
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিন্ডিকেট সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আয়োজিত এই সভা থেকে আগামীকাল বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ঘিরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশত শিক্ষার্থী।
সংঘর্ষের পর সম্প্রতি ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েটের ভিসি (উপাচার্য) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মো. আব্দুর রহমান—
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো কতটুকু যৌক্তিকতা রয়েছে?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: শিক্ষার্থীরা আমার কাছে ৫টি দাবি নিয়ে যায়। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলেই আমি জরুরি ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভা ডেকেছি। সভায় আমরা ১৬ জন সদস্য উপস্থিত ছিলাম, তারা সবাই এই দাবিগুলোকে যৌক্তিক মনে করে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছে।
যেমন- তাদের দাবি ছিল যারা শিক্ষার্থীদের যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে, আমরা সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই দিন থানায় মামলা করি। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া। সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে; যাদের প্রয়োজন ওই কমিটির সাথে যোগাযোগ করে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে যেতে বলেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থী ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগ চায়, আপনি কি পদত্যাগ করবেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: কিন্তু এরপরই তারা আরেকটি দাবি তুলে ভিসি-প্রো ভিসির পদত্যাগ। আমি মনে করি তাদের দেওয়া ৫টি দাবি যদি পূরণ হয় তাহলে আমাদের পদত্যাগ করার প্রয়োজন নেই।
আমি মনে করি, ভিসি এবং প্রো-ভিসি পদত্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক নয়। তারা আমাদের কাছে যে ৫টি দাবি রেখেছে তারা যদি মনে করে ওই পাঁচটি দাবি পূরণ হয়নি, তাহলে তা বলুক। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছি।
ভিসি এবং প্রো-ভিসি সিন্ডিকেট সদস্য। আমাদের সরকার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে, এবং আমরা প্রশাসনিকভাবে সেটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করছি। আমাদের বিশ্বাস, আমরা আরও ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: আমার ক্যাম্পাসের সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু করলে কি শাস্তি হবে তা নির্ধারণ ছিল না। এখন আমার স্টাফ থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী যারাই রাজনীতি করবে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করা হবে। হামলার ঘটনায় যারা অভিযুক্ত আছে সে ছাত্রদল না, শুধু যেকোনো রাজনৈতিক দলের হোক তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাস খোলার পর পড়াশোনার পরিবেশ অনুকূলে থাকবে বলে মনে হয়?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: আমি মনে করি, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমরা তাদেরকে এটি বুঝাতে সক্ষম হবো। আমরা তাদেরকে বাহিরের এবং ভিতরের আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য সচেষ্ট ছিলাম। আমার বিশ্বাস আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনুকূল একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারবো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শোনা যাচ্ছে ছাত্রজীবনে আপনি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন, এই বিষয়ে কী বলবেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: শতভাগ না, এটা হাজার ভাগ মিথ্যা তথ্য। আমি ৪ বছর এই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করেছি তখনকার ছাত্রদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে আমি কোন দিন কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম না।
অনেকে বলছে আমি ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। সেই ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতি ছিল আমার বন্ধু সে নাম ধরে প্রকাশ করেছে ওই কমিটির তালিকা। সেই তালিকার কোথাও আমার নাম নেই। আমি ছিলাম ফজলুল হক হলে সেই খান জাহান হলে। এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। আমরা নিজেরা অনেক কিছু বলি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একটি ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ঢুকতে আপনি অনুমতি দেননি, এই বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: আমি ছাত্রদের সাথে যখন দুপুর বেলায় কথা বলি। আমি রেজিস্ট্রারকে দিয়ে সকল থানায় কথা বলি প্রশাসনকে আসতে বলি। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে একাধিকার বলেছি আমার ছাত্রদের ওপর হামলা করা হচ্ছে আপনারা ক্যাম্পাসে আসেন। কিন্তু তারা বাহিরে থেকে জানায় আমরা আসতেছি। তারা ক্যাম্পাসের ভিতর আসতে কেন দেরি করলো আমি তা বুঝতেছি না। আমি সবাইকে ফোন দিয়ে হাজার বার রিকোয়েস্ট করেছি আপনারা আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিন। আমি শুধুমাত্র তাদের পায়ে ধরা বাকি ছিল। আমি নিজে মবের ভিতর তিনবার শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি।
ভিডিওতে যে আর্মি অফিসার বলেছেন যে আমি না করেছি। আমি তাকে পরেরদিন সকালে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছি আমি কি আপনাকে না করেছি। তিনি বলেছেন না আপনি কেন আমাদের না করবেন। আমার কোনো দুর্বলতা ছিল না। আমি সব সময় চেয়েছি আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সেদিনের ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে কতটুকু জানতে পেরেছেন, হামলায় দায় কাদের আছে মনে করেন? তদন্তে কি পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: ওই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় কারা জড়িত এটা আমি বলতে পারবো না। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি কমিটির রিপোর্ট আসলে আমরা বলতে পারবো। তবে পত্র-পত্রিকায় যা দেখেছি এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে যা জানতে পেরেছি। তারা আমার কাছে অভিযোগ করেছে, ঘটনার এক/দুই দিন আগে ছাত্রদল তাদের সদস্য ফরম বিতরণ করেছে এর প্রতিবাদ স্বরূপ আমার সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে র্যালি নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমার সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেছে এটা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। যেহেতু আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত—তাদের জন্য আপনার বার্তা কী?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলতে চাই। তোমরা আমাদের ওপর আস্থা রাখো আমরা অবশ্যই পারবো তাদের নিরাপত্তা দিতে। তোমরা সহযোগিতা করলে আমাদের ক্যাম্পাসে আবারও পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঐ দিন আপনার সাথে কি ঘটেছিল?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ: আমি আমার ক্যাম্পাসকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু ওই আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে যেভাবে হেনস্তা করেছে, এতে আমি খুব মর্মাহত। তারা প্রথমে আমার শার্ট ধরে টানাহেঁচড়া করে, এরপর আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন আমার হাত কেটে যায়।
আমাকে যারা আক্রমণ করেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না, আমি জানি না। তবে তারা যেহেতু আমার শিক্ষার্থী তাই আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি মনে করছি তারা হয়তো ভুল করে এমনটি করেছে।