বিদেশি কর্মী নিয়োগে নতুন বাস্তবতার দিকে যাচ্ছে সৌদি আরব। দেশটি এক সময়ে উচ্চ বেতন-প্রণোদনা (স্যালারি প্রিমিয়াম) দিয়ে বিদেশি উচ্চদক্ষ কর্মীদের আকৃষ্ট করত। কিন্তু এখন এ নীতি থেকে সরে আসছে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চারজন নিয়োগ বিশেষজ্ঞের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্যয় সংকোচন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাতে বিদেশি নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো উদার প্রস্তাব আর দিচ্ছে না সৌদি। এর মধ্যে অন্যতম হলো নির্মাণ, উৎপাদন ও মেগা প্রকল্পগুলো।
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব ‘ভিশন ২০৩০’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনার লক্ষ্য তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং পর্যটন, রিয়েল এস্টেট, খনন ও আর্থিক খাত সম্প্রসারণ। এসব লক্ষ্যে বহু বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগও করেছে দেশটি। তবে বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি।
নিয়োগদাতাদের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগে সৌদিতে যোগ দিলে নিজের বর্তমান বেতনের ৪০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়তি প্রিমিয়াম পাওয়া সাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু এখন প্রস্তাব অনেক বেশি সংযত।
বয়ডেনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ম্যাগদি আল জায়েন বলেন, একদিকে অঞ্চলটির সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ব্যয় কমাচ্ছে, অন্যদিকে প্রচুর আন্তর্জাতিক প্রার্থী এখানে আসতে আগ্রহী। ফলে কোম্পানিগুলো বেতন প্যাকেজ পুনর্বিবেচনা করছে।
দুবাইভিত্তিক টাস্কান মিডল ইস্টের সিইও হাসান বাবাত বলেন, আগে আমিরাতে ৬০ হাজার ডলার বেতনের ম্যানেজাররা সৌদিতে ১ লাখ ডলারের প্রস্তাব পেতেন। এখন আর সে সুযোগ নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে থাকা প্রার্থীদের জন্য সৌদি এখনো আকর্ষণীয় বাজার তালিকায় রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি ২০২৫ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পথে রয়েছে। পাশাপাশি, সরকার বেসরকারি খাতে সৌদি নাগরিকের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বেসরকারি খাতে সৌদি কর্মীর সংখ্যা ৩১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া নাগরিকদের বেকারত্ব ঐতিহাসিকভাবে কমেছে।
ম্যাচেস ট্যালেন্টের সিইও লুইস নুটসন বলেন, বেতন প্যাকেজ এখন বাস্তব বাজারমান, পারফরম্যান্স ও ডেটাভিত্তিক। কারও কাছে এটা সংকোচন মনে হতে পারে, কিন্তু এটি বাজারের পরিপক্বতার লক্ষণ। তিনি বলেন, সৌদিতে সেরা প্রতিভা আনতে হলে কোম্পানিগুলোকে পারিবারিক জীবনযাপনের ভারসাম্য, জীবনযাত্রার খরচ ও প্রকল্পের উদ্দেশ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।