Image description

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। তাদের মতে, নতুন কৌশল অনেকটাই রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে গেছে। দুই দেশের চিন্তায় তেমন কোনো ভিন্নতা নেই।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন ৩৩ পৃষ্ঠার ওই নথি প্রকাশ করেছে। ইউরোপে 'সভ্যতার অবক্ষয়' ঘটছে বলে ওই নথিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

পাশাপাশি, চলতি প্রথা ভেঙে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি 'হুমকি নয়', এমন মত দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।  

নথিতে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রাধান্যের বিষয়গুলোকে তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।

যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি শক্তির প্রভাবমুক্ত রাখা, গণহারে অভিবাসন ঠেকানো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথাকথিত 'সেন্সরশিপ' চর্চা প্রত্যাখ্যান করার মতো বিষয়ের উল্লেখ আছে এতে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক এই কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়া এবং ক্রেমলিনের ভাষার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়ার মতো অভিযোগ এনেছেন তারা।

'ইতিবাচক উদ্যোগ'

অপরদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'যেসব পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি—তার বেশিরভাগই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে যায়।'

রোববার রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পেসকভ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। ছবি: রয়টার্স

'আমরা এটাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি', যোগ করেন তিনি।

আরও জানান, চূড়ান্ত মত দেওয়ার আগে মস্কো মার্কিন নথিটি আরও ভালো করে যাচাই-বাছাই করে দেখবে।

ইইউ'র আশংকা

আগের নিরাপত্তা কৌশল নথির সঙ্গে তুলনায় এবারের নথিতে রাশিয়ার প্রতি 'উদারতা' দেখানো হয়েছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা আশংকা প্রকাশ করেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের ফলে রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধে রাজি করানোর কাজটি ইইউর জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

নথিতে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোই বাধা সৃষ্টি করেছে

'যুক্তরাষ্ট্রকে এখন নতুন করে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে' যার মাধ্যমে 'ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলো স্থিতিশীলতা অর্জন করবে'।

মার্কিন নথিতে ইউরোপের নীতিমালাকে প্রভাবিত করার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিশ্লেষকরা।  

ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরুসুলা ফন দার লেইয়েন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ইউরোপীয় কমিশন প্রধান উরুসুলা ফন দার লেইয়েন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নতুন এই প্রতিবেদনে 'পশ্চিমা ব্যক্তিসত্তা' ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হয় এবং আশংকা করা হয়, চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে '২০ বছরের কম সময়ের মধ্যে ইউরোপকে আর চেনা যাবে না।'

'অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর তুলনায় ইউরোপীয় সভ্যতার অবক্ষয়ের ঝুঁকি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও উদ্বেগজনক', নথিতে জানানো হয়।   

'সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ (যুক্তরাষ্ট্রের) নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে টিকে থাকার মতো অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারবে কী না, তা খুব একটা নিশ্চিত নয়', নথিতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

'আমেরিকা ফার্স্ট'

নথিতে 'আমেরিকা ফার্স্ট' বা 'সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ' রক্ষার সুর ফুটে উঠেছে। আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সমুদ্র ও প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্তে মাদক পাচারকারী নৌযানের চলাচল প্রতিহত করার দিকে নজর দিতে থাকবে এবং প্রয়োজনে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানও পরিচালিত হতে পারে।  

পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা খাতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানকে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় নথিতে।

ইউরোপের কয়েকটি দেশের নেতা ইতোমধ্যে এই কৌশলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একমাত্র ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলো যুক্তরাষ্ট্র-ইইউর ইতিবাচক সম্পর্ক।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা হুশিয়ারি দেন, এই নথি মার্কিন বৈদেশিক সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে। 

মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভায় কলোরাডোর প্রতিনিধি জেসন ক্রো এই কৌশল 'গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে' বলে আশংকা প্রকাশ করেন।

নিউইয়র্কের প্রতিনিধি গ্রেগোরি মিকস জানান, 'বেশ কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যে মূল্যবোধ ভিত্তিক নেতৃত্ব দিয়ে আসছে, তা এই নথিতে নাকচ করা হয়েছে।'