সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কিছুই জানতেন না বলে তার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের এক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ চুক্তির পর এ কথা বলেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদের পক্ষে কথা বলেন। এমন সাফাই গাইতে গাইতে ট্রাম্প তাকে হোয়াইট হাউসে আদর, আপ্যায়ন করেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি এবং এফ-৩৫ জেট বিক্রির অনুমোদন দেয়। ট্রাম্প চেষ্টা করেন ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগির নির্মম হত্যা ও টুকরো টুকরো করে ফেলার ঘটনাটি আড়াল করে যেতে। ওভাল অফিসে একজন সাংবাদিক যুবরাজকে হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প ক্ষেপে ওঠেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই সাংবাদিক সৌদি অতিথিকে ‘বিব্রত’ করেছেন। তিনি খাশোগিকে ‘অত্যন্ত বিতর্কিত’ ব্যক্তি বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আপনি যার কথা বলছেন, তাকে অনেকেই পছন্দ করতেন না। আপনি তাকে পছন্দ করুন বা না করুন- ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু (যুবরাজ) এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এখানেই শেষ করা যেতে পারে। আমাদের অতিথিকে বিব্রত করার জন্য এমন প্রশ্ন করার দরকার নেই।
সৌদি যুবরাজ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের অঙ্গীকার নিয়ে এই প্রথমবারের মতো হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ড ছিল ‘বেদনাদায়ক’ এবং ‘একটি বড় ভুল’। ট্রাম্পের মন্তব্য ২০২১ সালের মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, যুবরাজ মোহাম্মদই খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। খাশোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ দোষ চাপায় ‘বেআইনি’ এজেন্টদের ওপর। খাসোগির বিধবা স্ত্রী হানান এলাতার খাশোগি বলেন, তার স্বামীকে হত্যার ‘কোনো অজুহাত হতে পারে না’। তিনি যুবরাজকে অনুরোধ জানান তাকে দেখা করার, ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য। এই হত্যাকাণ্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বড় কূটনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল।
কিন্তু এবার ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিলেন যে, তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যেতে চান। ট্রাম্প আরও দাবি করেন, এবিসি নিউজের লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। কারণ তাদের সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি একে ‘নিকৃষ্ট কোম্পানি’ বলে গালাগাল করেন। এর আগে ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প যুবরাজকে অভ্যর্থনা জানাতে সব আয়োজন করেন। আকাশে মার্কিন এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটারের প্রদর্শনী করেন। সঙ্গে গর্জে ওঠে কামানের সালাম। ওভাল অফিসের ভেতরও তোষামোদ চলতে থাকে। ট্রাম্প যুবরাজকে বলেন ‘খুব ভালো বন্ধু’ এবং মানবাধিকারসহ অন্যান্য বিষয়ে তাকে ‘অসাধারণ’ বলে প্রশংসা করেন। পরবর্তী সময়ে দুই দেশ একগুচ্ছ চুক্তি সই করে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য। হোয়াইট হাউস জানায়, তারা বেসামরিক পারমাণবিক জ্বালানি সহযোগিতা চুক্তি অনুমোদন করেছে। যা বহু-বিলিয়ন ডলারের অংশীদারিত্ব এবং বহু দশক স্থায়ী হবে। ট্রাম্প একটি বড় প্রতিরক্ষা বিক্রয় প্যাকেজও অনুমোদন দেন। এর মধ্যে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ সরবরাহও রয়েছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ভাগাভাগি করতেও সম্মত হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি যেন বিদেশি প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। পরে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আয়োজিত জমকালো নৈশভোজেও অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন সৌদি আরবে খেলেন। তিনিও হোয়াইট হাউসে উপস্থিত থাকবেন বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান।
ট্রাম্প বলেন, তিনি যুবরাজকে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ তিনি গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির সুযোগে বৃহত্তর আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। যুবরাজ বলেন, তিনি এই চুক্তিতে যোগ দিতে চান, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সই করা বড় কূটনৈতিক সাফল্য। তবে তার আগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ‘সুস্পষ্ট পথ’ প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেও যুবরাজ ট্রাম্প ও তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। একদিন আগেই মালদ্বীপে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে নতুন হোটেল প্রকল্প ঘোষণা করেছিল এক সৌদি ডেভেলপার। এ নিয়ে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে ট্রাম্প বলেন, আমার পরিবারের ব্যবসার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সব ছেড়ে দিয়েছি।