
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন গুলশান এলাকার বাসাবাড়ির বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব পালন করছে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এলাকার ৬৬ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাড়িতে ১৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাড়ির মালিক প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা বর্জ্য বিল বাবদ ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজকে পরিশোধ করে আসছেন।
মার্চ মাসের বিল বাবদ তিন হাজার টাকার মানি রিসিটের সঙ্গে একটি চিঠিও দেওয়া হয়। এতে পরবর্তী মাস থেকে প্রতি ফ্ল্যাট বাবদ পাঁচশ টাকা করে বর্জ্য বিল নির্ধারণের কথা জানানো হয়। এ হিসাবে ওই বাড়ির বর্জ্য বিল দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। ফ্ল্যাট মালিকরা সম্মিলিতভাবে কোম্পানির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
একই এলাকার পাশের রোডের আরেকটি বাড়ির মালিক ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজকে প্রতি মাসে বর্জ্য অপসারণ বাবদ বিল দেন ৭ হাজার টাকা। চলতি মাস থেকে কোম্পানিটি ১৮ হাজার টাকা দাবি করে।
গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণ নিয়ে পুরো ঢাকায় অরাজক পরিস্থিতি চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের মতো এমন কয়েকশ প্রতিষ্ঠান বর্জ্য অপসারণের কাজ করছে। সিটি করপোরেশনে এদের বিষয়ে তেমন কোনো নথিপত্রও নেই। ঢাকাবাসী এদের ‘ময়লা মাফিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গুলশান এলাকার বাড়িগুলোর বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের দেওয়া একটি চিঠির বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় আমার দেশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরে ঢাকায় বর্জ্য অপসারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। এ ছাড়াও রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দায়িত্ব পালনে নাকাল অবস্থা, বর্জ্য অপসারণ নিয়ে ঢাকার সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের ‘গিনেস বুক রেকর্ড’ কেলেঙ্কারি, পাড়ায় পাড়ায় বর্জ্য অপসারণের নামে মাফিয়াচক্র গড়ে ওঠা, নাগরিকদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। মাফিয়াচক্রের মাধ্যমে কোথাও কোথাও বর্জ্য অবরোধের ঘটনারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গুলশান-২ এলাকার বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব পালনকারী ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ গত ২৭ মার্চ ওই এলাকার বাড়ির মালিক/ম্যানেজারদের বরাবর একটি নোটিস দেয়। ‘বর্জ্য বিল বৃদ্ধিকরণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে দেওয়া নোটিসে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা ভাই ভাই ক্লিনার এন্টারপ্রাইজ ময়লা-আবর্জনা সুনামের সহিত দীর্ঘদিন যাবত অপসারণ করিয়া আসিতেছি। ভাই ভাই ক্লিনার এন্টারপ্রাইজ প্রতি ফ্ল্যাট/ ইউনিট/ অ্যাপার্টমেন্টের নির্ধারিত বিল ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। ডুপ্লেক্স বাড়ির বিল এক হাজার টাকা। ১ এপ্রিল থেকে এ বর্ধিত বিল কার্যকর হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এ বিল পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
ময়লা বিলের বিষয়ে গুলশান-২ এলাকার ৬৬ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের মালিক জানান, এ বাড়িটিতে মোট ১৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আমরা সবাই মিলে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা বিল দিয়ে আসছি। এখন হঠাৎ করে তা তিনগুণ বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করে দিয়েছে। আমরা জানি না, এটা সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত কি না? তবে যখন আমাদের একজন প্রতিবাদ করে, তখন তিনি বর্জ্য অপসারণকারীদের দ্বারা অপমানের শিকার হয়েছেন।
পাশের আরেকটি বাড়ির ম্যানেজার বলেন, আমাদের বাড়িতে ফ্ল্যাট সংখ্যা ৩৬টি। আমরা আগে ময়লা অপসারণ বাবদ মাসে বিল দিয়েছি ৭ হাজার টাকা করে। এখন ১৮ হাজার টাকা দাবি করছে। এর কম দিলে তারা ময়লা নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নোটিসে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হয়Ñ নিজেকে কোম্পানিটির পরিচালক পরিচয় দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে গুলশান এলাকার ময়লা ও বর্জ্য অপসারণের কাজ করে আসছি। এ কাজ করতে গিয়ে আমাদের যে খরচ হয় তা বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে আদায় করি। সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না।
আপনাদের এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, আমাদের কেউ দায়িত্ব দেয়নি। আমরাই পালন করছি।
আপনারা এ কাজ করলে সিটি করপোরেশনের কাজ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্ব পালন করলে তো আর আমাদের এ কাজ করতে হতো না।’
তিন হাজার টাকার বিল হঠাৎ করে ৯ হাজার টাকা করে দিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। উপরের লোকেরা বলতে পারবেন।’
উপরের লোকদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এটাও বলতে পারব না’। এ বলেই তিনি টেলিফোনের লাইন কেটে দেন।
হাজার কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার দুটি সিটিতে এখন ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ ওয়ার্ডগুলোতে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫টি হোল্ডিং রয়েছে। অধিকাংশ হোল্ডিংয়ে ৬ থেকে ১২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। কোনো কোনো হোল্ডিংয়ের ১০ তলা ভবনে ৪০ থেকে ৮০টি পর্যন্ত ফ্ল্যাটও রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্জ্য অপসারণের জন্য কোম্পানিগুলোকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি কোম্পানিকে ফ্ল্যাটপ্রতি দেড়শ’ টাকার বেশি না নেওয়ার সীমারেখা দেওয়া হয়েছে। ১৫০ টাকা ধরে ঢাকায় বছরে সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হয়। তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও দুইশ’ টাকা আবার কোথাও তিনশ’ টাকাও নেওয়া হয় ময়লা অপসারণের জন্য।
এ ছাড়াও ঢাকায় সাত হাজারের বেশি হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা জানান, সাধারণ মানের রেস্তোরাঁ থেকে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হলেও অভিজাত এলাকার রেস্তোরাঁ মালিকদের পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় প্রতি বছর অন্তত এক হাজার কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হয়। এর সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত বলেও জানান নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক প্রশ্রয়
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকার ময়লা অপসারণ নিয়ে বাণিজ্য গড়ে ওঠে। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড কমিটি গ্রুপ করে এ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্জ্য অপসারণকারীদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা ‘মাফিয়াগিরি’ করছেন। প্রতিবাদ করলে ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেন। বিকল্পভাবে ময়লা অপসারণের সুযোগও রাখা হয়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকট ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ লোকবলের অভাবে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট স্থাপনায় নেওয়ার কাজটি বেসরকারি খাতে দেওয়া হয়েছে। ওই জায়গা থেকে ডাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে বর্জ্যগুলো নেওয়া হয়। দরপত্রের ভিত্তিতে এ কাজটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পেয়ে থাকে।
সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত ওয়ার্ডভিত্তিক রাজনৈতিক নেতারা ময়লা অপসারণের কোম্পানি ঠিক করে। গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতন ও পলায়নের পর আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গেলেও ময়লা সিন্ডিকেটেরও হাতবদল হয়। এখনো রাজনৈতিক নেতারাই এসব ময়লা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন। নেতারাই ময়লা বিল বাড়িয়ে বাড়ির মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
‘ময়লা মাফিয়া’র কাছে নাজেহাল হয়েছেন ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি বাড়ির মালিক। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে ৩৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের ময়লা বিল দেওয়ার কথা পাঁচ হাজার টাকা। আমাদের কাছ থেকে আদায় করা হতো সাত হাজার টাকা করে। এখন নোটিস দিয়েছে ১৮ হাজার টাকা দিতে হবে। এক টাকা কম হলেও তারা ময়লা নেবে না।
ওই ব্যক্তি আরো বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় আমরা ময়লা ও বর্জ্য ফেলার চেষ্টা করেছিলাম। রাতের বেলায় হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আমাদের বাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দিয়েছে। আমরা অনেকটা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। ফ্ল্যাটপ্রতি ৫০০ টাকা দেওয়াটা বড় কথা নয়। কিন্তু বর্জ্য অপসারণকে কেন্দ্র করে যে পরিমাণ অরাজকতার সৃষ্টি করা হয়েছে, এটার প্রতিকার হওয়া জরুরি।
কার্যকর করা যায়নি গুলশান সোসাইটির উদ্যোগ
ময়লা মাফিয়াদের কবল থেকে বাঁচতে এলাকাভিত্তিক সমিতিগুলো নিজ উদ্যোগে ময়লা অপসারণের দায়িত্ব নিয়েও তা করতে পারেনি। কয়েকটি সমিতি বা সোসাইটি সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিয়ে নিজেদের ময়লা নিজেরা যথাস্থানে ফেলার উদ্যোগ নিলেও ময়লা মাফিয়াদাদের দৌরাত্ম্যের কাছে হেরে যান।
গত ৫ সেপ্টেম্বর গুলশান সোসাইটি একটি নোটিস জারি করেছিল। তাতে উল্লেখ করা হয়, ‘গুলশান মডেল টাউনে অবস্থিত সব ভবন মালিক/অ্যাপার্টমেন্ট মালিক সমিতির অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুমোদনক্রমে গুলশান সোসাইটি বাসাবাড়ি ও গৃহস্থালি বর্জ্য এবং আবর্জনা অপসারণের কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন থেকে কেবল গুলশান সোসাইটি গুলশান এলাকার বর্জ্য অপসারণ করবে। কাজেই এখন থেকে কোনো বর্জ্য বা আবর্জনা সংগ্রহের জন্য অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিল বা চার্জ প্রদান না করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
গুলশান এলাকার অধিবাসীরা জানান, গুলশান সোসাইটির এ নোটিস গত ৮ মাসেও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আসলে আমরা সবাই ময়লা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
আবর্জনার ভাগাড় ঢাকা
পুরো ঢাকা শহরই এখন একটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে— বেশ আক্ষেপের স্বরে এ কথা বলেছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে যেদিকেই যাবেন, ময়লা-আবর্জনা আর বর্জ্য ছাড়া ভালো কিছু চোখে পড়বে না।
রাজধানীর পুরান ঢাকা হিসেবে পরিচিতি ওয়ারী, ইসলামপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে সড়কের মোড়ে মোড়ে ময়লার ভাগাড়। নতুন ঢাকা হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল, কারওয়ানবাজার ও শ্যামলীসহ আশপাশের আরো কিছু এলাকা ঘুরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
এ জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ন ও নগরের ধারণক্ষমতার চার গুণের বেশি মানুষের বসবাসকে দায়ী করছেন নগরবিদরা। তাদের মতে, একটি আধুনিক শহর বা নগর গড়ে তোলার জন্য যেসব পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, ঢাকার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি।
সাঈদ খোকনের মশকরা
ময়লা, আবর্জনা ও বর্জ্য নিয়ে ঢাকাবাসীর দুঃখ-কষ্টকে অনেকটা মশকরা হিসেবে নিয়ে ‘গিনেস বুক রেকর্ড’ নাটক খেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন। ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার মেয়র থাকাকালে সাঈদ খোকন গুলিস্তানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীকে লুঙ্গি পরিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেন।
এর কয়েক মাস পর সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন ‘পরিচ্ছন্নতার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড জয় করেছে।’ তিনি এ সংসক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড নগর ভবনের উপরে ঝুলিয়ে দেন। সাঈদ খোকনের বিদায়ের পর আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও পলাতক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ সাইনবোর্ড খুলে ফেলে দেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সাঈদ খোকনের এ অভিনব রেকর্ড নিয়ে বেশ উপহাসও করতেন। নগর ভবনের কর্মকর্তারা জানান, সাঈদ খোকন যখন ওই বিলবোর্ডটি টানান তখনও নগর ভবনের চারপাশসহ গোটা গুলিস্তান এলাকা ময়লা-আবর্জনায় ভরা ছিল।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও যুক্তরাজ্যের রয়েল কেমিক্যাল সোসাইটির ফেলো, পরিবেশবিদ ড. শফি মুহাম্মদ তারেক একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, এলাকাভিত্তিক ভ্যানগুলো একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের জন্য মাসিক অর্থ নেয়, যার কারণে অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার এ সুবিধা নিতে পারে না এবং বাধ্য হয়ে আশপাশে বর্জ্য ফেলে। এ সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন যদি নিজ উদ্যোগে এ ভ্যান ব্যবস্থা সরকারিভাবে পরিচালনা করে এবং মাসিক খরচ সবার জন্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে তবে তা দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্যও সুবিধাজনক হবে। এ ছাড়া আশপাশে বর্জ্য ফেলার জন্য জরিমানা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যা মানুষকে বর্জ্য সঠিক স্থানে ফেলার জন্য উৎসাহিত করবে।’
সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বলেছেন, ‘প্রতিটি বাসাবাড়িতে আলাদা আলাদা কনটেইনার সরবরাহ করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এটি পরবর্তী সময়ে পৃথককরণের কাজে সহায়ক হবে এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাত বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনা আরো সহজতর করবে। ইঞ্জিনিয়ার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন ল্যান্ডফিল তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে সেখান থেকে নির্গত দূষণ পরিবেশের ক্ষতি না করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এ ল্যান্ডফিলগুলোয় গ্যাস ও লিচেট সংগ্রহের আধুনিক ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার, যা পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি শক্তি উৎপাদনেও সহায়ক হবে।