![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/2aaa113d5716a3d7265e8a9a9dd864fb.png)
মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো রাজউক চেয়ারম্যানের চিঠি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দুদক তার এই চিঠিকে অসদাচরণ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্ত সচিবকে চিঠি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল প্রকল্পে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা তদন্ত করছে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়ম করে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট হাসিনার পরিবারের জন্য বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দপ্রাপ্ত অন্যরা হলেনÑ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক। এ ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জড়িত কর্মকর্তাদের তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করে দুদক। ওই ঘটনা নিয়েই দুদকে চিঠি দেন রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার। চিঠিতে চেয়ারম্যান রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত না করতে অনুরোধ জানান।
দুর্নীতি দমন কমিশন রাজউক চেয়ারম্যানের এই চিঠির ঘটনাকে স্রেফ ‘অসদাচরণ’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কমিশন গৃহায়ন ও গণর্পূত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে (স্মারক নম্বর- ০০০১০০০৫০৩২৬১২৩২৫) ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ অনুযায়ী কমিশন একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী কমিশন তফসিলে অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনার ভিত্তিতে মামলা দায়ের, পরিচালনা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত অন্য যে কোনো কার্য সম্পাদন করে থাকে। রাজউক চেয়ারম্যান কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক কর্মকর্তাগণের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ কমিশনের স্বাধীন অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার পরিপিন্থি। এমনপত্র যোগাযোগ কমিশন কর্তৃক অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমন অসদাচরণের বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিবকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় দুদক।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার চলতি বছরের গত ১৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন (স্মারক নম্বর- ২৫.৩৯.০০০০০০৯.১৬.৯৯২.২৩.৯৭)। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের Rajdhani Unnayan Katripakkha (Land. Allotment) Rules, 1969 The Dhaka Improvement Trust (Allotment of lands) 1969 x the Town Improvement Act 1953 মোতাবেক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে শেখ হাসিনা, রেহানা সিদ্দিক, সজিব ওয়াজেদ জয়, আজমিনা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিককে ১০ কাঠা আয়তনের ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্লট বরাদ্দের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম জড়িত রয়েছে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ)বিধিমালা, ১৯৭৯, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০১৩ মোতাবেক সরকারের আদেশ পালন করেছেন মর্মে উল্লেখ করে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মামলায় অন্তর্ভুক্তি না করার বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ জানান।
চিঠি সম্পর্কে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার আমার দেশকে বলেন, দুদক আসল দুর্নীতিগ্রস্তদের বের করে তাদের শাস্তি দেবে, এটা আমরাও চাই। কিন্তু রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণহারে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এভাবে গণহারে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় রাজউকের অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী পালিয়ে রয়েছে। কেউ অফিসে আসছে না। বর্তমানে রাজউকে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আমরা তাই দুদককে অনুরোধ করেছি, যারা ওই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের বিুরদ্ধে তদন্ত করুন। কিন্তু যারা কেবলমাত্র চিঠি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন, শুধুমাত্র আদেশ পালন করেছেন; তারা তো দোষী নন। আমরা দুদককে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠির ব্যাপারে পূর্ত সচিব হামিদুর রহমান খান আমার দেশকে বলেন , ‘আমরা দুদক থেকে রাজউক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি পেয়েছি। আমরা দুদকের চিঠি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করব। তবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারব না।’