Image description

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার একটি বড় কারণ হিসেবে চাঁদাবাজির কথা বলছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করতো তাদের পাশাপাশি রাজনীতিতে যারা জায়গা দখলের চেষ্টায় আছে তাদের লোকজন চাঁদাবাজি করছে এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য চাঁদাবাজরাও সক্রিয় আছে।

নির্বাচিত সরকার আসার আগে এটার পুরোপুরি সমাধান কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির

সাক্ষাৎকারে তিনি বাজেট, ব্যাংক, আয়কর এবং পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

বিবিসি বাংলা: কেমন আছেন আপনি?

অর্থ উপদেষ্টা: ভালোই।

বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের তো ছয় মাস হলো। আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিলেন। এই ছয় মাসে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

অর্থ উপদেষ্টা: আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম অর্থনৈতিক খাতে অনেক ক্ষত ছিল, সমস্যাগুলো বহু ধরনের। প্রথমত ব্যাংকি খাতে যে অনিয়ম, পৃথিবীর কোনও দেশে ব্যাংকিং খাতে এ রকম দুরবস্থা হয়নি। অর্থ চুরি হলো, অসংখ্য ঋণখেলাপি। দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং নীয়মনীতি ভাঙা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অনিয়ম হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: গত ছয় মাসে একটি বড় ইস্যু বারবার সামনে এসেছে, তা হলো মূল্যস্ফীতি। গত তিন মাসেও মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি আপনারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না কেন?

অর্থ উপদেষ্টা: মূল্যস্ফীতি এখানে লিগ্যাসি প্রবলেম। গত দুই-তিন বছরে ধরে মূল্যস্ফীতির এই রকম অবস্থা হয় নাই। দেয়ার আর লট অব মানি প্রিন্টটেন্ড, লট অব মানি ফ্লটিং অ্যারাউন্ড (প্রচুর আয়-উপার্জন হয়েছে, অনেকে টাকা উড়ে বেড়িয়েছে)। দ্য বিগ মেগা প্রজেক্টস, কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টস। মেগা প্রজেক্টর সমস্যা হলো, রিটার্ন আর আউটফুট দ্রুত আসে না। ব্রিজ হলো, সরবরাহ চেইনে তো দ্রুত কোনো প্রভাব নাই। অ্যাট দ্য সেম টাইম, রেমিট্যান্স অনেকটা কমে গেল।

এর ফলে মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব।

সাপ্লাই চেইন ইজ ব্রোকেন। আর অনেক মিডল ম্যান। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমে নাই।

বিবিসি বাংলা: চাঁদাবাজি কমানোর দায়িত্ব তো আপনাদের মাঝেই পড়ে।

অর্থ উপদেষ্টা: আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জোর করে লোকজনকে ধরে…। এর আগে যেমন চাঁদাবাজি কম হতো। কারণ রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নাই। ইউ নো দ্য লিমিটিশেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, একজন দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে… (আওয়ামী লীগের); দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং…মাঠপর্যায়ে আছে, তারাও চাঁদাবাজি করছে; তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলা: আপনি যেটি বলছিলেন, পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজির ইস্যুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছিলেন, রাজনৈতিক দল আসার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না? বা রাজনৈতিক দল কেন এটি নিয়ন্ত্রণে আনবে?

অর্থ উপদেষ্টা: রাজনৈতিক দলের তো ভোটের দিকে নজর থাকে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। বড় রাজনৈতিক দল যাদের একেবারে মাঠ পর্যায়ে কর্মী আছে, তাদের তো নিয়ন্ত্রণ করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়ছে।

দ্বিতীয়ত দুর্যোগের বিষয়টিও, কুমিল্লায় যেমন বন্যা হলো, শেরপুর-ময়মনসিংহে অতি বৃষ্টি হলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন তো হয়েছি। তাই এখনও মুল্যস্ফীতি অনেক বেশি।

বিবিসি বাংলা: সে সমস্যাটার কথা বলছেন, এটা কি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত সমাধান হবে না?

অর্থ উপদেষ্টা: আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারবো। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব। পাঁচ তো আদর্শিক অবস্থান।

বিবিসি বাংলা: এই দ্রব্যমূল্যের জন্য গত সরকারের আমলে বারবার সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে। আপনি বলছিলেন, মিডল ম্যানের কথা। অলিগার্কের কথা বলা হয়েছে, তাদের হাতে সরবারহ চেইন চলে গিয়েছে। আপনিও অনেক সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, আপনারা তো এই চেইনটা ভাঙতে পারছেন না। এর কারণটা কী?

অর্থ উপদেষ্টা: ভাঙতে চেষ্টা করছি। আমাদেরকে এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যারা কিনা পর্যাপ্ত নয়। টিসিবি কার্ড দিয়ে বা ডেপুটি কমিশনার, ইউএনও দিয়ে তো মার্কেট কনট্রোল করা যাচ্ছে না। তারা একবার গেলো, পরে চলে এলো। মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে।

আমি ডেটা সংগ্রহ করছি, মহাস্থানগড় থেকে শুরু করে কুমিল্লার কংশনগরে ফুলকপি কত টাকা বিক্রি হচ্ছে। ওখানে বিক্রি হচ্ছে ১০টাকায়। ১০টাকা না, দুই-তিন টাকায়ও পাচ্ছে। ঢাকায় ২০ টাকায় কিনছেন। আমরা ওদিকে (প্রান্তিক পর্যায়) দামটা বাড়িয়ে দিই, কৃষক তো ভুগছে।

খুবই সত্য যে, পুলিশ আগের মতো সক্রিয় না। তাদেরকে নানা কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যেমন বাজারে যাও, ধরে নিয়ে আসো।

 অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
ছবির ক্যাপশান,অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

বিবিসি বাংলা: আপনারা দায়িত্বে আসার আগ থেকে খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বিশাল একটা সমস্যা। একদিকে যেমন বিশাল বিশাল ঋণখেলাপি হয়ে রয়েছে, অন্যদিকে ছোট উদ্যোক্তারা বা উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গিয়ে তারা পান না। কিন্তু এই যে খেলাপি ঋণ এটি উদ্ধারে আপনাদের খুব বেশি উদ্যোগ দেখা যায়নি, এখন পর্যন্ত।

অর্থ উপদেষ্টা: এটা রিয়েলি একটা প্রবলেম। খেলাপিঋণের কারণে যেটা হয়েছে, যারা বড় বড় খেলাপি তারা পালিয়ে গেছে, ধরা যাচ্ছে না, ওদের অ্যাসেটও কিন্তু খুব বেশি না। এই যে কালকে একটা মিটিং করলাম, বেক্সিমকো, আমরা সবসহ খুঁজে পেয়েছি চার হাজার ৫০০ কত কোটি টাকার যেন সম্পদ।

তারা জনতা ব্যাংক থেকেই নিছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। আমি এখন ব্যাংককে প্রশ্ন করেছি, কোনো ধরনের মূল্যায়ন ছাড়া তাদেরকে কীভাবে এত টাকা দেয়া হলো?

যেসব ঋণ ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম, সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলোকে হয়তো একপাশে রাখা হবে, বাকিগুলোর ব্যাপারে বিশেষ করে বড়গুলোর জন্য, যারা দেশে আছে তাদের জন্য বিশেষ একটি কমিটি করা হয়েছে।

ধরেন, তারা এখন একটি-দুইটি হাউজের জন্য খেলাপি, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে আমরা তোমাকে রিগুলেরটি ফোর-বি এনে দিবো। চারটা ইউনিট আছে, দুইটার জন্য সিআইবিতে তোমার ইস্যু হয়েছে, আমরা তখন বলছি যে তুমি ঋণ দিতে থাকো।

এজন্য এখন দরকার অর্থ, ফান্ড। এটি কোথা থেকে আসবে? ইতোমধ্যে আমরা ছয়টা ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছি — কিছুটা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে এবং কিছুটা ফান্ড দিতে।

তারপরে এখন আমরা কী করছি? ভালো কয়েকটি ব্যাংক (বেসরকারি) আছে, তাদেরকে ১ বিলিয়ন ডলারের গ্যারান্টি দেবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।

বিবিসি বাংলা: দুর্বল ব্যাংককে কি দেবে?

অর্থ উপদেষ্টা: না, তারা দেবে না। ওরা দেবে এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএ...

বিবিসি বাংলা: তাদের তো সমস্যা নেই।

অর্থ উপদেষ্টা: ওরা ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে পজেটিভ। তাদের যে বিশাল পোর্টফোলিও তার মধ্যে এখনও মোটামোটি কিছু কিছু পোর্টফোলি গুড ওয়ার্ক। আর অন্যান্য যে ছোট ছোট ব্যাংকগুলোর প্রবলেম আছে, সেগুলোকে আমরা কিছুটা ফান্ড দিচ্ছি। এটার মাধ্যমে আমরা কিছুটা ইউজ করছি আরকি।

বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে ব্যাপকহারে অনুোমোদন দেয়া হয়েছিল, তার আগেও হয়েছে, এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। একইসাথে সমালোচনা হয়েছে টাকা ছাপিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে। এখন ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে এক ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ কাজটা আপনারা কেন করলেন?

অর্থ উপদেষ্টা: আমাকে টাকা দিতেই হয়েছে, এটা কিন্তু প্রিন্ট না। এটা নিউট্রালাইজড হয়ে গেছে। দিজ ইজ নট প্রিন্ট, হার্ড ক্যাশ। দিজ ইস বেসিক্যালি ইন টার্মস অব ট্রেজারি বিলস অ্যান্ড ট্রেজারি বন্ড। এটি একেবারে শতভাগ ক্যাশ টাকা না, ১০০ টাকা ছাপালে ৫০০ টাকা হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে এই মুহূর্তে বড় ঋণ নিচ্ছে না। এর আগে কিন্তু ৬০ হাজার কোটি টাকার ওইটার বেশিরভাগ কিন্তু সরকার নিয়েছিল। আর আমার ২২ হাজার কোটি সরকারকে দিই নাই। বেসরকারি খাতে দিয়েছি। অ্যান্ড দেয়ার প্রডিউসিং সামথিং। সো দ্যাট ইজ নট কমপ্লিটলি পিউর মানি ক্রিয়েশন। যেটা আমরা বলি যে, স্ট্রেলাইজেশন, আমরা টাকা ছাপাচ্ছি, কিন্তু স্ট্রেলাইজ করছি। কিছু কিছু লিকুইডিটি আবার কনট্রোল করছি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমান সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে

বিবিসি বাংলা: মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে আরেকটু আসি। যেখানে কি না উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেশ উচ্চ, এর মাঝখানে আপনারা কিছু পণ্যে নতুন করে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা কেন, এতে তো মানুষের খরচ বাড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা: আমরা যেগুলো ভ্যাট বসিয়েছি, কয়েকটি পণ্য ছাড়া বাকিগুলোতে ইমডিয়েটলি লোকের মূল্যস্ফীতি, বাজেট এসেছে, তা না।

বিবিসি বাংলা: অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। যেমন ফলের দাম বেড়েছ, বেকারিতে বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে গেছে...

অর্থ উপদেষ্টা: ফর এক্সাম্পল, বাংলাদেশে প্রতি প্রাউন্ডের একটা বিস্কিটের দাম ২০০ টাকার উপরে হলে... ইউসুফ বেকারির বিস্কিট তো ২০০টাকা দিয়ে কেনেন না, ৪০-৫০ টাকা দাম।

আমার আর্গুমেন্টটা হলো, বাংলাদেশ ইজ এ মোস্ট লিস্ট ট্যাক্সড কান্ট্রি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। এমনকি ভুটানের তুলনায়ও। যাস্ট রেট ইনকাম ট্যাক্স অনুযয়ী আমরা বাড়াবো না তা তো না।

এখনও তো বাকি আছে, এটা তো অনলি ভ্যাট, কেবল ১২ হাজার কোটি টাকার একটা ... টার্গেট তো কয়েক লাখ কোটি টাকার রেভিনিউ। তাই ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে আমরা রেশনালাইজড হতে চাই। পৃথিবীর কোনো দেশে ভ্যাট দুই দশমিক চার, পাঁচ, সাত, সাত দশমিক পাঁচ এ রকমও না।

বেশিরভাগ দেশে ন্যূনতম ভ্যাট ১৫ শতাংশ। আমরা ভাবছিলাম, পাঁচ যেগুলো আছে দশ করি, সাড়ে দশ করি। অলরেডি কয়েকটা পণ্যে আছে। এজন্য আমরা কিছুটা রেশনালাইজড করতে চেয়েছি। আর আমি চেষ্টা করবো, বাজেটে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা কমাতে।

যেহেতু এটি সাধারণ মানুষের ওপর বেশি... পণ্যের ওপরে.. আমি অন্যদিকে জোর দিবো, ইনকাম ট্যাক্স আছে।

বিবিসি বাংলা: আপনি আয়কর আদায়ের কথা বলছিলেন, বাংলাদেশে আয়কর আদায়ের বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, আয়কর দাতার সংখ্যা কম। আপনি বলছিলেন যে, আনুপাতিক হারে খুবই কম। কিন্তু অন্যদিকে আরেকটা বিষয় আছে। যারা নিয়মিত আয়কর দিচ্ছেন এবং সঠিকভাবে দিচ্ছেন, তাদের ওপর বছরের পর বছর বোঝাটা বেড়েছে, বিশেষ করে প্রভাবটা পড়ছে চাকরিজীবীদের উপরে।

যেমন গতবছরও সর্বোচ্চ আয়কর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে, চাকরিজীবী আয়কর দাতাদের ওপর বোঝাটা বাড়ছে। কিন্তু আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ছে না। এইখানে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন, সেটা কমানোর কোনো চিন্তা আছে নাকি আরও বাড়াবেন?

অর্থ উপদেষ্টা: আমরা অবশ্যই ট্যাক্স নেটটা (করজাল) বাড়াবো। প্রথমত, ট্যাক্স লিকেজ হয়, যারা ট্যাক্স দেয়ার কথা, যত টাকার দেয়ার কথা, তা দেয় না। কারণ, তারা টেবিলের নিচে সেটেল করে। এটা আমাদের কর সংগ্রহে বড় একটি দুর্বলতা। যতটা আমরা ধারণা করি, দেয়ার কথা, তারা ততটা দেয় না। আমরা এনবিআরকে ডিজিটাইলাইজড করার চেষ্টা করছি। এবার যেমন আমরা ১২ লাখ (অনলাইনে রিটার্ন) পেয়েছি।

ব্যক্তিগত আয়করটা আমরা অনলাইন করেছি, কোম্পানিটা এখনও করা হয়নি, এটা করতে আরও সময় লাগবে। কোম্পানিরটা জটিল। এটা করলে কারও কাছে আর যেতে হচ্ছে না, তাই এখানে দুর্নীতিটা কম হবে।

আরেকটা বিষয় স্পর্শকাতর, অনেক সময় এক্সেস ট্যাক্স দেয়, রির্টানটা পায় না। অন্য দেশে বেশি ট্যাক্স দিলে রিটার্ন আসে, বলা হয় আপনি এত টাকা বেশি দিয়েছেন। পরে এটা এডজাস্ট করা হয়।

আমাদের এখানে অথরাইজড ভ্যাটের বেলায় পায়, অন্যরা পায় না। এজন্যই তো ছোটখাটো মিষ্টির দোকান পর্যন্ত বলে, আমরা দিবো? রুটি পর্যন্ত আসার আগ পর্যন্ত আটা-ময়দায় দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার কাছ থেকে সব আদায় করছে। সেটা হচ্ছে না, এটা একটা প্রবলেম।

অলরেডি কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে, করনীতি ও কর প্রশাসন আমি আলাদ করে দিচ্ছি। এনবিআর কেবল কর সংগ্রহ করবে। অ্যান্ড পলিসি ইজ ইউল বি ডান বাই ডিফারেন্ট বডি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

২০০৮ সালে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা হবে। কিন্তু এটা হয়নি। কারণ, এনবিআর অফিশিয়ালস এটিকে এলাউ করেনি। বলে কি, আমরা নিজরাই পলিসি করব...

নিজেরা যদি পলিসি করি, ওটা আমার মন মতো করে করবো। একজনের ওপর ট্যাক্স চাপাবো, এটা এডজুডিকেট আমি করবো, রাইট অর রং। সেটা তো হয় না। পলিসি যারা করবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

এটা করলে সুবিধা হবে কী তখন, ব্যবসায়ীরা বলছে, এনবিআরের কাছে আমার ধর্ণা দিতে হয়, টাক্স আরো কমান। এখন থেকে আপনারা আমাদেরকে পলিসি দিয়ে দিবেন, আমার সেটি ফলো করবো। তখন কর সংগ্রহাকরী আমাকে ডিসক্রিশিয়নারি কিছু করতে পারবে না। দিজ ইজ দ্য পলিসি, দিজ ইজ দ্য রেট।