Image description

আট পরিচালকের অনাস্থা, ক্রীড়া উপদেষ্টার খাতায়ও তিনি ‘নন-পারফরমার’। তাতে হঠাৎই বদলে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটের দৃশ্যপট। ফারুক আহমেদকে সরিয়ে নতুন বিসিবি সভাপতি করা হলো আমিনুল ইসলামকে। তারেক মাহমুদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, তাঁর অপসারণে আগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বোর্ডেরও ভূমিকা থাকতে পারে।

প্রশ্ন

আপনাকে যারা বিসিবি সভাপতি বানাল, মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তারাই আপনাকে সরিয়ে দিল। আপনার কাছে এটা কতটা স্বাভাবিক?

ফারুক: খুবই অস্বাভাবিক। একটা জিনিস বুঝতে হবে, আমি এসেছি দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর। ৫ আগস্ট সরকার পতন হলো, ছাত্র-জনতার বিজয় হলো। ৮ তারিখে নতুন সরকার গঠিত হলো। আর আমি প্রথম ফোন পেলাম ১৩ তারিখ রাতে, ২১ তারিখে সভাপতি হলাম। আমি এ ব্যাপারে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বা অন্য কাউকেও ফোন করিনি, কাউকে দিয়ে তদবির করানোরও চেষ্টা করিনি। যখন সভাপতি হলাম, বোর্ডের অনেক পরিচালকই তখন লুকিয়ে, ১৫ জনই নেই। যে ১০ জন ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২ জনকে পরিবর্তন করে এনএসসি আমাকে আর নাজমূল আবেদীন ফাহিমকে বোর্ডে আনল। তখন বোর্ডের বেশির ভাগ পরিচালক, অর্থাৎ আটজনই কিন্তু আগের। কাজেই আমার খুব ভালো সময় কাটেনি বোর্ডে। এত অসহযোগিতা! প্রতিটা পদে পদে বাধা।

প্রশ্ন

কেন তাঁরা আপনাকে সমর্থন করেননি?

ফারুক: আমার মনে হয়, তাঁরা আমাকে সভাপতি হিসেবে নিতে পারছিলেন না। বাইরের কিছু বিষয়ও হয়তো ছিল। তাঁদের যে ‘বস’রা ছিলেন, আগের বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, খুবই প্রভাবশালী একজন পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক, এখন যাঁরা আছেন, তাঁরা কিন্তু তাঁদের সাথেই ছিলেন। এ–জাতীয় লোকদের আমরা এখন ফ্যাসিস্টের দোসর বলি আরকি! তাঁরা আগে বোর্ডের সবকিছু অনুমোদন করেছেন, কোনো কিছুতে প্রতিবাদ করেননি। এ কারণে আগের বোর্ডের প্রভাবশালীরা যা করতে চেয়েছেন, করতে পেরেছেন। তো আমি এই ফ্যাসিস্টের দোসরদের সঙ্গে বোর্ডে ঢুকে গেলাম। আমাকে এখন যে পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে, এটা অবশ্যই আমার জন্য ডিসরেসপেক্টফুল। আমাকে উপদেষ্টা সাহেব এনেছেন, ওনার জন্যও এটা খারাপ হয়েছে। কারণ, আমি তো কখনোই বলিনি সভাপতি হতে চাই। আমাকে তাঁরা নিয়ে এসে তারপর আবার বললেন চলে যান আপনি! যে ফ্যাসিস্ট দোসরদের মাঝে আমাকে বসানো হলো, ওনারা সবাই আছেন, আমি রিমুভ হয়ে গেলাম!

প্রশ্ন

আপনাকে সরিয়ে দেওয়ারও বেশ কিছুদিন আগে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলে শুনেছি। তার মানে একটা প্রক্রিয়া চলছিল। আপনি কি এটা বুঝতে পারেননি? আর আপনার কী মনে হয়, কেন আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হলো?

ফারুক: প্রথম কথা হলো, আমার চিন্তারও বাইরে ছিল জিনিসটা। আপনি যদি সময়টা লক্ষ করেন, মাত্র তিন মাস, সর্বোচ্চ চার মাস আছে বিসিবি নির্বাচনের। আমি মনে করি, এটা কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, পরিকল্পনা করেই আমাকে সরানো হয়েছে। শুনেছি, মাসখানেকের বেশি সময় ধরেই প্রক্রিয়াটা চলছিল। ক্লাব পর্যায়ে আমি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অধিনায়ক ছিলাম। জাতীয় দলে ও আমার অধিনায়ক ছিল, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একসঙ্গে খেলেছি আমরা। সো উই হ্যাভ আ লং রিলেশনশিপ। দীর্ঘদিন সে আইসিসিতে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে, তার প্রজ্ঞা আছে। তার সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় আমাকে সরানো হলো, সেটা আমার পক্ষে মানা খুব কঠিন। আমি এটা আসলে অনুধাবন করিনি।

প্রশ্ন

আপনি বললেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ পরিচালকদের নিয়ে আপনি কাজ করেছেন। তাঁরা আপনাকে সহযোগিতা করেননি। কিন্তু ওনারা ক্রীড়া উপদেষ্টাকে যে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন, সেখানে অভিযোগ করেছেন, আপনিই নাকি ওনাদের কাজে লাগাননি। আপনি এককভাবে সব কাজ করতেন…

ফারুক: দেখুন, প্রথম দিকে আমার প্রতি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, কে আমার পাশে বসতে পারবেন, কে পারবেন না, কোন প্রোগ্রামে কে আমার পাশে বসবেন। পাকিস্তানে দুটি টেস্ট জেতার পর চিফ অ্যাডভাইজার আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিলেন। তখন আমাদের সঙ্গে মাহবুবুল আনামেরও নাম ছিল তালিকায়। কিন্তু ক্রীড়া উপদেষ্টাই বললেন ওনার নামটা কেটে দিতে। এই নাম আসার দরকার নেই।

প্রশ্ন

কেন কেটে দিতে বললেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেছেন?

ফারুক: হয়তোবা তিনি ফ্যাসিস্টের দোসর বা এ রকম কিছু। তিনি তখন গুড বুকে ছিলেন না। দুদকে তাঁর নামে মামলাও শুরু হয়ে গিয়েছিল হয়তো। আপনারা জানেন, দুদকে তাঁর নামে চারটা মামলা আছে দুর্নীতির, ওটা একটা কারণ হতে পারে। বিতর্কিত ব্যক্তি। আরেকটা ঘটনা, বাংলাদেশ দলকে আমরা বোনাস দিয়েছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে টেবিলে কে কে বসবেন, সে ব্যাপারেও সরকারের নির্দেশনা ছিল। আমি আর নাজমূল আবেদীন ছাড়া আর কোনো পরিচালককে কিন্তু উনি (ক্রীড়া উপদেষ্টা) চাননি ওই টেবিলে বসার জন্য। আমার কাছে ক্লিয়ার মেসেজ ছিল, আমি কতটুকু তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পারব, কতটুকু পারব না। কিন্তু আমি আর নাজমূল আবেদীন ফাহিম, মাত্র দুজন মিলে তো সব কমিটি চালাতে পারব না। ২৩টি কমিটি, এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি ১০টি। তা ছাড়া ওই সময় তামিম ইকবালের বোর্ডে আসা নিয়েও কথা চলছিল। এটা নিয়েও কালক্ষেপণ হয়েছে। তখন আবার ক্রিকেট অপারেশনসের দায়িত্ব নিয়ে তামিম ও নাজমূল আবেদীন ফাহিমের মধ্যে ছোটখাটো বিরোধ হয়েছে। সব মিলিয়ে অনেকটা সময় চলে গেছে। তার মধ্যেও পরিচালক ফাহিম সিনহাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। কাজ নিতে তিনি আমার পেছন–পেছন ঘুরতেন। ফিন্যান্স কমিটি নিয়ে বলেছিলেন, ‘এই কমিটিটা আমার ভালো লাগে, আমার বাবা ছিলেন এই কমিটিতে।’ ফাহিম লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকলে কাজ করছিলেন আগে থেকেই, পরে বলেছেন, ‘আমি ফাইন্যান্স ভালো বুঝি।’ তারপর বললেন, ‘গেম ডেভেলপমেন্টেও আমার ইন্টারেস্ট আছে।’ আমি বলেছি, ‘আপনি করেন।’ কমিটি গঠন না করেই বলেছি কাজ শুরু করতে, তিনিও কাজ শুরু করেছেন। মহিলা উইং দিয়েছিলাম নাজমূল আবেদীনকে, ক্রিকেট অপারেশনসও। তখনো কমিটি কাগজ-কলমে হয়নি। কিন্তু কেউ না কেউ দায়িত্বে ছিলেন। মাহবুবুল আনাম গ্রাউন্ডসে এখনো আছেন।

প্রশ্ন

কখন প্রথম বুঝতে পারলেন যে বোর্ড পরিচালকেরা সব আপনার বিরুদ্ধে?

ফারুক: বিপিএলের ঠিক আগে থেকে। ওই সময়ই আমি প্রথম বুঝতে পারলাম, অসহযোগিতার মাত্রা কতটুকু। বিপিএল শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে, শুরু করেছি ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে। ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকেই বুঝতে পারছিলাম, তাঁরা আমাকে সাহায্য করছেন না। আগস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর—এই কয় মাস ছাড়া বাকি পুরোটা সময় আমার জন্য দুঃস্বপ্নের মতো গেছে।

প্রশ্ন

ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে বিপিএলে ‘তারুণ্যের উৎসবের’ ভাবনা দেখা যায়নি। সঙ্গে খেলোয়াড়দের টাকাপয়সা নিয়ে অভিযোগ। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

ফারুক: আমরা ভুলে যাচ্ছি, বিপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন একটা দেশ পাওয়ার পর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই। বিপিএলের আগে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। এর মধ্যে খেলোয়াড়েরা আমার কাছে এলেন। অনেক দলের স্পনসর নেই, ফাইন্যান্সার নেই। অনেকের বকেয়া ছিল। এ জন্য কয়েকটা দলকে বাদ দিতে হয়েছে। নতুন দল নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই মিলেই কিন্তু ইন্টারভিউ নিয়েছি, যদিও পরে সবাই অস্বীকার করেছেন যে এটা আমার একক সিদ্ধান্তে হয়েছে। তখন থেকেই আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে তাঁরা আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না, করবেন না। তাই বলে আপনি তো ক্রিকেট বোর্ডের কাজ বন্ধ করতে পারবেন না। এর মধ্যে আমরা মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ করেছি, সহ-আয়োজক দেশ ইউএইতে সেটা হয়েছে। হোমে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ, ইমার্জিং দলের খেলা, সাকিব ইস্যুও ছিল। পুরো সময়টা তাঁরা আমাকে এক শ ভাগ অসহযোগিতা করে গেছেন, যেটা আলটিমেটলি তাঁরা প্রমাণ করেছেন আমার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে অনাস্থা দিয়ে। এরপর যা হলো, আমি বলব, এত দ্রুততম সময়ে এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে আমি আমার জীবনে দেখিনি। আপনি একজন নির্বাচিত সভাপতির বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ দেবেন আর তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অপসারণ করবেন, এটা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এনএসসি আমাকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে, কিন্তু আমি তো পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। পদত্যাগ না করলে আমাকে সরাতে পারে না। বুধবার আমি জানলাম আমাকে কন্টিনিউ করতে চায় না, তখনো আমাকে পরিষ্কার করে পদত্যাগ করতে বলেনি। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় আমার কাউন্সিলরশিপ বাতিল হলো। ১২টায় নতুন কাউন্সিলরশিপ হলো। শুক্রবারে তিনটা-চারটার মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল। মাঝখানে কিন্তু ২৪ ঘণ্টা সময়ও যায়নি।

প্রশ্ন

মাঠের খেলায় দল খারাপ খেলছে, এটার দায়ও আপনাকে দেওয়া হয়েছে। আপনি এখানে কীভাবে দায়ী হতে পারেন বলে মনে হয়?

ফারুক: জানি না কীভাবে এটা সম্ভব! চার-পাঁচজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় এখন নেই। দলটা পুনর্গঠিত হচ্ছে। আর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আমরা তো কখনো শক্তিশালী নই। আমার মনে হয়, যদি ষড়যন্ত্র না হতো, মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে আর যে কারণগুলো বলা হচ্ছে, কোনোটার কারণেই আমাকে সরানো হতো না। উপদেষ্টা মহোদয় নিজের মুখে বলেছেন, দুর্নীতির কোনো বিষয় আমার বিরুদ্ধে নেই। একটা ব্যাপারে অন্তত ক্লিনশিট পেয়েছি ওনার কাছ থেকে যে দুর্নীতির অভিযোগ উনি বিশ্বাস করছেন না।

প্রশ্ন

আপনি বলেছেন, আপনার ওপর নির্দেশনা ছিল, কিছু বোর্ড পরিচালককে আপনি যেন দূরে রাখেন বা বোর্ডের কাজে তাঁদের কম সম্পৃক্ত করেন। নির্দিষ্টভাবে কাদের নাম বলা হয়েছিল?

ফারুক: পুরোনোদের মধ্যে ফাহিম সিনহার নাম বলেনি। আর নাজমূল আবেদীন তো নতুন। স্বপন আর মঞ্জু আসলে খুব বেশি ইনভলভ ছিলেন না আগেও। এ ছাড়া যাঁরা ছিলেন, সবার ক্ষেত্রেই বলেছে যে রিজার্ভেশন আছে মন্ত্রণালয়ের। তবে আমি জানি যে ইনাম খুব ভালো কাজ করতে পারেন, সালাহউদ্দীনও ভালো কাজ করেছেন। আমাকে বলা হয়েছিল, ফাহিম সিনহা, নাজমূল আবেদীন ফাহিম আর আপনি মিলে কাজ করেন। বাকিদের ‘সাইডে’ রাখার জন্য বলা হয়েছে।

প্রশ্ন

আপনি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাব আনায় মাহবুবুল আনাম, ইফতেখার রহমান ও ফাহিম সিনহার বেশি ভূমিকা ছিল। নির্দিষ্টভাবে এই তিনজনের নাম কেন বললেন?

ফারুক: (হাসি) আপনাদের কাছে যে রকম তথ্য আছে, আমারও কিছু ইনফরমেশন আছে। মাহবুবুল আনাম আগে থেকেই আমার পেছনে লেগে ছিলেন। নতুন করে তৈরি হয়েছেন ফাহিম সিনহা ও ইফতেখার রহমান মিঠু। আপনি যদি খতিয়ে দেখেন, এঁদের সবার ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু না কিছু পাবেন। আমিও মোটামুটি শিওর যে এই তিনজনই পুরো অঙ্কটা করেছেন। অথচ ফাহিমকে আমি অনেক দায়িত্ব দিয়েছি। আর ইফতেখারও মিডিয়া এবং আম্পায়ার্স কমিটির দায়িত্বে আছেন। যেহেতু তাঁরা ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে অনেক দিন ছিলেন, আমি চরিত্রটা খুব কাছাকাছি দেখতে পাই। এঁরা অবলীলায় মিথ্যা বলতে পারেন। তাঁদের এই ভয়টাও নেই, মিথ্যাটা যদি ধরা পড়ে যায়! তাঁরা ওই লজ্জাটাও কিন্তু ওভারকাম করে ফেলেছেন। যেটা আমরা গত সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমনকি টপ মোস্ট জায়গা থেকেও দেখতে পেয়েছি। মাহবুবুল আনামের কথাই ধরুন। উনি বলেছেন, উনি জানেন না কীভাবে বোর্ডের ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছে। অথচ ফাহিম সিনহার সঙ্গে উনিই এটার সিগনেটরি! আমি যেদিন প্রেসিডেন্ট হলাম, ওই দিনই বোর্ড সভায় ফাহিম সিনহা সাইনিং অথরিটি হিসেবে ইসমাইল হায়দার মল্লিকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। মাহবুবুল আনাম তো আগে থেকেই ছিলেন। মিথ্যা কথাগুলোকে কীভাবে বারবার বলে বলে সত্যি করার চেষ্টা হচ্ছে, সবাই নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছেন। মাহবুবুল আনাম বলেছেন, সিগনেচার করেছেন, কিন্তু উনি নাকি খেয়াল করেননি! টানা ২৫-৩০ বছর বোর্ডে থেকে এই ধরনের কথা বললে একটা মানুষকে কে বিশ্বাস করবে, আমি জানি না। রুগ্‌ণ ব্যাংক থেকে ফান্ড সরানো হয়েছিল তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই। যে ব্যাংকে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নানাভাবে স্পনসর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রশ্ন

দুদক বিসিবির আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করছে। বোর্ড সভাপতি হিসেবে আপনিও তো অনেক কাগজপত্র নাড়াচাড়া করেছেন এই কয় মাসে। কোনো অনিয়ম কি চোখে পড়েছে? শুনেছি, গত জিম্বাবুয়ে সিরিজের সময় চট্টগ্রামের টিম হোটেলে প্রতি রুমের জন্য আড়াই-তিন হাজার টাকা বেশি দেখানো হয়েছিল, যেটা আপনি ধরে ফেলেছিলেন এবং বিলে সই করেননি। বিষয়টা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন?

ফারুক: জাতীয় দল, ইমার্জিং টিম, ‘এ’ দল, মেয়েদের ক্রিকেট—সব সিরিজে লজিস্টিকসের খরচ কিন্তু প্রায় কাছাকাছি দেখানো হয়। একই গাড়ি, একই খাওয়া, একই সিকিউরিটি, একই হোটেল। প্রতিটা ট্যুরে চার-পাঁচ কোটি টাকার হিসাব দেখানো হয়। আমি নিশ্চিত, এখান থেকে একটা বড় অঙ্কের টাকা সরানো হয়। জিম্বাবুয়ে সিরিজের ঘটনাটা যদ্দুর মনে করতে পারি, রুমপ্রতি সাড়ে ১১ হাজার-১২ হাজার টাকা করে বাজেটিং করা আছে। আসলে বিল হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে। প্রতিটা রুমে প্রতিদিন অন্তত দু-তিন হাজার টাকার একটা গ্যাপ আছে। বাসে প্রতি ট্রিপে ১০ হাজার টাকার মতো গ্যাপ আছে। এভাবে প্রতিটি বিষয়েই কমবেশি গ্যাপ আছে। সত্যি বলতে, আমি অন্য অনেক কিছুতে এত ব্যস্ত ছিলাম, এগুলোতে বেশি সময় দিতে পারিনি। বিসিবির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট রাতে বোর্ডের দুজন কর্মচারী বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বোর্ড অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমি জানি না ডকুমেন্ট ছিল, নাকি টাকা। এটা আমার মনে হয় দুদক জানে। তার আগে ফিন্যান্স কমিটির ফাহিম সিনহাকে আমি বলেছি এটা দেখতে। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে, ছেলেটা নাকি কাজে ভালো। আমি বলেছি, হিসাব যদি ঠিকমতো না হয়, তাহলে তো কাজে ভালো হলে চলবে না, আমরা কিছু স্বচ্ছতা আনতে চাই। অথচ তিনি এখনো ওখানেই আছেন।

প্রশ্ন

শুনেছি, ক্রীড়া উপদেষ্টা আপনাকে বলেছেন, সরকারের ওপরমহল চাচ্ছে না আপনি বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যান। আপনার কী মনে হয়, সরকার আপনার ওপর হঠাৎ খেপল কেন?

ফারুক: আমার মনে হয়, যাঁরা দুর্নীতি করেন, তাঁদের গ্রুপিংটা খুব শক্তিশালী হয় এবং তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি একত্র হয়ে যেতে পারেন। কারণ, তাঁদের গোল ‘কমন’। আপনি যখন একটা স্রোতের বিরুদ্ধে একা লড়াই করবেন, তখন তো এসবের সঙ্গে পারবেন না। আজকে যদি আমি পাশে অন্তত তিন-চারজন মানুষও পেতাম, এত কঠিন হতো না আমার জন্য। অন্তত খবর পেতাম, কী হচ্ছে বোর্ডে। যাঁরা এই বিষয়টা মঞ্চস্থ করেছেন, তাঁরা হয়তো সরকারকে বোঝাতে সামর্থ্য হয়েছেন যে বোর্ড যে ঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না, সে জন্য আমি এককভাবে দায়ী। আমার মনে হয়, ক্রীড়া উপদেষ্টা বিষয়টা নিয়ে আরেকটু চিন্তা করলে ভালো হতো। যত দ্রুততার সঙ্গে আমি অপসারিত হলাম, এত দ্রুততার সঙ্গে উনি যদি পাঁচ-ছয় মাস আগে এই তিন-চারজন পরিচালককে বলে দিতেন আমাকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে, তাহলে বোর্ডের জন্য ভালো হতো, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও ভালো হতো। অথচ জিনিসটা বিপরীত হলো। কাজেই এটার কারণ এ মুহূর্তে আমার পক্ষে বলাটা খুব কঠিন। আমি কিছু জায়গায় স্বচ্ছতা আনতে চেয়েছি, সেটা হয়তো একটা কারণ। আপনারা জানেন, বিরাট একটা দুর্নীতি হয়েছে আমাদের থার্ড ডিভিশন কোয়ালিফাইংয়ে, যেটাকে বিসিবির নির্বাচনে আমরা ভোটব্যাংক বলি। গত কয়েক বছরে ১৫টা ক্লাবকে তাঁরা এক শ ভাগ অন্যায়ভাবে ওপরে উঠিয়েছেন। এখন তাঁরা সবাই কাউন্সিলর, ভোটার। আরেকটা হলো আমার সময়ে দুদক বিসিবির বিগত সময়ের অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে, যাতে অনেকের সমস্যা হতে পারে। আমি শুনেছি, যখন দুদক এল, তখন একজন পরিচালক বলেছেন, দুদক যা চাইবে, সব দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমি বলেছি, পুরো সহযোগিতা করো দুদককে।

প্রশ্ন

কোন পরিচালক, নাম বলা যাবে?

ফারুক: মাহবুবুল আনাম বলেছেন যে দুদক যা চাইবে, তা-ই দেওয়ার দরকার নেই। আমরা দেখে দেব। আমি বলেছি, দুদককে সহযোগিতা করা দরকার। বিসিবির দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াইটা ছিল একদম একার। কেননা অন্যরা তো আগেও ছিলেন। তাঁরা হয় দুর্নীতি করেছেন, না হলে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেছেন।

প্রশ্ন

আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনি সভাপতি হয়ে আসায় তাঁদের ওগুলো বন্ধ হচ্ছিল?

ফারুক: বন্ধ হচ্ছিল। টিকিট তো একটা বড় খাত। আগে টিকিট কীভাবে বিক্রি হতো? একটা নির্দিষ্ট ছেলেই ফোনের মাধ্যমে কী কী করত। ব্যাংকে যেত আবার যেত না। আমরা দেখতাম টিকিট বিক্রি হয়েছে, কিন্তু দর্শক নেই। দুর্নীতির পেছনে ছোটাটাই হয়তো আমার জন্য একটা বিরাট কাল হয়েছে।

প্রশ্ন

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। আপনার দাবি, আপনিও ক্রিকেট বোর্ডকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চেয়েছেন। সরকার কেন তাহলে আপনার ভাষায় ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’দের কথাই শুনল?

ফারুক: হয়তো মন্ত্রণালয় ওয়াজ নট ভেরি হ্যাপি। এঁরা কিন্তু এতটা অ্যাকটিভ হননি। পুরো ষড়যন্ত্রটা করেছেন অন্য পরিচালকেরা। আমার মনে হয় বাইরে থেকেও তাঁদের কাছে কোনো নির্দেশনা এসেছে। আমি জেনেছি, দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির খেলার সময় মিঠু (বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান), হয়তো ফাহিম সিনহাও মাঝেমধ্যে ওখানে মিটিং করতেন ইসমাইল হায়দার মল্লিকের সঙ্গে, যিনি সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসানের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মল্লিককে মিঠু একটি ম্যাচের টিকিট দিয়েছেন। তাঁরা একটা অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বারবার, আমি নাকি মল্লিকের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমি এটা করলে তো বোর্ডের বাইরে থাকতাম না, বোর্ডেই থাকতাম (হাসি)! আমার জন্য সবচেয়ে সহজ ছিল মল্লিকের সঙ্গে মিশে যাওয়া। তাহলে আমার ভোটব্যাংকটা ঠিক থাকত, এই পরিচালকেরা টাইট থাকতেন। আমার ধারণা, এখনো মল্লিক এবং আগের বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁদের ভালো যোগাযোগ আছে। তাঁরা পুরো একটা টিম হিসেবে কাজ করেছেন। ফারুক হটাও ছিল তাঁদের মূল এজেন্ডা। কারণ, তাঁদের কাজগুলো তাঁরা ঠিকভাবে করতে পারছিলেন না। ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে তাঁরা এত আক্রমণাত্মক হতেন না।

প্রশ্ন

এমন কি হয়েছে, আপনি সরকারের কারও ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি?

ফারুক: ও রকম করে কেউ আমাকে কিছু বলেননি। আমাদের উপদেষ্টা নিজে তো না-ই। তবে ক্রিকেট বোর্ডে তো সবাই বিভিন্ন কাজ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা অনেক ত্যাগ করেছেন, তাঁদের হয়তো টুকটাক কাজ দিতে হয়েছে। বিপিএলে একটা ছেলেকে ডিজে করার ব্যাপারে আমার কাছে অনুরোধ এসেছিল। আমি তা রেখেছি। তারপর আরও কিছু কাজ, বলার মতো বড় কিছু নয়। দু–একটা ছেলেকে চাকরিও দিতে হয়েছে। ক্রীড়া উপদেষ্টার এপিএস ছিলেন যিনি, ওনার সুপারিশে দুইটা ছেলেকে চাকরি দিয়েছি। খুব বেশি হলে তিনটা কি চারটা ছেলে চাকরি পেয়েছে নতুন।

প্রশ্ন

তার মানে ওনারা টুকটাক যেসব ‘হেল্প’ বা ‘কো-অপারেশন’ চেয়েছেন, আপনি ডিনাই করেননি কোনোটা?

ফারুক: ডিনাই…না, আমার এ রকম মনে পড়ে না।

প্রশ্ন

আপনাকে বাদ দেওয়া এবং আমিনুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া—দুটোকেই আপনি বলছেন অবৈধ। কিন্তু ৯ মাস আগে আপনি নিজেও তো এভাবেই বোর্ডে এসেছিলেন। বৈধতার প্রশ্নটা কি তখনো উঠতে পারত না?

ফারুক: পাপন (নাজমুল হাসান) সাহেব যখন চলে গেলেন দেশ থেকে, তখন তিনি ই-মেইলে বোর্ড পরিচালক ও বিসিবি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। কাজেই একজনকে সভাপতি হতেই হতো, পরিচালকদের ভোটে সেটা আমি হলাম। প্রথমে আমি মনোনীত হলাম এনএসসি থেকে, তারপর সভাপতি নির্বাচিত হলাম নির্বাচিত বোর্ড পরিচালকদের মাধ্যমে, সর্বসম্মতিক্রমে। ‘পদত্যাগের’ বিষয়টা এখানে বড় পার্থক্য। আপনি যদি আরও গভীরে যান, তাহলে হয়তো কিছু অনিয়ম পেতে পারেন। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত ইলেক্টেড অ্যাজ আ প্রেসিডেন্ট। ইলেক্টেড প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘নো কনফিডেন্স মোশনের’ কোনো সুযোগই নেই ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রে। গঠনতন্ত্র এটা অনুমোদন করে না। আপনি এসব নিয়ে যেতেই পারবেন না এনএসসির কাছে। উঠলে তা আপনার বোর্ডেই উঠতে পারে। আর আপনি যখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবেন, তাকে তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এমনকি হাথুরুসিংহেও কিন্তু দুই দিন সময় পেয়েছিলেন শোকজের জবাব দেওয়ার।

প্রশ্ন

আপনি এখন যেটা নিয়ে আদালতে গেলেন, ৯ মাস আগে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও সরিয়ে দেওয়া পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলমও কিন্তু তা করতে পারতেন…

ফারুক: জানি না তখন কী হতো। অবশ্যই তাঁরও সুযোগ ছিল চ্যালেঞ্জ করার। উনি কেন করেননি, উনি ভালো বলতে পারবেন। আমি চ্যালেঞ্জ করেছি; কারণ, খুব পপুলারলি আমাকে আনপপুলার করার চেষ্টা করা হয়েছে। সব সময়ই আমাকে ডিফেইম, ডিমিন করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, আমি আদালতে রিট করেছি, সেটা একটা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। রিটের সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে এলেও আমার আর ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সঙ্গে গিয়ে এই বোর্ডে সভাপতি হয়ে বসার আর ইচ্ছা নেই। আমি নির্বাচনও করব না।

প্রশ্ন

আপনি কি আইসিসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে অপসারণের বিষয়ে জানিয়েছেন বা জানাবেন, যেহেতু আপনি মনে করেন প্রক্রিয়াটা অবৈধ ছিল?

ফারুক: আমি আইসিসিতে প্রথম দিনেই যেতে পারতাম। এটা করিনি; কারণ, তখন আইসিসি থেকে দেশের ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। যেটা আমি একজন সাবেক অধিনায়ক হিসেবে কোনো দিনই চাই না। আমার পদের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক বড়। আমি আবারও বলছি, নির্বাচন করার চিন্তাও আমি আর করছি না। আমি আইসিসিতেও যাইনি। তবে আমি বলে দিতে পারি, যদি এই লোকগুলোর হাত থেকে এই বোর্ডকে রক্ষা করতে না পারা যায়, অনেক এমপ্লয়ি এবং বোর্ড পরিচালক; তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে না। গত ১২-১৩ বছরে খেলোয়াড়দের পাইপলাইন পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। প্রচুর পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং হয়েছে। এই জিনিসগুলো কিন্তু সব এই পরিচালকদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এই গভীর খাদ থেকে বোর্ডটাকে ওঠাতে না পারলে আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুব ভালো কিছু আশা করতে পারব না।

প্রশ্ন

আইসিসি ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে না। কিন্তু বোর্ডে এনএসসি মনোনীত পাঁচজন কাউন্সিলর ও দুজন পরিচালক আসার ব্যবস্থা রেখে বিসিবির গঠনতন্ত্রেই সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ রাখা হয়েছে। আপনি নিজে এভাবে পরিচালক ও সভাপতি হয়েছেন, আমিনুল ইসলামও তা–ই হলেন। আপনার কি মনে হয় না গঠনতন্ত্রে এই সুযোগটা না থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজকের এই সংকটে পড়ত না এবং গঠনতন্ত্র থেকে এটা বাদ দেওয়া উচিত?

ফারুক: এটা খুবই ভালো হতো। হ্যাঁ, এভাবে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি, গঠনতন্ত্র সংস্কার হলে সেখানে এটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কারণ, এই নিয়মটা থাকলে সব সময় এই ‘খেলা’টা চলতেই থাকবে।

প্রশ্ন

যদিও ৯ মাস খুব কম সময়, তবু এই সময় আপনি নিজেকে কোন জায়গায় সফল বলবেন?

ফারুক: প্রথম দুই মাসে যে পদক্ষেপগুলো আমি নিয়েছি বা নিতে চেষ্টা করেছিলাম, তারপর তো আর কোনো কিছু করার সুযোগ ছিল না। দুই মাসের মধ্যে বিপিএল আয়োজন করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। হ্যাঁ, অনেক সমালোচনা আছে। কিন্তু এর মধ্যে টিকিট বিক্রি, দর্শক, উইকেট, প্রোডাকশন—সবই কিন্তু ভালো ছিল। টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার স্টেডিয়ামের চিন্তা না করে আমি চেষ্টা করেছি খেলার জন্য মৌলিক জিনিসগুলো নিশ্চিত করে কিছু মাঠ তৈরি করার উদ্যোগ নিতে। বিসিবিতে মাস্টাররোলে ১১০ জনের চাকরি হয়েছে। অনেক বছর পর বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট দুস্থদের জন্য ট্রাস্ট গঠন করার উদ্যোগের কথা বলতে পারেন। খেলার জায়গা থেকে যদি বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট তো অবশ্যই গত পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে সেরা হয়েছে। তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের অনিয়ম দূর করেছি। এগুলোর ফল আপনি রাতারাতি পাবেন না। তিন-চার বছর পর পাবেন।

প্রশ্ন

আর ব্যর্থতা?

ফারুক: (হাসি) আশপাশে কারা আছেন…মানুষ চিনতে না পারা। তারপরও মনে হয়েছে, আমি আমার কাজটা করে যাই। তাঁরা তাঁদের কাজ করুন। সব সময়ই একটা ষড়যন্ত্র ছিল, যেটা পুরোপুরি সফল হয়েছে গত শুক্রবারে। আমার মনে হয়, এর থেকে আমি বেটার ডিজার্ভ করি। আমাকে মানুষ রাগী বলতে পারে, একরোখা বলতে পারে, কিন্তু কোনো দিন বলতে পারবে না যে আমি অসৎ। আর্থিকভাবে আমার কোনো সমস্যা নেই, যেটা ক্রীড়া উপদেষ্টাও পরিষ্কার করেছেন।

প্রশ্ন

শেষ প্রশ্ন, নতুন বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলামের জন্য কোনো পরামর্শ থাকবে?

ফারুক: আমি চাই যে কয় দিনই থাকুক, আমিনুল ইসলাম তার কাজটা ঠিকমতো করবে। আমাকে যারা ষড়যন্ত্র করে সরিয়েছে, ওরা ওকে সফল করার জন্য হলেও কাজ করবে বলে আমার ধারণা। তবে তিন-চার মাসে তাঁর কাছে আকাশচুম্বী কিছু আশা করাটা ঠিক হবে না। তবে যেটাই সে করুক, তার প্রতি আমার শুভকামনা থাকবে।