ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ইরানি জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সত্য বলার সাহস। বিশ্বে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেলেও ইরানই একমাত্র দেশ, যারা আমেরিকাকে তার প্রকৃত চরিত্র অনুযায়ী মূল্যায়ন করে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি আগ্রাসনকারী, মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও উপনিবেশবাদী শক্তি যে কোনো মানবিক নীতি অনুসরণ করে না।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দেশটির ৪১তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কোরআনের শীর্ষ শিক্ষক ও আবৃত্তিকারদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। তার বক্তব্য ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সির বরাতে প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের অকপট অবস্থান
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, ইরান সেই রাষ্ট্র, যা কোনো ধরনের ভয় বা কূটনৈতিক চাপে মাথা নত করে না। আমরা আমেরিকাকে তার প্রকৃত নামে ডাকি—এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী, প্রতারক ও যুদ্ধবাজ শক্তি। তারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে এবং নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
তিনি আরও বলেন, গত ৪৬ বছর ধরে ইরান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখেছে এবং বিশ্বের দাম্ভিক শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই প্রতিরোধ ইরানকে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়েছে।
গাজার জনগণের বিজয় ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা
ভাষণের আরেক অংশে আয়াতুল্লাহ খামেনি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জনগণের সংগ্রামকে ‘অসম্ভবকে সম্ভব করার’ বাস্তব উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে কেউ ভাবত না, গাজার ছোট্ট ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তির সহযোগিতায় পরিচালিত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় এই অসম্ভব কাজটি বাস্তব হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ইরানের সত্য বলার দৃষ্টান্ত
ইরান বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে আসছে। দেশটি মনে করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে, যা দুর্বল দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
খামেনি বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। কিন্তু ইরান এই ভয়কে জয় করেছে। আমরা সত্য বলার সাহস রাখি এবং সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
ইরানের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান তাদের স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবে বলে উল্লেখ করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি বলেন, ইরানি জাতি কখনো সাম্রাজ্যবাদীদের সামনে মাথা নত করবে না। আমাদের প্রতিরোধ, ধৈর্য এবং আদর্শিক অবস্থানই আমাদের শক্তি ও অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই অকপট অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দেশটির ভূমিকা আরও সুসংহত করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বিশ্বশক্তির সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।