Image description
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক | বণিক বার্তা

জাতির এক কঠিন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, যেখানে আগের ফ্যাসিস্ট সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সুতরাং এটি কোনো স্বাভাবিক সরকার নয়। কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে তারা

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নেতাদের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আত্মপ্রকাশ করা এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এখন দলটির সঙ্গেও তিনি আর যুক্ত নন। চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন


অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাস হলো। এ সময়ে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই।


জাতির এক কঠিন সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, যেখানে আগের ফ্যাসিস্ট সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সুতরাং এটি কোনো স্বাভাবিক সরকার নয়। কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে তারা সবকিছুতে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছে। এটি করতে সময় লাগবে। এছাড়া তারা তো পেশাদার রাজনীতিবিদ নয়। এ সরকারের এক-দুজন ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের সরকার পরিচালনার অতীত অভিজ্ঞতা নেই। এ অবস্থায় তারা যা করছেন, তা আমি মোটামুটিভাবে সন্তোষজনকই বলব। যদিও আরো উন্নতির প্রয়োজন আছে। তারা যেন আরো ভালো করতে পারে, সে চেষ্টা তাদেরও করা উচিত।

সংস্কার নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার করা উচিত। আবার অন্য একটি পক্ষ বলছে, যে সংস্কারগুলো না করলেই নয় সেগুলো এ সরকার করে বাকিগুলো নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। আপনি কী মনে করেন?

সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। একটি বিষয়ে আমরা একজন উপদেষ্টা বন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। সেটি হলো একটি নতুন সংবিধান তৈরি করা। দুনিয়ার যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে বিপ্লবের পরপরই একটি নতুন সংবিধান তৈরি হয়েছে। যেমন ফ্রান্স, আমেরিকাসহ অন্যান্য জায়গায় হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এটা হওয়া উচিত ছিল। এখনো আমি মনে করি, সংবিধান হলো একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এ আইনকে পুরনো সরকারগুলো এমনভাবে কাটাছেঁড়া করেছে যে তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এটি আর এখন কার্যকর হচ্ছে না। সুতরাং একটি নতুন সংবিধান আমাদের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আমাদের পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল, তা হয়নি। পুরনো সংবিধানকে বাতিল করার প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।

এখন যেটা হতে পারে যে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন করে অথবা কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান যদি তৈরি করা যায়, সেটি হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার। এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য সঠিক পদক্ষেপ। তারপর হলো নির্বাচন কমিশন। যদি এ দুটি পদক্ষেপ উনারা হাতে নেন, তাহলে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেনটি ট্র্যাকে ফিরবে বলে আমি মনে করি।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংবিধান সংস্কারের সম্ভাবনা কতটুকু আছে বলে মনে করেন?

সেটি করবে বলে মনে হচ্ছে না। বড় রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিন্তু এই যে একটি কনস্টিটিউশনাল ডিক্টেটরশিপ আমাদের দেশে হলো, এর কারণ হলো এ সংবিধান। সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে যা খুশি করা যায়, সেটি তো হতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও এটি নেই। সুতরাং আপনাকে যদি ভবিষ্যতে এ ধরনের ফ্যাসিবাদের পথকে বন্ধ করতে হয়, তাহলে একমাত্র উপায় হলো ফ্যাসিবাদের পথকে বন্ধ করা। বাকিটা রাজনৈতিক দলগুলো করবে কিনা, এটি তাদের ব্যাপার।

আপনার মতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কেমন হওয়া উচিত?

বাংলাদেশ তো একটি সিভিল স্টেট। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। সুতরাং সংবিধানে যেমন তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তেমন থাকতে হবে। জিয়াউর রহমান ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বিষয়টি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছেন। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেগুলো যথার্থ পদক্ষেপ ছিল।

যারাই দেশ ও জাতিকে পরিচালনা করবেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এ দেশের নব্বই শতাংশ মানুষই মুসলমান। ‘ধর্মই রাষ্ট্রের মূলনীতি হবে’—সেটি কেউ বলছে না। কিন্তু ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে যেন আমরা উপেক্ষা না করি। রাষ্ট্র যাতে উপেক্ষা না করে। ইসলাম হচ্ছে সাম্যের ধর্ম। মানুষের অধিকার রক্ষা করার ধর্ম।

সম্প্রতি পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করার মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে পুনঃস্থাপিত হলো। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই।

এটি একটি সঠিক পদক্ষেপ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেন সে সময় এটির ধারাবাহিক প্রভাব উল্লেখ করে আমি একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছিলাম। এবং তা-ই হলো। এ ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করার পেছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে, সেটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা। শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যখন একটি কমিটি করে দিলেন, তখন সে কমিটির সবাই বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা উচিত। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা যিনি এখনো জীবিত আছেন, তিনিও একজন কূটনীতিককে বলেছিলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া একটি দল। এভাবে আমরা ক্ষমতায় আসতে চাই না।’ সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং এটি ‘গণভোট ছাড়া বাতিল করা যাবে না’—এ বিধান নিয়ে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে আমাদের সাংবিধানিক সংকটের অর্ধেক কেটে যাবে বলে আমার মনে হয়।

শিক্ষার্থীরা শিগগিরই রাজনৈতিক দল গঠন করবে বলছে। এ দলের ভবিষ্যৎ কী দেখেন?

আগস্ট বিপ্লবের নেতৃত্ব তো শিক্ষার্থীরাই দিয়েছে। যদিও আপামর জনসাধারণ ছাত্রদের সঙ্গেই ছিল। এ বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ত্যাগ ও কোরবানি সবচেয়ে বেশি। দেশের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আসা দরকার। সুতরাং নতুন প্রজন্ম যদি গুণগত পরিবর্তন রাজনীতিতে নিয়ে আসতে পারে সেটি হবে দেশের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর। বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্বই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। সুতরাং নবীনরা যদি প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিপরামর্শ কাজে লাগায় এবং অতীত থেকে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল না হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। যুক্তরাজ্যেও অনেকে চল্লিশ বছর বয়সের আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ছাত্ররা জুলাই-আগস্টে অসাধারণ কাজ করেছে। তারা যদি সত্যিকার অর্থে প্রস্তুতি নিয়ে রাজনীতিতে নামে, তাদের ভবিষ্যৎ ভালো বলেই আমি মনে করি।

অন্তর্বর্তী সরকারের বেশকিছু উপদেষ্টা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। তাদের নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আমি তো অনেক দূরে থাকি। এগারো বছর ধরে দেশের বাইরে আছি। অনেক কিছুই আমি জানি না। আর আন্দাজ-অনুমানের থেকে কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু একটি বিষয় হলো এ অন্তর্বর্তী সরকারকেও একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যায়। বিপ্লবী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছেন। সুতরাং জনগণের মতামতকে তাদের শ্রদ্ধা করা উচিত। জনগণের মতামত শোনা উচিত। সে অনুযায়ী যেভাবে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয়, সেভাবে কাজ করা উচিত।

অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তিউনিসিয়া ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই স্থিতিশীলতা আসেনি। এদিকে বাংলাদেশেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়নি। সামনের দিনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে আপনি মনে করেন কী?

তিউনিসিয়ায় কোনো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ সেখান থেকে ভিন্ন। যদিও আমরা দুইশ বছর ব্রিটিশ কলোনি ছিলাম। ব্রিটিশ আমলে ১৯১৯ সাল থেকে শুরু করে নানা প্রক্রিয়ায় আস্তে আস্তে আমরা গণতন্ত্রের দিকে পা বাড়িয়েছি। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার যখন ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ প্রবর্তন করল তখন থেকেই বাংলাদেশ—যেটি ভারতের অংশ ছিল—গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণা নিয়ে এগিয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার অনেক অনেক দিন ক্ষমতায় থাকবে মনে করেছিল, কিন্তু থাকতে পারেনি। এর একটি কারণ হলো গণতন্ত্র বাংলাদেশের মাটিতে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত আছে।

এখন আমাদের সমস্যা হচ্ছে। যেকোনো বিপ্লবের পর এ সমস্যা হয়। যেকোনো ফ্যাসিস্ট সরকার চলে যাওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ সিরিয়া অথবা ইরাকের মতো হবে বলে আমি মনে করি না। আমাদের এখানে একটি দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি আছে। সেদিকে আমরা যব, যার জন্য আমাদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কীভাবে দেখছেন?

১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এটি পরিষ্কার যে সেখানে ভারতের নিজস্ব একটি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তারা পাকিস্তান ভাঙতে চেয়েছে। সে মনোভাব থেকে তারা সরে আসতে পারেনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানি ফ্রান্সকে দখলে নিয়ে নেয়। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ হলো। যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা না করলে ইউরোপ কোনোদিন যুদ্ধে জিততে পারত না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কখনো ইউরোপকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়নি।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইউরোপ ও আমেরিকার মতো হতে পারত। এটি না হওয়ার জন্য ভারত বহুলাংশে দায়ী। বিগত দেড় যুগ ধরে ভারত কী করেছে? তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবিও করে। সেখানে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। কিন্তু তারা আমাদের এখানে কী করল? নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতেরই সব রাষ্ট্রের নেতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য যে বিশাল ভারতের নেতৃত্ব এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে। তারা শুধু তাদের বর্তমান স্বার্থকে দেখে। আমরা পানি পেলাম না। বাণিজ্যে বৈষম্য রয়ে গেল। আর আমাদের গণতন্ত্র হারানোর ক্ষেত্রে ভারতের কী ভূমিকা, তা বলার প্রয়োজন নেই। এসব কারণেই দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন রয়েছে।

ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের যে খবর এসেছে, এসব খবরের যে কোনো ভিত্তি নেই, তা আমরা জানি। সুতরাং বড় দেশ হিসেবে দুই দেশের সম্পর্ককে উন্নতি করার জন্য ভারতের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ভারত তার এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

নির্বাচিত সরকার এলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে উত্তরণ ঘটতে পারে?

এখন হতে পারবে না কেন? এ সরকার গঠন হয়েছে বিপ্লবের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এটির বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সুতরাং সম্পর্ক উন্নয়ন শুরু হওয়া উচিত। এখন থেকেই শুরু হওয়া উচিত।

শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের আদালতে অভিযোগ আছে তাদের এ আদালতে বিচার সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?

রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি থাকে তাহলে বিচার সম্ভব না হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। এ আইন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেটি সংশোধন হয়েছে। একজন ভালো চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে জানেন। তাজুল ইসলাম আমাদের ডিফেন্স টিমে ছিলেন। তিনি লন্ডনের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের এক্সপার্ট এমন একটি চেম্বার থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত।

এর পাশাপাশি আমাদের আপিল বিভাগ এ ট্রাইব্যুনালের আপিল কোর্ট হিসেবে কাজ করবে। সেখানে যোগ্য বিচারকরা আছেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সেখানে বিচার না হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। সুবিচার নিশ্চিত হবে। এবং বিচার পাওয়া উচিত। জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে যে অবিচার হয়েছে, সেটি হবে না বলেই আমি আশাবাদী।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতাদের বিচারকে অবিচার বলছেন। ওই রায়গুলো নিয়ে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপে এগোবেন?

এটির জন্য একটি আইনি কাঠামো দরকার। এত বেশি অবিচার করা হয়েছে যে দুনিয়ার ইতিহাসে নজির নেই। নুরেমবার্গ ট্রায়াল হয়েছে। যুগোস্লাভিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রায়াল হয়েছে। কিন্তু এমন কোথাও হয়নি। এটি একটি ঐতিহাসিক অবিচার। এটির সুবিচার পাওয়ার অধিকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের আছে। জামায়াতের শীর্ষ দশজন নেতার বিচার করা হয়েছে। পাঁচজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। চারজন জেলে মারা গেছেন। একজন এখনো মৃত্যুদণ্ড নিয়ে জেলে দিন কাটাচ্ছেন।

নিঃসন্দেহে তারা পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের সমর্থক হওয়া এক জিনিস আর যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া আরেক জিনিস। যদি সঠিক আইনের অধীনে সঠিক বিচার হতো তাহলে তারা নির্দোষ খালাস পেতেন বলে আমি মনে করি। সুতরাং ১৯৭৩ সালের আইনটি পরিবর্তন করা উচিত। আমার মতে, তাত্ত্বিকভাবে হলেও এ বিচারকার্যগুলো রিভিউ করা উচিত।

দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে জামায়াত ও এবি পার্টির সঙ্গে কাজ করেছেন। রাজনীতি নিয়ে আপনার পরবর্তী ভাবনা কী?

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির আমি উপদেষ্টা ছিলাম। বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগে অসংখ্য উপদেষ্টা আছেন, মানুষ তাদের নামই জানে না। আমি এবি পার্টির আহ্বায়ক বা সম্পাদকও ছিলাম না। উপদেষ্টা ছিলাম, এখন নেই।

এর আগে দীর্ঘ ৩৩ বছর জামায়াতের রাজনীতিতে ছিলাম। জামায়াতের সঙ্গে আমার কর্মক্ষেত্র ছিল প্রধানত আইনি অঙ্গনে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও কাজ করেছি। নীতিগত পার্থক্যের কারণে ২০১৯ সালে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগের কারণ পত্রপত্রিকায় এসেছে। ওই সময় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনো চিন্তা আমি করছি না। আমি আইনি অঙ্গনেই কাজ করব। আর কোনো রাজনৈতিক দলে অংশ নেয়ার ইচ্ছা আমার নেই। একজন আইনজীবী হিসেবে জাতির যে খেদমত করতে পারি, সেটিই চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।