Image description
আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ

দন্ডিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আদালতের চূড়ান্ত রায়ে দন্ডিত অপরাধীকে নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য বোর্ড গঠন এবং ওই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। এ সময় কমিশনের অন্য সাত সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, মোবাইল কোর্টে দন্ড দেওয়ার পরিবর্তে শুধু জরিমানার বিধান করা, আদালতের বিকেন্দ্রিকরণ করাসহ ২৮ বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

গতকাল প্রতিবেদন দাখিল শেষে কমিশনের অন্যতম সদস্য সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদন দাখিল শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠকও হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সাবেক বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজ হক সুপণ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আরমান হোসাইন।

এই প্রতিবেদনের ২৮ বিষয়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস, বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান সংশোধনী, অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামো, বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা, বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অধস্তন আদালতের ভৌত অবকাঠামো, আদালত ব্যবস্থাপনা অন্যতম। এ ছাড়া বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি, বিচার বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধ, আইনগত সহায়তা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, মামলাজট হ্রাস, গ্রাম আদালত, আইনের সংস্কার, বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণ, আইন পেশার সংস্কার, আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ উন্নয়নেও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রমকে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ভোগান্তি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারকদের ছুটি, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, আদালতে প্রকাশ্যে পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা, আইনজীবীর মৃত্যুতে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ইত্যাদি কারণে বিচারপ্রার্থীরা যে হয়রানির শিকার হয়, তা বন্ধ করতে হবে। মোবাইল কোর্টের দন্ড দেওয়ার বিধান বাতিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আপিল বিভাগের বিচারাধীন মামলার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে মোবাইল কোর্টের দন্ড প্রদানের ক্ষমতা সংশোধন করে শুধু জরিমানা প্রদানের বিধান করা এবং বিভিন্ন আইনে বিধান অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। প্রতিবেদনে বিচার বিভাগের স্বতন্ত্র সচিবালয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এসবের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনতে হবে। সে উদ্দেশ্যে বিচার-কর্মবিভাগের সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করতে হবে।

বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের বাজেট নির্ধারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি কমিটি থাকবে এবং সেই কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে থাকবে। বরাদ্দকৃত বাজেট স্বাধীনভাবে খরচ করা এবং তা উপযোজন এবং পুনঃ উপযোজনের পরিপূর্ণ ক্ষমতা প্রদানসহ সুপ্রিম কোর্টের জন্য উন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি ও বিচার বিভাগের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।