
সরকারি তিতুমীর কলেজের মূল ফটকের পূর্ব পাশে রাস্তা পারাপারের জন্য রয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। দিনে এটি কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ব্যবহার করেন। তবে দিনের আলো ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গেই মাদকসেবীদের দখলে চলে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জায়গাটিতে যেন অচেনা ও অনিরাপদ এক পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন পথচারী ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ফুটওভার ব্রিজটির নিচে মল ও মূত্র ত্যাগের কারণে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র দুর্গন্ধ, যা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে সবার।
পথচারীদের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা কলেজসংলগ্ন এ ফুটওভার ব্রিজে আড্ডা ও প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। ফলে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয় এ সড়ক ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীদের।
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে ফুটওভার ব্রিজের ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। এ কারণে স্থানটিতে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। ফলে পথচারীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। বিশেষ করে নারীদের জন্য সন্ধ্যার পর অনিরাপদ হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে সন্ধ্যার পর এটি এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে দেখা যায়।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, এশার নামাজের পর এখানে নিয়মিত মাদকসেবীরা আড্ডা দেয়। ১৫-১৬ জনের একটি গ্যাং ভাগ হয়ে এসে এখানে জড়ো হয়। সেনাবাহিনী কয়েকবার তাদের পিটিয়েছে, তারপরও তারা এখানে এসে গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা কলেজ প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু তারা জানিয়েছে, এটি তাদের দেখার বিষয় নয়। এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে পড়ে।’
সন্ধ্যার পর সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যে একদল যুবক গাঁজা সেবন করছে। একটু দূরেই আরেকদলকে সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত দেখা যায়। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী দুই তরুণ-তরুণী নিরাপত্তার কারণে ফুটওভার ব্রিজ থেকে সরে যান। এটি তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের প্রতিদিনের চিত্র। এছাড়াও ফুটওভার ব্রিজের ওপর সিগারেটসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের পরিত্যক্ত অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরে ফুটওভার ব্রিজের ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। এ কারণে স্থানটিতে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। ফলে পথচারীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। বিশেষ করে নারীদের জন্য সন্ধ্যার পর অনিরাপদ হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে সন্ধ্যার পর এটি এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হতে দেখা যায়।
কলেজসংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যে মাদক সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এটি প্রথম জানলাম। এখন থেকে সন্ধ্যার পর কলেজের সামনের ফুটওভার ব্রিজে পুলিশ টহল দেবে।’
এর আগে ফুটওভার ব্রিজে তিতুমীর কলেজের আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘কাকা বাহিনী’র সদস্যদের প্রকাশ্যে মাদকসেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনা ঘিরে কলেজে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।
ফুটওভার ব্রিজের নিচে টঙ দোকান চালানো এক দোকানি বলেন, রাতে কিংবা কখনও কখনও দিনে কিছু লোক ব্রিজের ওপর বসে মাদকসেবন করে। এড়াছাও ব্রিজের নিচে কেউ কেউ প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করে। এতে পরিবেশ নোংরা হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দোকানের পণ্য চুরির করে নিয়ে যায়।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম শিহাব বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ফুটওভার ব্রিজে বিভিন্ন ধরনের লোকজন জড়ো হয়ে মাদকসেবন করে, যা পথচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। আমরা চাই, কলেজ প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।’
কলেজে একটি নিরাপত্তা রক্ষা কমিটি থাকলেও তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের ভাষ্য, কলেজ গেটের বাইরে নিরাপত্তা দেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
কলেজের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান নিরাপত্তা রক্ষী মো. আলী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব কলেজ গেটের ভেতরে সীমাবদ্ধ। গেটের বাইরে বা কলেজসংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। এটি সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমেদ’র সঙ্গে মোবাইল ফোন যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।