
এ সরকারের উচিত হলো তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেয়া। এদের পক্ষে সব সংস্কার করা তো সম্ভব না। ব্যাংক খাতে সংস্কারগুলো ভালো। কিন্তু যতগুলো কমিশন করেছে, সেগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী সবকিছুর সংস্কার করা তো সম্ভব না।
বর্ষীয়ান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, তাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর। পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহনকারী বদরুদ্দীন উমর রাজনীতি ও গবেষণায় সম্পৃক্ত রয়েছেন ৫৩ বছর ধরে। দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে শতাধিক বই রয়েছে তার। নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার ও দেশের রাজনীতির সাম্প্রতিক আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন
নির্বাচন কবে নাগাদ হলে ভালো হবে বলে আপনি মনে করেন?
এ সরকারের উচিত হলো তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেয়া। এদের পক্ষে সব সংস্কার করা তো সম্ভব না। ব্যাংক খাতে সংস্কারগুলো ভালো। কিন্তু যতগুলো কমিশন করেছে, সেগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী সবকিছুর সংস্কার করা তো সম্ভব না। তাদের প্রধান কাজ হলো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করা। তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেয়াই এ সরকারের কর্তব্য হবে। তা না হলে এ সরকার যে অবস্থায় আছে, তারা বেশি কিছু করতে পারবে না। আর যতই দিন যাবে, তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের কার্যক্রম নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন একটি সঠিক ব্যাপার ছিল। শেখ হাসিনার পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখানে শাসনকার্যে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূরণ করার দরকার ছিল। সে সময় ছাত্র ও অন্যরা মিলে এ সরকারকে দাঁড় করিয়েছিল। সেটি যদি না হতো তাহলে একমাত্র বিকল্প ছিল সামরিক সরকার। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব নিতে হতো। তার চেয়ে এ সরকার দায়িত্ব নেয়াটাই একটি স্বস্তিকর ব্যাপার ছিল। বিরাট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সরকার আসে। আর এদিকে এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের প্রত্যাশার ব্যারোমিটারও অনেক ওপরে উঠে গেছে। সে তুলনায় এ সরকারের সাধ্য কম। প্রথমত, সাধ্য কম এজন্য যে এরা তো আকাশ থেকে পড়েনি কিংবা ভুঁইফোঁড় হয়ে বের হয়নি। এ সমাজের মধ্যেই তারা রয়েছে। আর তারা তো এখানে যে শাসক শ্রেণী আছে, তার থেকে বিচ্ছিন্ন না। এখানে শাসক শ্রেণী কারা? এ শাসক শ্রেণী হলো মধ্যশ্রেণীভুক্ত একটি ব্যবসায়ী শ্রেণী। বাহাত্তর সাল থেকে এ ব্যবসায়ী শ্রেণী নিজেদের বিকশিত করে যে জায়গায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছে, তাদের চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। এমনকি এ গণ-অভ্যুত্থানও তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেনি। গণ-অভ্যুত্থান তো কোনো সামাজিক বিপ্লব না। এর মাধ্যমে এখানকার উৎপাদন-বণ্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সবকিছু অটুট রয়েছে। এ অবস্থায় তারা ক্ষমতায় এসেছে। কাজেই দেখতে হবে এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে শাসক শ্রেণীর যে সীমাবদ্ধতা, তার মধ্যেই এটিকে কাজ করতে হবে। এ শাসকশ্রেণীকে যদি বলা যায় শ্রমিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়ে দাও বা নানা রকম কাজ করো, এটি তো সম্ভব না। এ শাসক শ্রেণী তো তা করবে না। কাজেই এ কাঠামোর মধ্যেই সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো-মন্দ লোক থাকতে পারে। কিন্তু তারা সবাই এ শাসক শ্রেণীর কাঠামোয় বন্দি আছে। প্রথমেই এ কথাটি মনে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এ সরকার যেভাবে গঠিত হয়েছে তাতে দলীয় সরকার এমনকি একটি কোয়ালিশন সরকারের মধ্যেও যে চিন্তার ঐক্য থাকে, সেটি এখানে নেই। নানা ক্ষেত্র থেকে তাদেরকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। সেজন্য তাদের মধ্যে চিন্তার ঐক্য নেই। একজন একদিকে যায় তো আরেকজন আরেকদিকে যায়। এ কারণেই শ্রেণীগত বিষয়টি এখানে মুখ্য। সেখানে তেমন কিছু করার উপায় নেই তাদের।
তবে তারা কিছু কাজ করেছে যেমন নতুন যে নোট তারা বাজারে আনছে সেখানে শেখ মুজিবের ছবি। এখন যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ডিজাইন করে করার দরকার ছিল। তারা বলছে, লক্ষ কোটি টাকার নোট শেখ মুজিবের ছবিসহ বাজারে রয়েছে। ঠিক আছে; যে নোট আছে সেগুলো পরে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়া যাবে, কিন্তু নতুন নোট ছাপা হবে কেন। এমন আরো নানা রকম কাজ রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকরা বেতন চাইলে তাদেরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এখানে কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নেই। সরকারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেই। সেজন্য শ্রমিকরা দাবি-দাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ আমলে যেভাবে রাস্তায় নেমেছে সেভাবে এখনো তাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। উপায় কী তাদের? আলোচনার ব্যবস্থা তো রাখেনি। আগেকার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা তো তাদের পক্ষে সম্ভব না। সেদিক থেকে এদের দোষারোপ করে লাভ নেই। তাদের জেনে-শুনেই এখানে দেয়া হয়েছে। ফেরেস্তা হিসেবে দেয়া হয়নি তো। কাজেই তাদের যে একটা শ্রেণীগত চরিত্র, সেটি হিসাব করলে দেখা যাবে আগেকার শাসনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে বিপ্লবী কোনো পদক্ষেপ নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না। এটা আশা করাও ঠিক না।
কমিশনগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?
এ সরকার কিছু ভালো কাজ করেছে। তার মধ্যে একটি হলো কতগুলো কমিশন গঠন করা। শেখ হাসিনা যে সারা দেশকে চারদিকে একটি লণ্ডভণ্ড অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, দুর্নীতিকে প্রকারান্তরে আইনসিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে এসেছিল; সেগুলোর প্রতিকার করার জন্য কতগুলো কমিশন তারা করেছে। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা—এ দুটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে অবহেলিত। এ দুই খাতেই বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের কম। সে টাকাও এখানে ঠিকভাবে খরচ হয় না। অথচ এখানে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা দরকার ছিল। লক্ষণীয় বিষয় অন্য অনেক কমিশন করলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে যে চরম দুর্দশা, এ ব্যাপারে কোনো কমিশন নিয়োগ করেননি। তার চেয়েও লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে ছাত্ররা যাদের সঙ্গে শিক্ষার এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, এত বড় আন্দোলনের পর তারাও দাবি করছে না যে একটি শিক্ষা কমিশন হওয়া দরকার। শিক্ষা কমিশন যে হয়নি, এ নিয়ে তাদের কোনো সমালোচনা নেই। উপলব্ধিও নেই। এটি একটি খুব বিস্ময়কর ব্যাপার।
শিক্ষা কমিশন বলায় একটি বিষয় মনে পড়ল। নুরুল আমীন মন্ত্রিসভায় ফকির আব্দুল মান্নান বলে একজন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনারা শিক্ষার উন্নতির জন্য কী করেছেন? ফকির আব্দুল মান্নান বললেন, আমরা শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়েছি।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির মধ্যে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙাটিকে সঠিক মনে করেন?
একটি ঘটনা ঘটলে এ দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা ভালো-মন্দ বিচারে নেমে পড়ে, তর্ক-বিতর্ক করে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য দেখতে হবে, কেন এ ঘটনা ঘটল? সে ব্যাপারে কেউ যায় না। যেমন দেখা যাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার পর অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবীও বলেছেন, এসব ঠিক হয়নি। কিন্তু কেন এ ঘটনা ঘটল, সেটি তো দেখতে হবে। তারপর বিচার হবে। ৫ আগস্ট শেখ মুজিবের বাড়িতে আগুন দিল জনগণ। এ কাজটি তো একজন করেনি। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশজুড়ে বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দিল, শেখ মুজিবের শত শত মূর্তি ভেঙে ফেলল, যেগুলো সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বানিয়েছিল। এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারা দেশের জনগণ উঠে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আক্রমণ করল কী কারণে? সেটি তো দেখতে হবে। এর কারণ ছিল, শেখ হাসিনা নিজের নানা রকম দুষ্কৃতি, অপরাধ, খুন-খারাবি, দুর্নীতি এসব আড়াল করার জন্য তার পিতার ভাবমূর্তিকে ব্যবহার করেছিল। সবকিছুর নামকরণ শেখ মুজিবের নামে করে, শেখ মুজিবকে জড়িয়ে তাকে আকাশে তুলে তারা সামনে এনেছিল। এর ফলে জনগণ যখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যাপক ও প্রকাণ্ডভাবে দাঁড়াল, তখন তারা শেখ মুজিবকেও একই কাতারে ফেলল। এর কারণ শেখ হাসিনা নিজেই। শেখ হাসিনা যদি তার পিতাকে এভাবে না নিয়ে আসত, তাহলে জনগণ তো এভাবে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যেত না। কাজেই শেখ মুজিবের বাড়ি ৫ আগস্ট পুড়িয়ে দেয়ার ছয় মাস পর ৫ ফেব্রুয়ারি কেন আবার তা ভেঙে ফেলা হলো? তার কারণ শেখ হাসিনা ৫ তারিখ যে ভার্চুয়াল বক্তৃতা দিল এর পরই লোকে আবার ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে হামলা করল। শেখ হাসিনা যদি ওই বক্তৃতা না দিত, তাহলে তো লোকে হামলা করতে যেত না। কাজেই শেখ হাসিনার ওই বক্তৃতার কথা বাদ দিয়ে ধানমন্ডির হামলার ভালো কি মন্দ; ওই বিচার তো করা যাবে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলার পর রাস্তায় একটি লোকও তার পক্ষে এল না। জনগণ সেখানে বরং উল্লাস করতে লাগল। মিষ্টি বিতরণ করতে লাগল। মিষ্টির দোকানদাররা পর্যন্ত তাদের দোকানের মিষ্টি বিতরণ করতে লাগল। এ ঘটনাটি কেন ঘটল তা জিজ্ঞেস করতে হবে। যে লোককে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমানবন্দরে এদেশের লাখ লাখ লোক সমর্থন করেছিল, রাস্তায় দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছিল। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশে তাকে সংবর্ধনা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে একটি লোকও রাস্তায় ১৫ আগস্ট দাঁড়াল না। কাজেই জিজ্ঞেস করতে হবে কেন এ কাজ হলো।
এর জন্য কী জনগণ দায়ী? নাকি শেখ মুজিব দায়ী? সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের জনগণ খারাপ হয়ে গেল? আর শেখ মুজিব ফেরেস্তা? নাকি শেখ মুজিব তার সাড়ে তিন বছরের শাসনে এমন সব কাজ করলেন, যার জন্য জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন? ঘটনা কেন ঘটল এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটিই হলো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান।
আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের কথা কেউ কেউ বলছেন। এক্ষেত্রে কী এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
জার্মানিতে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। জার্মান সরকার ফ্যাসিস্টদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। হিটলারকে যেভাবে সরকার ফ্যাসিস্ট বলে চিহ্নিত করেছিল, এখানে তো সেটা করা হয়নি। আসলে জার্মানিতে হিটলারের সময় ফ্যাসিজম যে পর্যায়ে গিয়েছিল, এখানে তো সে পর্যায়ে যায়নি বা যেতে পারেনি। সেজন্য তাদের সব সম্পত্তি ঢালাওভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তবে যেহেতু তারা দুর্নীতি করেছিল, সেজন্য তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আলাদা ব্যক্তিগতভাবে চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস—এসবের মামলা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে নয়। সে মামলাগুলো এখন চলছে। এগুলোর কী হবে সেটি আলাদা কথা। এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার এখানে শেখ মুজিবের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে সেজন্য কিছু বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বলে বেড়াচ্ছে যে ঠিক হয়নি। জার্মানিতে কী হয়েছিল? হিটলার তার বাঙ্কারে ছিল বলে সেটি ভেঙে ফেলার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। তবে হিটলারের দক্ষিণহস্ত ছিল রুডলফ হেস। তাকে নুরেমবার্গ বিচারের সময় ফাঁসি দেয়া হয়নি। তাকে বিশাল দুর্গসম প্রাসাদে বার্লিনে আটক করে রেখেছিল। রুডলফ হেস ১০০ বছরের কাছাকাছি বেঁচে ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর জার্মান সরকার সেই বিশাল স্পানডাউ প্রিজন ভেঙে ফেলেছিল। তার কারণ হিসেবে তারা বলল, এটি রেখে গেলে এখানে নাৎসিরা এসে জড়ো হবে। এখানে একটি তীর্থক্ষেত্রের মতো হবে। এসব করতে দেয়া হবে না বলে পুরো স্পানডাউ ক্যাসেল ভেঙে শেষ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের এখানে তো সরকার এটি করেনি। সরকারের জায়গায় জনগণই শেখ মুজিবের বাড়ি ভেঙে ফেলল।
শেখ হাসিনাসহ তার শাসনামলের জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এখানে ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা কতটুকু দেখেন আপনি?
প্রথমত বলা দরকার, যে লোকজনকে ধরেছে বেশির ভাগকেই তাদের প্রকৃত অপরাধের জন্য ধরা হয়নি। এমন সব অপরাধের জন্য ধরেছে যে কাজ তারা সেভাবে করেনি। সবাইকে প্রায় হত্যার বা খুন করার জন্য ধরেছে। সবাই হয়তো খুনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিল বা তাকে সমর্থন করেছে। কিন্তু এটির ভিত্তিতে তো কাউকে ফাঁসি বা শাস্তি দেয়া যায় না। কাজেই যাদেরকে ধরেছে যেমন রাশেদ খান মেনন একজন দুর্নীতিবাজ। তাকে হত্যার অভিযোগে ধরেছে। কিন্তু তার হত্যার মামলা প্রমাণ করা তো সহজ না। কাজেই হত্যার মামলা হিসেবে ধরলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানারকম অপরাধমূলক কাজ করে যে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেছে, সে অভিযোগে মামলা হওয়া উচিত। হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধেও একই কাজের মামলা হওয়া উচিত।
এখন সালমান এফ রহমানকেও খুনের জন্য ধরেছে। অথচ যেখানে লাখ কোটি টাকা দুর্নীতি করে টাকা পাচার হয়েছে, সেটিকে হিসাবে ধরে তার শাস্তি হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তো শোনা যাচ্ছে না যে তাদের মামলা নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। যে অবস্থায় আছে তাতে মামলা করে কী হবে, তাতে কী করবে, কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে মামলা করে তা যদি ১০ বছর ঝুলিয়ে রাখে, তা করতে পারে।
গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পার হলেও এখনো ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। ভারতের এ ধরনের ভূমিকা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় দেয়ার একটি কারণ হচ্ছে তাকে দুনিয়ার অন্য কোনো দেশ আশ্রয় দেয়নি। সে তো ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য জায়গায় যেতে চেয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যেও যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কেউই নেয়নি। এমনকি লিথুয়ানিয়াসহ ওই দেশগুলোও নেয়নি। সে শুধু যে বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা ঘৃণিত তা নয়। সারা দুনিয়ায় ঘৃণিত, যার জন্য কোনো রাষ্ট্রই নিতে চায়নি। যেহেতু সে গিয়ে ভারতে উঠেছে, অন্য দেশগুলো না নিলে তারা এখন কী করবে? বাংলাদেশে পাঠালে তো বিচারে ফাঁসি হবে। কাজেই সে অবস্থায় ভারত প্রথমত বাধ্য হয়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাকে অন্য কোনো জায়গায় পাঠানো গেলে ভারত খুশি হতো।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের একটা কর্তব্য আছে বলা চলে। শেখ হাসিনা তারা যা চেয়েছে তার সবকিছু দিয়েছে। এবং তার বিনিময়ে কানাকড়ি কিছুই ভারত বাংলাদেশকে দেয়নি। হাসিনা তাদের একতরফাভাবে দিয়ে গেছে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে—‘অবলিগেশন’। ভারতের তো তাকে আশ্রয় দেয়ার একটি অবলিগেশন আছে। কিন্তু এটি দিয়ে যে ভারত খুব একটা খুশি আছে, সেটিও তো না। না দিয়ে তো উপায় নেই।