শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজবিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চার দশক শিক্ষকতা করেছেন। ওই বিভাগ থেকেই ১৯৬৫ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৬ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ– মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, নৈতিক চেতনা: ধর্ম ও আদর্শ, উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাংলা সাহিত্য। তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম।
সমকাল: ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?
আবুল কাসেম ফজুলল হক: কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অবস্থা খুবই অবনতির দিকে গেছে। দেশের মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে উৎপাদন করছে। কৃষি উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন নানাকিছু। তাদের এই লড়াইয়ের উদ্দেশ্য অস্তিত্ব রক্ষা করা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। সরকার দেশের আইনকানুন পরিবর্তন করে শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সব মানুষের কল্যাণে কাজ করবে, সেই রকম কোনো সরকার কিংবা নেতৃত্ব এই দেশে আমরা পাইনি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এখনও সমাজের মধ্যে রয়েছে।
সমকাল: মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের কোনো তুলনা করা যায়?
ফজলুল হক: রাজনীতি যদি পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে ১৯৭১ সালের যে মুক্তিযুদ্ধ, তার সঙ্গে ৫ আগস্টের ঘটনা মিলবে না। তবে সারাদেশের গণজাগরণ বলতে যা বোঝায়, সেটি ১৯৭১-
পূর্ববর্তী কয়েক বছর প্রচণ্ডভাবে ছিল। এ রকম একটা পরিস্থিতি আমরা এবারে দেখেছি। তবে দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেন, যেমন ১২০৪ সালে লক্ষ্মণ সেন বখতিয়ার খিলজি আসছে জেনে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে নৌকায় উঠে আমাদের এই বিক্রমপুরে পালিয়ে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা কিছু ঘটনা ও ছাত্রদের স্লোগান শুনে আত্মরক্ষার তাগিদ অনুভব করেন। আন্দোলনকারীরা তাদের বেঁচে থাকতে দিত না। আমাদেরও তাই ধারণা হয়েছিল। এটা উপলব্ধি করেই শেখ হাসিনা দ্রুত আগরতলা চলে গেলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রথম সারির নেতারাও বিদেশে পালিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। একটা কথা হলো, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক সমস্যা এমনিতেই অতীতের বিষয় হয়ে যায়। কোনো কোনো সমস্যা রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা সমাধান করা হয়।
সমকাল: জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের পতন হলো। নিকট ভবিষ্যতে নতুন কোনো শাসকশ্রেণির উদ্ভব হবে বলে মনে হয়?
ফজলুল হক: নতুন শাসকশ্রেণির উদ্ভব হবে বলে মনে হয় না। শ্রেণির উদ্ভব দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যে শাসকশ্রেণি তথা ধনিকশ্রেণি রয়েছে, তাদের ভেতর থেকেই রাজনৈতিক অবস্থা উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান ধনিক, বণিক ও উচ্চশিক্ষিত লোকদের ভেতর থেকেই একটা শক্তি গড়ে উঠবে, যারা ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতাসীন হয়েই তারা আগের মতো আচরণ করবে না, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই তারা আসবেন। মনমানসিকতায় কিছুটা হলেও উন্নত হবে। তারা রাষ্ট্রপরিচালনার শক্তি অর্জন করবেন। অধ্যাপক ইউনূস সেই ধরনের চিন্তা করছেন বলেই মনে হয়। তাঁর সঙ্গে যারা আছেন, তারাও সে ধরনের কথা ভাবছেন। তাঁর সঙ্গে যারা আছেন, তাদের বেশির ভাগই তরুণ। গড়পড়তা অমিল থাকলেও তারা মিলেমিশেই কাজ করছেন।
সমকাল: নীতিনির্ধারক, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য শরিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে একটা বিতর্ক এখনও চলছে। এ বিষয়ে আপনার কী মনে হয়?
ফজলুল হক: রাজনৈতিক অবস্থা কিছুটা উন্নত হলে কিছু পরিবর্তন করে তারা নির্বাচন দেবেন। আর এটি তারা খুব দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলছেন। প্রকৃতপক্ষে, খুব ভালো কিছু করতে গেলে সময় লাগে। তবে নির্বাচনের বিষয়টি এখনও অনির্দিষ্ট লাগছে। দায়িত্বশীলদের বিভিন্ন মন্তব্য থেকে মনে হয়, ২০২৬ সালের দিকে নির্বাচন হতে পারে। আশা করি, এভাবে নির্বাচন হলে দেশ পরিচালনায় কিছুটা ভালোর দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব এবং উপযোগী একটা নির্বাচিত সরকার হবে। তবে এই নির্বাচিত সরকারও খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারবে কিনা তা ধারণা করা কঠিন।
সমকাল: এবারে তরুণদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে জোরালো আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক কোনো সম্ভাবনা দেখছেন কি?
ফজলুল হক: তরুণদের মধ্যে যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা দেখা দিয়েছে, সেটি সাফল্যের দিকে যাওয়া উচিত। এই দেশের যারা প্রবীণ রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা, তাদের উচিত তরুণদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া এবং তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বিভিন্নভাবে নতুনদের কাছে তুলে ধরা। নিতান্ত নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা না করে, জাতি, রাষ্ট্র, জনজীবন বিবেচনা করে এই দায়িত্ব তরুণদের হাতে তুলে দেওয়া দরকার।
সমকাল: আপনি ঔচিত্যের কথা বলছেন। আসলে শ্রেণিস্বার্থে জড়িত বিভিন্ন গোষ্ঠী কি তরুণদের কাছে এই নেতৃত্ব ছেড়ে দেবে?
ফজলুল হক: যারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তারা তরুণদের হাতে ক্ষমতা দিতে রাজি হবেন না। তাদের ভেতরে এক-দুজন থাকতে পারেন, যারা তরুণদের সমর্থন দেবেন। বেশির ভাগই নিজেদের কর্তৃত্ব, নিজেদের স্বার্থরক্ষার মানসিকতা নিয়ে আসেন। তরুণদের কিছুটা ঝুঁকি ও সাহস নিয়ে এগোতে হবে। আমরা জনগণের ভেতর থেকে উঠে এসেছি, জনগণের হয়ে কাজ করব। জনগণই রাষ্ট্র, জনগণই জাতি। আর বাংলাদেশি কিংবা বাঙালি জাতীয়তাবাদ সবই তো জনগণ কেন্দ্র করে।
সমকাল: তরুণদের সঙ্গে প্রবীণদের দ্বন্দ্বের নিরসন কীভাবে সম্ভব?
ফজলুল হক: যদি তরুণরা দুই-তিন বছরে নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করে এবং সেই যোগ্যতা অনুযায়ী জনগণের কল্যাণে, রাষ্ট্রের কল্যাণে একটা ভালো কর্মসূচি প্রচার করলে তারা জনগণের মন জয় করতে পারে। জনসাধারণকেও এটি বুঝতে হবে, প্রত্যেক মানুষের অনেক গুণ থাকলেও কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি থাকেই। একটা দল কিংবা সরকারের মধ্যে সম্পূর্ণ ইতিবাচক বা ভালো দিক পাওয়া যাবে, এমন কিন্তু নয়। কিছু না কিছু খারাপও যুক্ত থাকবে। যেখানে বেশির ভাগই ভালো, সেটিই গ্রহণ করতে হবে।
সমকাল: আগামী দিনে গণঅভ্যুত্থানের পাটাতনে দাঁড়িয়ে রাজনীতি কেমন হতে পারে?
ফজলুল হক: পরিস্থিতি যা দেখছি তাতে মনে হয়, ইউনূস সরকারে রাষ্ট্রপতি বহাল থাকবেন। তারা রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেবেন না। রাষ্ট্রপতিও স্বেচ্ছায় সরে যাবেন না। সরে যাওয়া মানে হলো, এই সরকারের সঙ্গে শত্রুতা করা। এ কারণে এভাবেই চলবে। তবে কতটা ভালোর দিকে এগোবে, সেটি সামনে দেখা যাবে। ছাত্রছাত্রীর যে আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হলো, সেসব ছাত্র নিশ্চিতভাবে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হবেন। আর তাদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। যেমন– জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইত্যাদি। এগুলো যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠে, তাহলে এর মধ্য দিয়ে ভালোর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো যদি আবার ‘সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন’ হয়ে যায়, অর্থাৎ বিদেশ থেকে তহবিল এনে কর্মসূচি হাতে নেয় তাহলে তাদের দ্বারা বড় কিছু হবে বলে আশা করা যায় না। তরুণদের দলগুলো যদি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের মতো কাজ করে তাহলে এটির ফল হয়তো অল্পদিনে ভালো হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব খর্ব হবে। তবে আগের মতো স্বাধীনতা একেবারে পরাধীন হয়ে যাবে না।
সমকাল: তরুণরা তাদের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখা উচিত বলে মনে করেন?
ফজলুল হক: মুক্তিযুদ্ধকে অবশ্যই আমাদের জাতীয় জীবনে, জনজীবনে, ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কল্যাণকর ঘটনা হিসেবে দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে ভুলত্রুটি থাকতে পারে, অনুচিত ঘটনাও থাকতে পারে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসে দুটি বড় ঘটনা ঘটেছে। একটা হলো– ইসলাম প্রচারের মধ্য দিয়ে মুসলমান সমাজ গড়ে উঠেছে। এ দেশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। বিশেষত বৌদ্ধরা ব্যাপকহারে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। এ জাতির জীবনে ইসলাম প্রচার বড় একটা ঘটনা। দ্বিতীয়টি হলো– একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের জাতির জীবনে ইসলাম প্রচারের ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাটিও তাৎপর্যবহ।
সমকাল: সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি কোন দিকে এগোচ্ছে?
ফজলুল হক: গত তিপ্পান্ন বছরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেমন ছিল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে তা কোন দিকে যাচ্ছে– বিষয়টি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতিতে দুটি দিক একই সঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। এক, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক; দুই, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের শাসকশ্রেণি, মন্ত্রিপরিষদ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতা সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না, গোটা পৃথিবীকে তারা নিজেদের শাসনের মধ্যে রাখতে চায়। হিটলার যেমন চেয়েছিলেন, মুসোলিনি যেমন চেয়েছিলেন সে রকম। নিজের দেশে তারা অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কিন্তু নিজের দেশ ছেড়ে যখন দুনিয়া জয় করার চেষ্টা করেছেন, তখন তাদের খ্যাতিও নষ্ট হয়েছে এবং মৃত্যুও অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্র সে রকম বিরোধিতা অনুভব করে না। তাদের অবস্থান এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে অনেক দূরে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো প্রেসিডেন্ট এমনভাবে কথা বলেন, যেন তারা পুরো দুনিয়ার শাসক এবং বিশ্বকে তাদের কথা শুনতে হবে। এটাই হলো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এবং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হলো– আমাদের প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সব গণবিরোধী ধারায় পরিচালিত হবে।
সমকাল: ভারতের বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
ফজলুল হক: বাংলাদেশের চারপাশজুড়েই ভারতের অবস্থান। কেবল ২৫ মাইলের মতো জায়গা মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত। বাকি সবটুকু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমনকি সমুদ্র দিয়ে একটু সামনে গেলে সেখানেও ভারতের অবস্থান। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এই বাস্তবতায় প্রকৃত স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। ১৯৪৭ সালের আগে অন্তত ত্রিশ বছর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়েছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ জায়গায় হয়েছে মূলত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ও ব্রিটিশ সরকারের কৌশলের ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানে যে সংগ্রাম হয়েছে, তার পরিণতিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গোটা ব্যাপারটাই মানবিক। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, যেখানে হিন্দু-মুসলমান ও ব্রিটিশ সরকারের কৌশল জড়িত। এটা কোনো ধর্মীয় বা কেতাবি ব্যাপার ছিল না, মানুষের পরিচয়ই প্রধান ছিল। ১৯৭১ সালেও পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য নেতাকর্মী সংগ্রাম করেছে এবং মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলেছে। আমরা ধারণা, ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রাণপণে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশকে জেতাতে চেয়েছিলেন।
সমকাল: চলমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ফজলুল হক: আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে
নিরঙ্কুশভাবে গ্রহণ করা কোনোভাবে উচিত নয়। ভারতের ব্যাপারে শেখ হাসিনা যে মনোভাব নিয়ে দেশ শাসন করেছেন, তাতেও অতিরিক্ত আনুগত্য ছিল। কোনো কোনো বিষয়ে ভারতের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হতে পারে, আলোচনা-সমালোচনাও হতে পারে। কোনো পক্ষকেই আগ বাড়িয়ে বিবাদ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। ভারত যদি কোনো অনুচিত কাজ করে, তাহলে আমরা অবশ্যই সেটির প্রতিবাদ করব। আর স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা অগ্রসর হব। শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে থেকে পররাষ্ট্রনীতি স্থির করেছিল। বাস্তবে এ কারণে হাসিনার পতন হলো। আমেরিকা মনে করে, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক মানেই তাদের শত্রুদের পক্ষে গেছে। আগের ক্ষমতাসীন দলের সময়ও মার্কিন সরকার বারবার বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বসেছিল। তারা অনুরোধ করেছিলেন, আপনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আর অগ্রসর হবেন না। আমাদের সঙ্গে থাকেন, আমরা ঋণ, অর্থ দেব।
সমকাল: আগামী নির্বাচনের গতিবিধি কোন দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে?
ফজলুল হক: আগামী নির্বাচনে কয়েকজন শিক্ষার্থী জিততে পারে, বিশেষত এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমরা পাকিস্তান হওয়ার পর দেখেছি, ছাত্র-তরুণদের মধ্যে যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের সবাই পাস করেছিলেন। মুসলিম লীগের প্রার্থীরা সেখানে নির্বাচিত হতে পারেননি। এখনকার অবস্থাও সে রকম হবে। যদি ছাত্র-তরুণরা একটু ভালো চিন্তা নিয়ে নিজের যোগ্যতা দিয়ে মানুষকে কাছে টানতে পারে, তাহলে তিন মাসের জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচনে জিতে যাওয়ার মতো হবে।
সমকাল: নির্বাচনী লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী হতে পারে?
ফজলুল হক: বিএনপি ১৫-১৬ বছর ক্ষমতায় নেই। এই সময়ে জনগণের উদ্দেশে তারা কোনো সার্বিক বক্তব্য দেয়নি। এর মানে দাঁড়ায়, তারা গণজাগরণ চায় না। পাকিস্তান যে হলো, সেখানে জওহরলাল নেহরু গণজাগরণ চাইতেন না। রাজনীতিতে জনগণ অংশগ্রহণ করুক, এভাবে তাদের টেনে আনতে চাইতেন না। মুহাম্মদ আলি জিন্নাহও তাই। তারা চাইতেন না, সাধারণ জনগণ জেগে উঠুক। তাদের দু’জনেরই ধারণা ছিল, সাধারণ মানুষ জেগে উঠলে সে ধারায় আমাদের ঠেলে নিয়ে গেলে আমাদের সেই নেতৃত্ব আর থাকবে না। পাবলিক মিটিংয়ের চেয়েও তারা হলঘরকে গুরুত্ব দিতেন।
একমাত্র মহাত্মা গান্ধী ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি চাইতেন, সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে, তাদের জন্যই আমাদের রাজনীতি।
সমকাল: ধন্যবাদ।
ফজলুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।