গ্রামের নাম পরমানন্দপুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার হাওর ও নদীবেষ্টিত ফতেপুর-পরমানন্দপুর-বরইচারা গ্রামীণ রাস্তার ওপর অবস্থিত গ্রামটি। নামের মতো পরম আনন্দে নেই গ্রামের মানুষজন। সে কথাই যেন জানান দিচ্ছে গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছিফা খালের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা জরাজীর্ণ এক সেতু। ৩০ বছর আগে নির্মাণ হয়েছিল সেতুটি। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর সুফল কখনো ভোগ করতে পারেনি পরমানন্দপুরের বাসিন্দারা। শুধু পরমানন্দপুরই নয়, সেতুটির আশপাশে আছে আরও চারটি গ্রাম। পাঁচ গ্রামে মোট ২৫ হাজার মানুষের বাস। এই ২৫ হাজার মানুষের ৩০ বছরের দুঃখ-দুর্ভোগের প্রতিমূর্তি হয়েই যেন দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ অকেজো সেতুটি।
জানা যায়, শুকনা মৌসুমে পাকশিমুল ইউনিয়নের ফতেপুর, পরমানন্দপুর, হরিপুর, ষাটবাড়িয়া, বরইচরা এই পাঁচ গ্রামের ২৫ হাজার লোকের ইউনিয়ন সদর ও অরুয়াইল বাজার, অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ, অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পাকশিমুল হাজী শিশু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-পরমানন্দপুর-বরইচারা। এই সড়কের মাঝেই সেতুটির অবস্থান। কিন্তু অকেজো হয়ে পড়ে থাকার কারণে বর্ষাকালে নৌকাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন।
স্থানীয় এবং উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পরমানন্দপুর গ্রামে ১৯৯৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২-এর আওতায় সাত লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এ সেতু নির্মাণের পর এর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও তা হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সংযোগ সড়কহীন সেতুটির বিভিন্ন স্থানে রড বের হয়ে গেছে। সেতুর পাটাতনের পলেস্তারা খসে পাথর বের হয়ে গেছে। সেতুর নিচ দিয়ে ধানক্ষেতের কাদা-মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করছে মানুষ। এ সময় কথা হয় ফারুক মিয়া নামে এক কৃষকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ব্রিজডা ৩০ বছর আগে হইছে। কিন্তু আমরার কোনো কামে লাগে না। বর্ষা মৌসুমে পানির তলে থাহে আর শুকনা মৌসুমে ব্রিজের গোড়ায় মাডি থাহে না।’
ইউনিয়ন সদর থেকে বাড়ি ফেরার পথে সেতুর পাশে দেখা হয় আসমা বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে অসুস্থ রোগী বিশেষ করে গর্ভবতীদের হাসপাতালে নিতে হলে ভেলাতে করে নিতে হয়, সময় মতো না পৌঁছার কারণে অনেক সময় রোগী মারা যায়। বৃষ্টি-বাদলের দিনে বাজার হাটে যাওয়া বন্ধ হয়ে পড়ে। তখন ঘরে চাল-ডাল যা থাকে, তা খেয়েই থাকি।
গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, অরুয়াইল বাজার তাদের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। কৃষিনির্ভর এ এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য ঘাড়ে-মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে অরুয়াইল বাজারে যাতায়াত করেন। সেতু থাকলেও সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তারা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মাসুক মিয়া বলেন, অরুয়াইল যাতায়াতের জন্য আমাদের কোনো পাকা সড়ক নেই। রাস্তাটির উন্নয়ন না হওয়ায় ব্রিজটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যুগ যুগ ধরে কষ্ট করছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান বলেন, সেতুটি বহু বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এটি ব্যবহারের উপযোগী আছে কি না, তা দেখতে হবে। ওই এলাকায় সড়ক নির্মাণের জন্য ৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগ
প্রক্রিয়া চলছে।