Image description
 
 

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আপনার বৈঠকের উদ্দেশ্য কী ছিল?

সৈয়দ রেজাউল করীম: আমরা রাজনীতি করি দেশ ও মানুষের কল্যাণে। ইবাদতের উদ্দেশ্যে। এটা ইসলামের অংশ। ১৯৮৭ সালে আমার প্রয়াত বাবা মুফতি সৈয়দ ফজলুল করীম দল গঠনের পর এখন পর্যন্ত দলের কেউ সংসদে যাননি। এর মানে আমাদের শক্তি-সমর্থন নেই, তা নয়।

এ দেশের ৯২ ভাগ মানুষ মুসলিম। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও ইসলামি দলগুলো বিভক্ত। ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। বিএনপিসহ আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসিনা আমাদের ধোঁকা দিয়ে দিনের ভোট রাতে করেছেন। এরপর ২০২৪ সালে আমাদের সংসদে বিরোধী দল হওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা হাসিনার ফাঁদে আর পা দিইনি। আমরা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র চাই। বিএনপি-জামায়াত মনে করেছে, আমাদের উদ্দেশ্য কল্যাণ রাষ্ট্র হলে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে, প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। জনগণও আমাদের এই কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণায় অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। এ জন্য বিএনপি-জামায়াত মনে করেছে, তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে আমাদের এজেন্ডার সামঞ্জস্য রয়েছে। তাই তাঁরা এসেছেন। এর বাইরে কোনো উদ্দেশ্য নেই।

প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলন দীর্ঘদিন জামায়াতের সমালোচনা করে এসেছে। হঠাৎ এই বৈঠক কি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ?

সৈয়দ রেজাউল করীম: দেখুন, জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে বড়। এখানে তো আমি কোনো রাজনীতি বা কৌশল দেখি না। অন্তত আমাদের কোনো কৌশল ছিল না। জামায়াতের আমির বরিশালে এসেছেন তাঁদের সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে। সেখানে আসায় তিনি চরমোনাই দরবারে এসেছেন আমার বাবার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। তিনি মেহমান, এ জন্য তাঁকে মেহমানদারি করেছি। আমরা এক হয়ে কাজ করতে পারলে দেশের মানুষের খেদমত করতে পারব।

প্রথম আলো

বিএনপির সঙ্গে ১০ দফা ঐকমত্যের বিষয়ে কিছু বলবেন?

সৈয়দ রেজাউল করীম: এটা আমি ইতিবাচক মনে করি। বিএনপি আমাদের মতের সঙ্গে একমত হওয়ায় আমাদের দলের সবাই খুশি। এটা বলব, ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতিতে একটি বড় অর্জন।

প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারে সময় দিতে চায়। কিন্তু বিএনপি ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর সংস্কারের পক্ষে। এ বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?

সৈয়দ রেজাউল করীম: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আমাকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে আমরা দ্রুত নির্বাচন দাবি করি। কিন্তু আমরা তাঁকে স্পষ্ট বলেছি, আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা দিয়েছি যে দেড় বছর সময় দিতে হবে সংস্কারের জন্য। ইতিমধ্যে ছয় মাস হয়ে গেছে। সামনে এক বছর। তাই এই ওয়াদার খেলাপ করা অসম্ভব।

প্রথম আলো

১০ দফার লক্ষ্য কি শুধু আওয়ামী লীগবিরোধী ঐক্য, নাকি বৃহৎ রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্য?

সৈয়দ রেজাউল করীম: এটা অবশ্যই বৃহৎ রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য। দেশে আর যাতে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়, সে জন্য আওয়ামী লীগ বাদে সব দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

প্রথম আলো

ইসলামী আন্দোলন শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠার পক্ষে। যে ১০টি বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে, তাতে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ খুব স্পষ্ট নয়।

সৈয়দ রেজাউল করীম: বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে ইসলামী আন্দোলনের নীতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্যের কথা আলাপ করেছি। ১৯৮৭ সালে দল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শরিয়াহ আইনের জন্য আমাদের সংগ্রাম জারি আছে। মানুষ দেখেছে দেশের আগের সরকারগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। একমাত্র ইসলামি দলগুলোই বাকি আছে। আমাদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা একটাই—ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাঁদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফায়ও শরিয়াহ আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার কথা আছে।

প্রথম আলো

বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে কাজ করার কারণে ইসলামী আন্দোলন নিজেদের স্বকীয়তা হারানোর ঝুঁকি দেখছেন কি না?

সৈয়দ রেজাউল করীম: আমি তেমনটা মনে করি না। আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হব না। তারা বিচ্যুত হলে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

প্রথম আলো

বিএনপির সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের ঐকমত্য কি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক জোটে রূপ নেবে, নাকি এটি সাময়িক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল?

সৈয়দ রেজাউল করীম: আমরা দীর্ঘ মেয়াদে কোনো জোট করব না। সে পরিকল্পনাও নেই। আমরা কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক একটা ঐক্য গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচন।

প্রথম আলো

অতীতে জামায়াতের সমালোচনা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য কীভাবে দলের অনুসারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন?

সৈয়দ রেজাউল করীম: ইসলামি দলগুলো ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দল এ দেশ শাসন করেছে। কিন্তু তারাও দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি আনতে পারেনি। মানুষের পরিপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ জন্য ইসলামি দলগুলোর ভোটের বাক্স একটি হওয়া দরকার; যাতে ভোট ভাগ না হয়। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই ঐক্য দোষের কিছু নয়। জামায়াতও বুঝতে পেরেছে ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে উন্নত। তাই তারাও আমাদের সঙ্গে এ ধরনের ঐক্যে আগ্রহী।

প্রথম আলো

আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন প্রবর্তন আপনাদের অন্যতম দাবি। সে দাবি বাস্তবায়িত না হলে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো আপত্তি থাকবে কি?

সৈয়দ রেজাউল করীম: আমরা সবার আগে এই দাবি তুলেছি। জামায়াতও আমাদের দাবির প্রতি একমত। পৃথিবীর ৯১টি দেশে এই পদ্ধতি আছে। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়তে চাই। রাষ্ট্রযন্ত্রে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে এই পদ্ধতির বিকল্প নেই। আমরা এই দাবির পক্ষে সব সময়ই কথা বলে যাব।

প্রথম আলো

ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী জোটের কথা শোনা যাচ্ছে। এটা কত দূর?

সৈয়দ রেজাউল করীম: আমরা নিবন্ধিত সব ইসলামি দল নিয়ে একটি নির্বাচনী ঐক্য গড়তে চাই। নির্বাচনে সব দলের একটি বাক্স রাখতে চাই। এ লক্ষ্যে আমাদের শুধু জামায়াত নয়, সব ইসলামি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আরও হবে। আশা করি, আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।