ক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জড়িত থাকার বিস্ফোরক মামলাগুলোর নথি ও ছবি প্রকাশ করতে শুরু করেছে। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির পাতায় থাকা তথ্য কালো কালি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বিচার বিভাগ বলছে, ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই তা করা হয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির।
প্রকাশিত ছবির মধ্যে রয়েছে সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও মিক জ্যাগারের মতো বেশ কিছু উজ্জ্বল নক্ষত্রের ব্যক্তিগত সম্ভার এবং এপস্টেইনের বৃত্তের মধ্যে পড়া সংগীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের মতো ব্যক্তিত্বও।
তবে প্রকাশিত নথিগুলোতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সংশয় তৈরি হয়েছে যে, আদৌ উচ্চপর্যায়ের ষড়যন্ত্র ও কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনা প্রকাশের এই উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে যাবে কি না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২৫৪ জন ম্যাসাজকারীর সাত পৃষ্ঠার একটি তালিকার সবগুলো নামই কালো কালিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে এবং পাশে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘সম্ভাব্য ভিকটিমদের তথ্য সুরক্ষার জন্য অস্পষ্ট করা হলো’।
এই ফাইলগুলো এপস্টেইনের সঙ্গে ধনী, বিখ্যাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যার মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও রয়েছেন। একটি ফাইলে নগ্ন ও স্বল্পবসনা ব্যক্তিদের ডজনখানেক ছবি রয়েছে। অন্য একটি ছবিতে এপস্টেইনের সঙ্গে তার সঙ্গীদের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পোজ দিতে দেখা যায়, যদিও তাদের মুখগুলো অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
আগে কখনো প্রকাশ না হওয়া একটি ছবিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে হট টাবে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়, তবে ছবির কিছু অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি ছবিতে ক্লিনটনকে কালো চুলের এক নারীর সঙ্গে সাঁতার কাটতে দেখা যায়, ধারণা করা হচ্ছে তিনি এপস্টেইনের সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। আরেকটি ছবিতে ম্যাক্সওয়েলকে যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘প্রিন্স’ অ্যান্ড্রুর সঙ্গে দেখা গেছে। ছবিতে দেখা যায়, অ্যান্ড্রু পাঁচ ব্যক্তির পায়ের ওপর শুয়ে আছেন।
হোয়াইট হাউস অবশ্য ক্লিনটনের বিষয়টি লুফে নিতে দেরি করেনি। কমিউনিকেশন ডিরেক্টর স্টিভেন চেউং এ বিষয়ে এক পোস্টে বলেন, বিল ক্লিন্টন কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই চিল করছেন, তিনি জানতেনই না যে…
নথি প্রকাশের বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, এপস্টেইন ফাইল প্রকাশ ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্টের ম্যান্ডেট অনুযায়ী হয়নি। নতুন ফেডারেল আইন অনুযায়ী সরকারের কাছে থাকা পুরো কেস ফাইল শুক্রবারের মধ্যে জনসমক্ষে প্রকাশের কথা ছিল, তবে তা আইনি দিক ও ভুক্তভোগীদের গোপনীয়তা রক্ষার খাতিরে সীমিত রাখা যাবে।
এ বিষয়ে সিনেটের মাইনরিটি নেতা চাক শুমার বলেন, বিচার বিভাগের প্রকাশিত সেন্সর করা নথিপত্রগুলো সবকিছু প্রমাণের জন্য একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তবে কালো কালিতে ঢাকা পৃষ্ঠা প্রকাশ করা স্বচ্ছতার চেতনা ও আইনের পরিপন্থি।
কংগ্রেসের অন্যান্য ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলছেন, ২০১৯ সালে এপস্টেইনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে একটি খসড়া অভিযোগপত্র সরকার আটকে রেখেছে। তাদের দাবি এর সঙ্গে এপস্টেইনের সেই আলোচিত ‘ধর্ষণ দ্বীপ’ বা রেপ আইল্যান্ডে অবস্থানকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম জড়িয়ে রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মাসের পর মাস এই এপস্টেইন সংক্রান্ত তদন্তের ফাইলগুলো আটকে রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে এমনকি নিজ দলের সদস্যদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন তিনি। গত মাসে ট্রাম্প ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিগুলো প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রেখে আইনে স্বাক্ষর করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল টড ব্ল্যাঞ্চ জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে কয়েক লাখ নথি প্রকাশ করা হবে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও নথি প্রকাশ হতে যাচ্ছে। তিনি জানান, এপস্টেইনের শত শত ভিকটিমের পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে অনেক ফাইল অস্পষ্ট করা হয়েছে।