
চিরচেনা সেই যানজট নেই, নেই যানবাহনের অহসনীয় শব্দ ও কালো ধোঁয়া। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিনের লম্বা ছুটিতে ঢাকা এখন পুরো ফাঁকা।
নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে লাগছে না সময়।
রোববার (৮ জুন) রাজধানীর খামাড়বাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে কিছু গণপরিবহন চললেও সংখ্যায় তা অনেক কম। আবার সেই কম সংখ্যক গণপরিবহনেও নেই সাধারণ সময়ের মতো ভিড়। রাস্তা ফাঁকা থাকায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেও লাগছে না তেমন সময়। বাসের পাশাপাশি সড়কে চলাচল করছে যত সামান্য সিএনজি ও প্রাইভেটকার।
এদিকে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে প্রধান সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও পায়ে চালিত রিকশা। ঈদের ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীরা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে এই বাহনটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি। এসব বাহনে কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফাঁকা ঢাকায়, কেউবা যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে।
রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে রিকশায় চড়ে মালিবাগ চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আশিক রহমান। সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ে। আশিক বলেন, ঈদে এবার বাড়ি যাইনি। ঈদের দিন কোরবানির মাংস কাটাকাটি করায় বেরও হইনি। তাই আজ পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। প্রথমে চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যাবো। সেখান থেকে বিকেলে হাতিরঝিল ঘুরতে যাবো।
তিনি আরও বলেন, অন্য সময় হলে খামারবাড়ি থেকে মালিবাগ যেতে সিএনজি বা উবার নিতাম। কিন্তু এখন রাস্তা ফাঁকা। তাই রিকশা নিয়েছি। এতে ফাঁকা ঢাকা কিছুটা ঘুরেও দেখা যাবে, আবার কম খরচে গন্তব্যেও যাওয়া যাবে।
অন্যদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও অনেককে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। তেমনি একজন কমল মিয়া। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ যেতে ফার্মগেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাকে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। ঢাকায়ই কোরবানি দিয়েছি। কিন্তু আগামীকাল ফুফাতো বোনের বিয়ে। তাই সেখানে যাচ্ছি। কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও মাওয়া যাওয়ার কোনো বাস পাইনি। ভাবছি গুলিস্তান গিয়ে চেষ্টা করবো।
ফার্মগেটেই কথা হয় মামুনের সঙ্গে। মা ও বোনদের নিয়ে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গে ব্যাগের ভেতর বিভিন্ন ধরনের খাবার। মামুন বলেন, একটি মামলায় ভাই কারাগারে আছে। ঈদের দিন দেখা করতে যেতে পারিনি। তাই আজ যাচ্ছি।
এদিকে বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে রাস্তায় অনেককে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করতে দেখা যায়। ফার্মগেটে পারভেজ নামে এক চালক বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। চাকরির পাশাপাশি ফ্রি সময়ে রাইড শেয়ার করি। ঈদের সময় অনেকে কোরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দিতে যায়। এই সময় রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় সহজে যাত্রী পাওয়া যায়। আবার আরামেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায়।
কেমন আয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল ঈদের দিন ৩ হাজার টাকা আয় হয়েছে। আজ সকাল থেকে এক ঘণ্টা যাত্রী বহন করেছি। এরই মধ্যেই ৪০০ টাকা আয় হয়েছে।