Image description

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি তার মুসলিম পরিচয়কে ঘিরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ‘বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন আক্রমণ’-এর জবাবে এক আবেগঘন ভাষণ দিয়েছেন। আগামীকাল থেকেই নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হবে, আর তার ঠিক একদিন আগে শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ব্রঙ্কসের এক মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি এই বক্তব্য দেন।

ঘৃণাকে সামনে আনার জন্য বিরোধীদের সমালোচনা করে মামদানি বলেন, ‘তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ঘৃণাকে রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এই ইসলামোফোবিয়া কেবল তাকেই নয়, বরং নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ মুসলিমকেও প্রভাবিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিউইয়র্কে মুসলিম হিসেবে জন্ম নেওয়া মানেই অপমানের অভিজ্ঞতা অর্জন করা। কিন্তু অপমান আমাদের আলাদা করে না। এই অপমানকে সহ্য করাই আমাদের আলাদা করে।’ আগামী ৪ নভেম্বর হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনের দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে এ কথা বলেন মামদানি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাসেম্বলির সদস্য মামদানি জানান, তার প্রচারণা মূলত জীবনযাত্রার ব্যয় ও সাশ্রয়িতা ইস্যুতে কেন্দ্রীভূত হলেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ইসলামফোবিয়া যেন একটি ঐকমত্যের ক্ষেত্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।

এই বক্তৃতা আসে এমন এক সময়, যখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো এক রেডিও সাক্ষাৎকারে ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যে হাসি দেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সিড রোজেনবার্গ বলেন, ‘মামদানি আরেকটি ৯/১১ হামলা হলে খুশি হবেন, উল্লাস করবেন।’

 

এই ঘটনার পর মুসলিম অধিকারসংরক্ষণ সংগঠন সিএআইআর অ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলকারা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একজন মুসলিম নির্বাচিত রাজনীতিক আরেকটি ৯/১১ নিয়ে আনন্দ করবেন—এমন মন্তব্য দেয়া নিন্দনীয়, বিপজ্জনক ও রাজনৈতিকভাবে অযোগ্যতার প্রমাণ। কুওমো এই বক্তব্যের মাধ্যমে নৈতিক সীমা অতিক্রম করেছে।’

রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মামদানি। তিনি বলেন, ‘বিতর্কে আমাকে ‘গ্লোবাল জিহাদের সমর্থক’ বলা হয়েছে। সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির বিজ্ঞাপনগুলো আমাকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এমনকি আমার খাওয়ার ভঙ্গি নিয়েও উপহাস করা হয়েছে।’

ভাষণে মামদানি নিজের পরিবারের সদস্যদের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৯/১১-র পর তার এক ফুফু হিজাব পরা অবস্থায় সাবওয়ে ব্যবহার বন্ধ করে দেন নিরাপত্তাহীনতার কারণে। তার এক কর্মীর গ্যারেজে “টেরোরিস্ট” শব্দটি স্প্রে পেইন্ট করে লেখা হয়। এমনকি তাকেও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল নির্বাচনে জিততে চাইলে নিজের মুসলিম পরিচয় প্রকাশ না করতে।

একই দিনে, শুক্রবারই তিনি গুরুত্বপূর্ণ এক সমর্থন পান। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক নেতা হাকিম জেফ্রিস আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে সমর্থন জানান। এছাড়া নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল, কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এবং সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও এর আগে তাকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ মহলের কিছু সদস্য, বিশেষ করে সিনেটর চাক শুমার এখনো তার পক্ষে অবস্থান নেননি। তবুও গত জুনে দলের প্রাইমারি নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জিতে মমদানি এখন সাধারণ নির্বাচনে এগিয়ে আছেন।

এদিকে, দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কে জড়ানো বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার পর সম্প্রতি কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের ৪৩.২ শতাংশ মামদানির পক্ষে আছেন। কুমো পেয়েছেন ২৮.৯ শতাংশ, স্লিওয়া ১৯.৪ শতাংশ, আর ৮.৪ শতাংশ ভোটার এখনো অনিশ্চিত। জরিপে দেখা গেছে, ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু জীবনযাত্রার ব্যয়। এরপর রয়েছে জননিরাপত্তা ও আবাসন খরচের প্রশ্ন।

সূত্র: আল জাজিরা