Image description

আগামী নির্বাচন, সম্ভাব্য রাজনৈতিক মেরুকরণ, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে জামায়াতের ভূমিকাসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ১৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর হেড অব রিপোর্টিং টিপু সুলতান ও বিশেষ প্রতিনিধি সেলিম জাহিদ

প্রথম আলো

বিএনপি এ বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাইছে। জামায়াত কি চায়?

শফিকুর রহমান: বিএনপি তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। তারা গত বছরের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ দাবি জানিয়েছিল যে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই। এরপর তারা দাবি জানিয়েছিল ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন। পরে তারা দাবি জানিয়েছিল, ৫ আগস্ট, ২০২৫–এর মধ্যে নির্বাচন চাই। এখন তারা বলছে, জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন চাই। আবার তাদের কেউ কেউ বলছেন যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। বিএনপি আগে একটা জায়গা ঠিক করলে জাতির জন্য ভালো হয়। আমরা তো ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাচ্ছি।

প্রথম আলো

আপনারা কী চাইছেন?

শফিকুর রহমান: আমরা কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ দিইনি। মিডিয়ার সামনে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে বলেছি, প্রধান উপদেষ্টা একটা আন্দাজ দিয়েছেন, এ বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে। আমরা বলেছি, এটাকে আমরা অযৌক্তিক সময় মনে করি না, এটা হতে পারে। তবে অবশ্যই সময় কাটানোর জন্য এ সময়টা নয়। যৌক্তিক সংস্কারের যে বিষয়, সংস্কার যদি এর আগেও শেষ হতে পারে, যেকোনো সময় নির্বাচন হলে আমাদের আপত্তি নেই।

প্রথম আলো

আপনি সেদিন সিলেটে বলেছেন, মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হবে। আপনারা এটা চান না।

শফিকুর রহমান: রাইট। আমরা বলছি, বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজমান, এই অবস্থায় যদি নির্বাচন হয়, তাহলে এটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না এবং এটা নির্বাচনের জেনোসাইড হবে।

প্রথম আলো

কী আশঙ্কা থেকে এ কথাটা বলছেন?

শফিকুর রহমান: আশঙ্কা হচ্ছে, এখনো আমাদের বহু জায়গায় সংস্কার যেগুলো হওয়ার কথা—যেমন আমাদের ভোটার তালিকা এখনো তৈরি হয়নি, হালনাগাদ হয়নি। যাঁরা বিগত ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি বা যাঁদের বয়স পরে ম্যাচিউরড হয়েছে, তাঁদের বিষয়টা এখনো কমপ্লিট হয়নি। প্রবাসীরা আমাদের অংশ। এ দেশের উন্নয়নের অংশীদার এবং এ মাটি তাঁদেরও। তাঁদের ভোটটা এখনো নিশ্চিত হয়নি। অল্প কিছু প্রবাসীর ভোট আছে, বাকিদের নেই। আমরা বলেছি যে প্রবাসীদের ভোটও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এবার স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে দেশের ভেতরে ও বাইরে সবাই তো আন্দোলনের অংশীদার ছিলেন। বাইরের তাঁরা ভেতরের চেয়ে কম ঝুঁকি নেননি। অনেকে দেশের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারফর্ম করেছেন।

প্রথম আলো

আপনারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখের কথা বলছেন না। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে জামায়াত।

শফিকুর রহমান: এখানে দুটো কথা। একটা হচ্ছে আমাদের ব্যাপারে অপপ্রচার হচ্ছে যে আমরা নির্বাচন চাই না। আমরা নির্বাচন চাই এবং আমাদের প্রস্তুতিও আছে। জাতিকে এই মেসেজটা আমাদের দেওয়া দরকার। দুই নম্বর হচ্ছে, নির্বাচনের ফুল পলিসি এখনো কিন্তু পাকাপোক্ত হয়নি। নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে আসবে, তখন অনেক পোলারাইজেশন (মেরুকরণ) হবে। সেই সবকিছু মাথায় নিয়ে এটি হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক তালিকা এবং এই তালিকা অফিশিয়াল নয়।

প্রথম আলো

আপনি সম্প্রতি ফেনীতে এক কর্মসূচিতে বলেছেন, এখন অনেকে আবার জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা শুরু করেছে। তারপরই বলেছেন, ‘আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না, ধৈর্যের পরীক্ষা নিলে আবার বিস্ফোরণ হবে।’ কার উদ্দেশে কথাগুলো বললেন?

শফিকুর রহমান: যারাই এ রকম করবে, যারা অনাকাঙ্ক্ষিত, অসত্য সমালোচনা করবে, তাদের ব্যাপারে আমরাও তখন মুখ খুলতে বাধ্য হব। আমাদের ঝুড়িতেও অনেক কিছু আছে। একটা ধৈর্যশীল দল হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থে সবকিছু আমরা সব সময় বলি না। বলতে গেলে অনেক কিছু বলার আছে, আমরা তখন বলতে বাধ্য হব। এতে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে এবং এর দায় তাদেরই নিতে হবে, যারা এ রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আমাদের বাধ্য করবে তাদের কথার জবাব দিতে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রথম আলো

আমরা দেখছি, সময় যতই নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, ততই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বাড়ছে। আপনারা তো দীর্ঘদিন এক জোটে ছিলেন, একসঙ্গে সরকারেও ছিলেন। দূরত্বের কারণ কী?

শফিকুর রহমান: কোনো দূরত্ব নেই। প্রতিটি দলের নিজস্ব কর্মসূচি ও পলিসি থাকে। সেই পলিসি ও কর্মসূচির দিক থেকে বিভিন্ন দল জনগণের কাছে আসবে, জনগণ বাছবিচার করে দেখবে। শুধু বক্তব্য নয়, বক্তব্যের সঙ্গে প্রতিটি দলের পারফরম্যান্সকেও বিবেচনায় নেবে।

প্রথম আলো

কিন্তু বিএনপি ও জামায়াতের সাম্প্রতিক বিভিন্ন তৎপরতায় অনেকে বলছেন যে এই বিরোধটা অনেকটা আদর্শিক, যার উৎপত্তি ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।

যারাই এ রকম করবে, যারা অনাকাঙ্ক্ষিত, অসত্য সমালোচনা করবে, তাদের ব্যাপারে আমরাও তখন মুখ খুলতে বাধ্য হব। আমাদের ঝুড়িতেও অনেক কিছু আছে। একটা ধৈর্যশীল দল হিসেবে দেশ এবং জাতির স্বার্থে সবকিছু আমরা সব সময় বলি না।
শফিকুর রহমান, জামায়াতের আমির

শফিকুর রহমান: এ জন্য বিএনপি এখন আমাদের বিরোধিতা করে, এটা বলতে চান? না; আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই না। এটাই যদি হতো, তাহলে ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি সরকার গঠনের মতো আসন পায়নি, তখন তাহলে তারা আমাদের সমর্থন কেন চেয়েছিল। তখন যিনি নেত্রী ছিলেন, তিনি তো এখনো জীবিত আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো তো তিনি দলের চেয়ারপারসন। তখন তো জামায়াত কোনো স্বার্থ-সুবিধার জন্য বিএনপিকে ওই সমর্থন দেয়নি, দেশের স্বার্থেই সমর্থনটা দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন দেশকে অতিষ্ঠ করে তুলল, তখন দূর থেকে শুধু সমর্থন দেওয়া নয়, একটা লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে চারদলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। কই, তখন তো এ প্রশ্ন আসেনি। এখন কেন এ প্রশ্ন আসছে, এর জবাব তো তারা (বিএনপি) দেবে।

প্রথম আলো

এক অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন, ‘আসুন, পচা পেছনটাকে (অতীত) পেছনে ফেলে দিই। এটা নিয়ে আর চর্চা না করি।’ পচা অতীত বলতে কী বুঝিয়েছেন?

শফিকুর রহমান: অনেক কিছু, একবারে সাতচল্লিশ সালের পর থেকে। সাতচল্লিশ না হলে একাত্তর হতো না, একাত্তর না হলে চব্বিশের এই পরিবর্তন আসত না। এটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মাঝখানে বায়ান্নও অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিল। একটার পর একটা ডেভেলপমেন্ট হয়েই আজকের এই বাংলাদেশ। সেই সাতচল্লিশ সালে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তান হওয়ার পর, তাঁরা তো জাতির সঙ্গে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করেননি। করেননি বলেই ডিসপ্যারিটি (অসমতা) দেখা দিল। করেননি বলেই জনগণের ভোটের অধিকার স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণে অনেক কিছু হয়ে গেল। এবং আলহামদুলিল্লাহ তারই হাত ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীনতার পর কি অপকর্ম হয়নি? স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসে প্রথম সরকারই সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল করল। তারা রক্ষীবাহিনী সৃষ্টি করে আমাদের সামরিক বাহিনীকে গুরুত্বহীন করে তোলার চেষ্টা করল। তারা রক্ষীবাহিনী গঠন করে ৩৪ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে খুন করল, যার মধ্যে ১০ হাজারের মতো ছিল মুক্তিযোদ্ধা। এগুলো কালো অধ্যায় না?

আমরা এগুলোর চর্চা করি না। কিন্তু আমাদের সামনে অনেকে একাত্তরের প্রশ্ন তোলেন। আমি ভেবে পাই না যে জামায়াতে ইসলামী আগেও ভালো ছিল, পরেও ভালো ছিল, শুধু এই কয় দিনের (মুক্তিযুদ্ধকালীন) জন্য খারাপ হয়ে গেল কীভাবে! স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। এমনকি শেখ মুজিব সাহেব যখন ক্ষমতায়, ২৪ হাজার মামলা হয়েছে বিভিন্ন অপরাধে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর নাম-নিশানা নেই, যাদের ওনারা বিচার-আচার করলেন। এরপর তিনি সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলেন চারটি অপরাধ ছাড়া। সেগুলো সুনির্দিষ্ট ছিল এবং এরা এজাহারভুক্ত আসামি ছিল। সেখানেও ওনাদের নাম নেই। উনি (শেখ মুজিব) যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করলেন, সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জনের নাম চূড়ান্ত করলেন। এরপর হঠাৎ গণ-আদালত, হঠাৎ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় (শেখ হাসিনা) বললেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। করেন, ভালো কথা। যুদ্ধাপরাধীর তালিকা তো শেখ মুজিবুর রহমান করে গেছেন। তাহলে কথা বলেন পাকিস্তানের সঙ্গে যে তোমাদের সঙ্গে আমাদের ত্রিমুখী চুক্তি হয়েছিল, তার কী হলো। আমরা তার বিচার করতে চাই বা দেখতে চাই। সেটা না করে নিজের দেশের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করলেন। এমন বিচার সাজালেন, সেখানে সামনে চলে এল স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সামনে চলে এল সেইফ হাউস, সামনে চলে এল বিচারপতির বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা। এগুলোর পরে সারা দুনিয়া থেকে আপত্তি এল বিচারের ওপর। এমনকি দেখা গেল, সাক্ষীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাইজ্যাক করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হলো। এসব ঘটনার পর এটাকে কেউ বিচার বলবে?

প্রথম আলো

আপনি তো বিচারের ব্যত্যয় নিয়ে বলছেন।

শফিকুর রহমান: বিচারের ব্যত্যয় নয়, তারা তো প্রমাণ করতে পারেনি সন্দেহাতীতভাবে যে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এমন বিচার সাজালেন, সেখানে সামনে চলে এল স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সামনে চলে এল সেইফ হাউস, সামনে চলে এল বিচারপতির বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা। এগুলোর পরে সারা দুনিয়া থেকে আপত্তি এল বিচারের ওপর। এমনকি দেখা গেল, সাক্ষীকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাইজ্যাক করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হলো। এসব ঘটনার পর এটাকে কেউ বিচার বলবে?
শফিকুর রহমান, জামায়াতের আমির
প্রথম আলো

বলছিলাম ‘পচা অতীতের’ কথা। সেটা কি একাত্তরকে বুঝিয়েছেন?

শফিকুর রহমান: এই সব কটিই পচা অতীত। একাত্তরে আমি যদি কোনো অপরাধ করি, সেটাও পচা অতীত। একাত্তরের পর যারা অপরাধ করেছে, সেগুলোও পচা অতীত। কিন্তু আমার আফসোসের জায়গা হলো, আপনারা সাংবাদিকেরা একবারও প্রশ্ন তোলেননি, এই স্বাধীন দেশে কেন ৩৪ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হলো। সেটার প্রশ্ন তো আপনারা তোলেন না যে এত বড় অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আপনারা বলতে আমি শুধু প্রথম আলোকে বলছি না, আমি পুরো গণমাধ্যমকে বলছি।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রথম আলো

লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে আপনি বলেছিলেন, একাত্তরে জামায়াত কোনো ভুল করলে সেটি যদি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন। আপনারা কি এখনো মনে করছেন একাত্তরে জামায়াতের অবস্থান ঠিক ছিল?

শফিকুর রহমান: জামায়াতের অবস্থান একাত্তর সালে কী ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম এ জলিল তাঁর লেখা ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’ বইয়ে কী লিখেছিলেন। লিখেছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমাকে ভাবতে হয় যে একাত্তর সালে কোন চিন্তায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। এ ধরনের স্বাধীনতার জন্যই কি যুদ্ধে গিয়েছিলাম? তখন যাদের রাজাকার, আলবদর বলি, আলশামস বলি; তাহলে তারা তখন যা বলেছিল, সেটাই কি সত্য? তিনি তো একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি তো জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকও ছিলেন না।

আমার আফসোসের জায়গা হলো, আপনারা সাংবাদিকেরা একবারও প্রশ্ন তোলেননি, এই স্বাধীন দেশে কেন ৩৪ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হলো। সেটার প্রশ্ন তো আপনারা তোলেন না যে এত বড় অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
শফিকুর রহমান, জামায়াতের আমির
প্রথম আলো

তার মানে কি, আপনাদের অবস্থান...

শফিকুর রহমান: না, আমাদের অবস্থান ছিল নীতিগত প্রশ্নে। আমরা চেয়েছিলাম ভারতের আনুকূল্যে দেশ স্বাধীন না হোক। আমরা চেয়েছিলাম ভোটের অধিকার আনতে পাকিস্তানিদের বাধ্য করা হোক। এরপরও যদি না হয়, বহু দেশ গেরিলাযুদ্ধ করেও মুক্ত হয়েছে। আমরা কারও দয়া-অনুকম্পায় যদি (স্বাধীন) করি, তাহলে এক বিপদ ঘাড় থেকে সরবে, এর চেয়ে বড় বিপদ আমাদের ঘাড়ে চাপবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ৫৩ বছরে কী প্রমাণ করে? আজকে কেন বাংলাদেশের মানুষকে শুনতে হয় যে অমুক দেশ অমুক দলকে চায় না। অমুক দেশ না চাইলে অমুক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এটা কি স্বাধীন দেশের বৈশিষ্ট্য? আমাদের বর্তমান যুবসমাজ এসব কথা শুনতে চায় না।

প্রথম আলো

এটা তো সত্য যে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশে হত্যাযজ্ঞ ও বীভৎসতা চালিয়েছিল।

শফিকুর রহমান: হ্যাঁ, সব সত্য। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের আগেও হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বরের পরেও হয়েছে।

প্রথম আলো

কিন্তু জামায়াত কি কখনো এর নিন্দা জানিয়েছিল? স্বাধীনতার এত বছর পরও কি জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে?

শফিকুর রহমান: দেখুন, সেই সময়টায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মুখপাত্র ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। তাঁকে নাগরিকত্বের মামলায় যখন জেলে নেওয়া হলো, তিনি আদালতে থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে, মুক্তি পেয়ে বায়তুল মোকাররমে জাতিকে অ্যাড্রেস করেছেন। তিনি বলেছেন যে জাতি যদি আমাদের কোনো আচরণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ে থাকে, সামান্যতম ক্ষতিও যদি হয়ে থাকে, আমি ক্ষমা চাই। তার চেয়ে বড় কথা, কী আমার হবে? আমি তো তখন শিশু, দল করার বয়সও আমার হয়নি। আর তিনি ছিলেন আমির সেই সময়ে। এখন আপনি বলবেন, তিনি তো তাঁর ব্যাপারে বলেছেন, তিনি তো সংগঠনের দায় নিয়ে কথা বলেননি। আমি যখন কোনো কথা বলি, তখন কি সংগঠনকে আলাদা রাখি? সব দলের প্রধানকে বলা হয় প্রতিষ্ঠান। মানে তিনি ব্যক্তি নন, তিনি প্রতিষ্ঠান, তিনিই দল।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানছবি: তানভীর আহাম্মেদ
প্রথম আলো

তার মানে বলতে চাইছেন গোলাম আযম ক্ষমা চেয়েছেন?

শফিকুর রহমান: হ্যাঁ, ক্ষমা না, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এখন অনেকে বলেন, সে রকম একটা ক্ষমা বা দুঃখ প্রকাশ আপনারা করেন। আমি যদি অপরাধ করি, যে কথাটা লন্ডনে আমি বলেছি, সে কথাটা এখনো আমি দৃঢ়ভাবে বলছি; যদি সে রকম কোনো অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই ক্ষমা চাইব। এই ক্ষেত্রে আমার কোনো দুর্বলতা নেই। কিন্তু আমাকে জোর করে বলা হবে যে তোমাকে এটাই মানতে হবে, এটাই তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তুমি দোষী। আমি এটা মানব না।

এখন আমি যদি বলি, চব্বিশ একাত্তরের সমান, এটা তো ঠিক হবে না। চব্বিশ চব্বিশই, একাত্তর একাত্তরই। একাত্তরে পাকিস্তানের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি এবং আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর চব্বিশে এসে স্বাধীন বাংলাদেশে যে বৈষম্য এবং যে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল, সেটার হাত থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে।
প্রথম আলো

এখন অনেকেই বলছেন, জামায়াত চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছে। এটাকে আপনাদের একাত্তরের ভূমিকা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

শফিকুর রহমান: এখানে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের (১৯৪৭) যাঁরা নেতা ছিলেন, কর্মী ছিলেন, তাঁদের অন্তরে ধারণ করি। তাঁদের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন, ভাসানী সাহেব ছিলেন, গোলাম আযম সাহেব ছিলেন, অনেকেই ছিলেন। আমি তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে অন্তরে ধারণ করি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন যাঁরা সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদেরও আমি ধারণ করি। সাতচল্লিশ কখনো বায়ান্ন নয়, বায়ান্ন কখনো সাতচল্লিশ নয়। আবার একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের পজিশন আর চব্বিশের পজিশন এক নয়। দস্তুর মতো একটা বাহিনী, সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে দেশবাসীর বিরুদ্ধে এবং যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা দেশের মাটিতে টিকতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। সেখান থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের ফিনিশিংটা তাঁদের হাতে হলে শতভাগ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতাম। ফিনিশিংটা হয়েছে অন্য জায়গায়। যার কারণে যুদ্ধের ফসলও চলে গেছে ওই জায়গায়, সঙ্গে সঙ্গে যে ফসলটা পাওয়ার কথা ছিল।

এখন আমি যদি বলি, চব্বিশ একাত্তরের সমান, এটা তো ঠিক হবে না। চব্বিশ চব্বিশই, একাত্তর একাত্তরই। একাত্তরে পাকিস্তানের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি এবং আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর চব্বিশে এসে স্বাধীন বাংলাদেশে যে বৈষম্য এবং যে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়েছিল, সেটার হাত থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। নতুন কোনো বাংলাদেশ হয়নি। তখন পূর্ব পাকিস্তানের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ হয়েছে। এখন তো কোনো নাম পরিবর্তন হয়নি। সেই দেশ, মাটি, সেই মানুষগুলোই আছে। দুইটাকে এক করলে হবে না। কিন্তু চব্বিশের গুরুত্বটা কম নয়।

প্রথম আলো

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে একটা বিষয় আছে যে তারা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সহযোগিতা পায়নি।

শফিকুর রহমান: তারা (জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল) দফায় দফায় (বাংলাদেশে) এসেছে। আমি জিনিসটা চেক করে দেখলাম, যে সময়টায় তারা পাঁচ বা সাতবার বিভিন্ন টিমে এসেছে, তাদের এখানে তো সমন্বয় করেন ইউএন এনভয় (জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী) যে আছেন, তিনি। ওনার সঙ্গে তো আমাদের রেগুলার যোগাযোগ আছে। আবার আমরা শুনছি যে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতিকে বিভিন্ন সময় তাঁরা পেয়েছেন, তাঁর ইয়ে (সাক্ষাৎকার) নিয়েছে। তারপরও আমাদের পেল না কীভাবে, এটা আমরা বুঝলাম না। আমাদের একটা অফিস আছে। অফিসে এলে তো নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে দেখা হতো। আবার তাদের এনভয় যিনি আছেন, তিনিও যদি আমাদের বলতেন; ...এটা কেমনে মিস হয়ে গেল জানি না। হতে পারে, আমরা এতটা খেয়াল করিনি। অথবা হতে পারে তাঁরা আরও সিরিয়াস হলে আমাদের পেতেন। তাঁরা সেটা করেননি।

প্রথম আলো

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যত বেশি সময় নেবে, তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। আপনারা কী দেখেন?

শফিকুর রহমান: ষড়যন্ত্র তো দেশের বিরুদ্ধে অনেক আছে। এখন তারেক সাহেব কী বলেছেন, সেটা উনি ভালো বলতে পারবেন। আমি তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার রাখি না। আর মির্জা ফখরুল সাহেব যেটা বলেছেন, যত দিন যাবে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এটাও উনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। আমরা কী দেখি, আমরা দেখি চব্বিশের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ার পর তারা (আওয়ামী লীগ) এক দিনের জন্যও বিশ্রাম নেয় নাই। দেশকে অস্থির করে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেটাকে দেশবাসী সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র মনে করে। অনেকগুলো ঘটনা এবং সব ঘটনা পরে তদন্ত করে দেখা গেছে, এটার নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগের লোকেরা।

প্রথম আলো

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সোচ্চার। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কী?

শফিকুর রহমান: আমরা তো বহু আগে বলেছি, আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা একটি ফ্যাসিস্ট দল। ফ্যাসিজমের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করে, তারা নিজের দেশ শাসন করতে পারে, কিন্তু অন্য দলের জন্য প্রোপার স্পেস দেয়। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো দলকে স্পেস দেয়নি। আপনি তিয়াত্তরে দেখেন, কী করেছে। একেবারে পঁচাত্তর পর্যন্ত কাউকেই স্পেস দেয়নি। আবার ’৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছে, একের বদলে দশটা লাশ ফেলার ঘোষণা সরকারপ্রধান দিয়েছেন।

প্রথম আলো

তাহলে কি নিষিদ্ধই সমাধান?

শফিকুর রহমান: এবার তারা কী করেছে? ছাত্ররা একটা ন্যায্য অধিকার নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। সেই ইস্যু তাঁরা মানলেন, যখন সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কথা না, জাতিসংঘের যে রিপোর্টটা প্রকাশ হয়েছে, সেই রিপোর্ট কী বলেছে? অথচ সেদিনও শেখ হাসিনা বলেছেন, আবু সাঈদের ঘটনা সুপার এডিট। এটা কি আবু সাঈদের আত্মার সঙ্গে তামাশা নয়? চাক্ষুষ যারা দেখল, দুনিয়া যা দেখল টেলিভিশনের স্ক্রিনে। আপনি সেটা ডিনাই (অস্বীকার) করছেন। তো এই দল কী চায়। তারা আসলেই রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকতে চায়? নাকি অন্য কিছু চায়। তারাই বলুক সেটা। নিষিদ্ধ তো হলে হবে, থাকলে থাকবে; এটা পরের বিষয়। আগে তারা ঠিক করুক, তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে পারফর্ম করবে কি না।

প্রথম দিকে কোনো দলই সেইভাবে যুক্ত ছিল না। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালাল, ছেলে-মেয়ে উভয়কে নাজেহাল করল, তার পর থেকে দলগুলো আস্তে আস্তে সম্পৃক্ত হয়। আমরা তখন বিবৃতির মাধ্যমে এ আন্দোলনকে সমর্থন করি।
শফিকুর রহমান, জামায়াতের আমির
প্রথম আলো

জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ছিল অগ্রভাগে। তাতে বিভিন্ন সংগঠন, দল-মত ও শ্রেণি-পেশার মানুষও যুক্ত হয়। এতে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের যুক্ততা কতটা ছিল?

শফিকুর রহমান: প্রথম দিকে কোনো দলই সেইভাবে যুক্ত ছিল না। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালাল, ছেলে-মেয়ে উভয়কে নাজেহাল করল, তার পর থেকে দলগুলো আস্তে আস্তে সম্পৃক্ত হয়। আমরা তখন বিবৃতির মাধ্যমে এ আন্দোলনকে সমর্থন করি। ছাত্রসমাজ যারা আছে (ছাত্রশিবির) তাদের বলি, তোমরা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে থাকো। তারা দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ের শেষের দিকে যখন একদম বেপরোয়া হয়ে গুলির পর গুলি শুরু হয়ে গেল, তখন আমরা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। এর মধ্যে তো দেখলেন আমাদের নিষিদ্ধ করা হলো।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানফাইল ছবি
প্রথম আলো

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এখন শিবিরের অনেক নেতা প্রকাশ্যে আসার পর দেখা যাচ্ছে তারা ছাত্রলীগের পদেও ছিল। এটা কি কোনো কৌশল বা দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল?

শফিকুর রহমান: আমাদের দলের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। দুজন-তিনজনের ব্যাপারে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা বলেছেন, প্রমাণ কী। বলা হয়েছে একজনের নাম তাদের (ছাত্রলীগের) কমিটিতে ছিল। সে বলেছে যে দেখেন ওই সময়টা কেমন ছিল। আবরার ফাহাদ তো বলেনি যে সে শিবির করে। সে নামাজ পড়ে, আর অন্যদের নামাজ পড়তে বলত। সে ফেনী নদীর পানি নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এ জন্য তাকে মেরেই ফেলল। বিশ্বজিৎ কার ক্ষতি করেছিল? তাকে শিবির বলে কোপানো হচ্ছিল। ছেলেটা হাত জোড় করে বলেছে, আমি শিবির না, আমি হিন্দু। বলল তুই মিথ্যুক, তাকে মেরেই ফেলল। এ রকম একটা–দুইটা ঘটনা নয়; ফরহাদ (শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি) পরিষ্কারভাবে বলেছে, আমি তাদের (ছাত্রলীগের) কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাইনি।

প্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় শাখার সাবেক তিন সভাপতিসহ সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। এটাও কি কোনো পরিকল্পনার অংশ?

শফিকুর রহমান: দেখুন, মজিবুর রহমান মঞ্জু তো গিয়ে (জামায়াত থেকে বের হয়ে) আলাদা একটা দল (এবি পার্টি) করে ফেলেছেন। তিনি তো ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। এরা কি এর চেয়ে বড় নেতা? কই, আমরা মঞ্জুর বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করেছি? এমনকি মঞ্জু তাঁর দলের যে নীতি-পলিসি সাজিয়েছেন, এটা জামায়াতের নীতি-পলিসির সঙ্গে মেলে না। আমরা তো তাদেরও বিরোধিতা করি নাই। এবং মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে আরও তো কিছু ছাত্রশিবির করা লোক ওদিকে গেছে। একজন নাগরিক হিসেবে তারা যদি মনে করে ওখানে গিয়ে দেশের জন্য অধিকতর ভালো কিছু করতে পারবে, সে বিবেচনা থেকে কেউ যদি যায়, যাবে।

প্রথম আলো

একটা সময় ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, হল দখলের নানা অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে প্রতিপক্ষের রগ কাটার অভিযোগটা সবচেয়ে বহুল প্রচারিত।

শফিকুর রহমান: আমাকে মাঝেমধ্যে লোকেরা বলে। আমি বলি যে আপনার কারও রগ কাটা গেছে? বলে, জি না। তো আপনি কীভাবে জানলেন। বলে, এটা


author

Ari budin

#

Programmer, Father, Husband, I design and develop Bootstrap template, founder