Image description

আবু রুশদ এ আর এম শহীদুল ইসলাম (Abu Rushd A R M Shahidul Islam)

 
আমি ছোটবেলায় নানা-নানীর কাছে ঢাকায় মানুষ। ১৯৭৬ সালে নানা‌ অবসর নেয়ার পর আব্বা জোর করে আমাকে রংপুর নিয়ে যান। ওখানে গিয়েই প্রথম 'জিয়াফত' শব্দ টা শুনি। আগে ঢাকায় দাওয়াত শব্দটার সাথে পরিচিত ছিলাম। অবশ্য একটা গোষ্ঠী বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি,ভাষা ও ঐতিহ্য পরিবর্তন করার জন্য খুবই মোহনীয় কায়দায় অনেক শব্দের পরিবর্তন করেছে‌। পানির জায়গায় জল,গোসলের জায়গায় স্নান, দাওয়াতের জায়গায় নিমন্ত্রণ বা নেমন্তন্ন এই পরিবর্তনের ফসল।
 
এটা করা হয়েছে পশ্চিম বঙ্গের সাথে বাংলাদেশের ভাষা মিলিয়ে ফেলার জন্য যাতে আমরা ওপার বাংলা নামের ভারতীয় প্রদেশটিকে অনুসরণ করি। এতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় যে আরবী,ফার্সি শব্দও আছে তা তো অস্বীকার করা যাবে না। সংস্কৃত শব্দও আছে। তবে, বাঙালি মুসলমানের একটা আলাদা সংগ্রাম আছে দীর্ঘদিনের। সেই সংগ্রাম টার সাথে ভাষাগত বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
 
পানি ও জল, আব্বা ও বাবা শব্দগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের খুব সতর্কতার সাথেই ব্যবহার করতে হয়েছে। বিশ্বখ্যাত ফাইটার পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম দাঙ্গার সময় তাঁর পরিবারের কলকাতা থেকে পালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসার কাহিনী বলার সময় বলেছিলেন যে তার আব্বা ধুতি পড়েছেন,আম্মা মাথায় সিঁদুর দিয়েছেন যাতে কেউ তাদের মুসলমান হিসেবে চিনতে না পারে।
 
এছাড়া তার পিতা তাদের বারবার বলে দিয়েছেন পথে সীমান্ত পার হওয়ার আগে যেন তারা আব্বা,আম্মা শব্দ উচ্চারণ না করে। মা,বাবা বলে। আমি ,আমার পরিবার যথেষ্ট লিবারেল। কিন্তু কখনোই সাংস্কৃতিক এসব বিষয় ভুলে যাইনি। আমরা আব্বা ,আম্মা বলি; কখনো জল বলি না,স্নান করি না। পানি পান করি,গোসল‌ করি। এটা আমার পূর্বপুরুষের সংগ্রামের অংশ, সাম্প্রদায়িকতা নয়।
 
এখন ২০২১ সাল। আমরা অনেক পরিবর্তন হয়েছি। হওয়া উচিত। তবে ইতিহাস অস্বীকার করে নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অস্বীকার করা পাপ। তেমনি বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ইতিহাস পাল্টে দেয়া গুরুতর বাদড়ামি।
কিন্তু জিয়াফত নামের একটা শব্দ নিয়ে যে ফাজলামি শুরু হয়েছে তা বাঙালি মুসলমানের বারোটা কেন তেরোটাও বাজাতে পারে।
 
গরু খাওয়া নিয়ে সীমান্ত যাত্রার মতো ফাত্রা আহ্বান যে করছে আর যে লাফাচ্ছে এরা দুই পক্ষই বাঙালি মুসলমানের অর্জিত বিজয় নস্যাৎ করতে চায়। কোন আন্তর্জাতিক সীমান্তে এসব বাদড়ামি বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছুই নয়। এধরনের হঠকারী তৎপরতাকে সুযোগসন্ধানীরা চটজলদি বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যবহার করবে নির্দ্বিধায়। এটা হয়তো অন্য কোন খান থেকেই বলে দেয়া হচ্ছে! আবেগপ্রবণ, হুজুগ প্রবন মানুষ এসবে লাফাবে তা তারা জানে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের সীমানায় গরু দিয়ে কথিত জিয়াফত যাত্রা আমাদের স্বার্থের বিপরীতে। কোন যুক্তিই এটাকে জায়েজ করতে পারবে না।
 
সীমান্তে আমাদের সাহসী জনগণ বিজিবির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যা করেন তা আমাদের গর্বের বিষয়। আর এখন যেই আহ্বান জানানো হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত যাত্রার ও গরুর মাংসের জিয়াফতের তা হচ্ছে ছ্যাচড়ামি।
আমি পাক-ভারত সীমান্ত ওয়াগাহ গিয়েছি। দুই পক্ষের জজবা দেখেছি। কোন ছোটলোকি দেখিনি। তারা তাদের স্বার্থ দেখছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, দেশপ্রেম দিয়ে। কোন জিয়াফত দিয়ে নয়।
 
নিজেকে প্রশ্ন করুন - গরু জবাই করে খেয়ে কি মেসেজ আপনি দিচ্ছেন? কতো গুলো ফ্রন্ট সামলাবেন? কতো সব সমস্যা রয়ে গেছে। কে এসব ফাজলামি দেখলে আর পাশে থাকবে? পৃথিবীতে কতো গুলো স্বীকৃত আচার রয়েছে। ছ্যাচড়ার মতো ওগুলো ভাঙবেন তো পৃথিবী আপনাকে লাথি দিয়ে দূরে ঠেলে দিবে। সব অর্জন যাবে। বিদেশে বসে থাকা ওদের কিছুই হবে না। হয়তো সফল সাইকোলজিক্যাল ওয়ার ফেয়ার বাস্তবায়ন করায় আধিপত্যবাদ বিশেষ পুরস্কারও দিবে তাকে। আর আপনি পাবেন একটা বিধ্বস্ত দেশ।
ফাজলামি, ইতরামি ,ছোটলোকি বন্ধ করুন।