লাউঞ্জে বাচ্চাদের খেলার জায়গাও রয়েছে। আছে বিনোদনের জন্য টেলিভিশন। রয়েছে যাত্রীদের আগমনী ও বহির্গামী ফ্লাইট-সংক্রান্ত মনিটর।

বিমানবন্দরে আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীরা বিভিন্ন তথ্যের জন্য এয়ারলাইনস অফিসে যোগাযোগ করতে চাইলে অনেক সময় অপারেশন না থাকায় অফিস বন্ধ থাকার কারণে অফিসে এসেও যাত্রীরা সঠিক তথ্য পান না। যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক এয়ারলাইনসের হটলাইন নম্বর আগমনী বেল্ট এরিয়াসহ বিমানবন্দরের প্রত্যেকটি হেল্পডেস্ক পয়েন্টে সংযুক্ত করা হয়েছে।