ইসরায়েলি অবরোধের নিষ্ঠুর থাবায় গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে। প্রয়োজনীয় ওষুধ আর চিকিৎসার অভাবে হাজার হাজার অসহায় মানুষ হয় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, নয়তো চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বার্শ উপত্যকাটির হাসপাতালগুলোর বর্তমান অবস্থাকে ‘মর্মান্তিক ও ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়ায় চিকিৎসকরা চোখের সামনে রোগীদের মারা যেতে দেখছেন, কিন্তু তাদের করার মতো কিছুই থাকছে না।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই শেষ হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, এমনকি রোগীদের অজ্ঞান করার ওষুধ বা ব্যান্ডেজ করার গজেরও চরম সংকট চলছে। অক্টোবর মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ইসরায়েল চুক্তিমতো পর্যাপ্ত মেডিকেল ট্রাক গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকা আর জেনারেটর চালানোর জ্বালানি সংকটে হাসপাতালগুলো এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এই ভয়াবহতা গত ৩০ বছরের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে গাজার অসহায় শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা। চিকিৎসার অভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে অন্ধ হওয়ার পথে। মানবেতর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা ৪০ হাজার গর্ভবতী নারী ও তাদের অনাগত শিশুরা চরম পুষ্টিহীনতা আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছে। ৫ বছরের কম বয়সী অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু এখন তীব্র অপুষ্টির শিকার। এছাড়া গত দুই বছরের যুদ্ধে গাজার প্রায় সবকটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৭০০-এর বেশি নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মী।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যাওয়ার অপেক্ষায় এখন প্রায় ২০ হাজার রোগী প্রহর গুনছেন, যাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ জনই নিষ্পাপ শিশু। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এই তালিকার ১ হাজার ১৫৬ জন রোগী বিদেশের মাটিতে পা রাখার আগেই প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে আরও ৩ হাজার ৭০০ রোগীর অবস্থা এতই সংকটাপন্ন যে, তাদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত এখন মূল্যবান। অবরুদ্ধ এই জনপদে মৃত্যুর মিছিল থামাতে অবিলম্বে সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ।