
প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর থেকে দিনের আলোয় সংঘটিত এক চাঞ্চল্যকর চুরিতে ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো (প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা) মূল্যের গহনা চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরাসি প্রসিকিউটর লর বেকুয়ো। তিনি আরটিএল রেডিওকে জানান, এই পরিমাণ অর্থ “অস্বাভাবিক”, তবে এর চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে। খবর বিবিসির।
চুরি হওয়া গহনার মধ্যে ছিল দুই নেপোলিয়নের স্ত্রীর জন্য উপহার দেওয়া রাজমুকুট ও অলংকার, যার মধ্যে সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রীর জন্য তৈরি একটি হীরা ও পান্নার নেকলেস, সম্রাজ্ঞী ইউজেনির (নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী) ব্যবহৃত একটি টিয়ারা এবং রানি মেরি-আমেলির মালিকানাধীন কয়েকটি গহনা।
স্থানীয় সময় রোববার (১৯ অক্টােবর) সকালে জাদুঘর খোলার পরপরই, মাত্র আট মিনিটের মধ্যেই চার মুখোশধারী চোর এই গহনাগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। তারা শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে কাচ কেটে জাদুঘরের গ্যালারি দ্য অ্যাপোলন অংশে ঢোকে। চোরেরা প্রহরীদের হুমকি দিয়ে ভবন খালি করিয়ে দেয় এবং সেইন নদীর ধারে একটি বারান্দা দিয়ে প্রবেশ করে।
পালানোর সময় চোরেরা সম্রাজ্ঞী ইউজেনির একটি ক্ষতিগ্রস্ত মুকুট ফেলে যায়, যা পরে তদন্তকারীরা উদ্ধার করেন। ডাকাতরা একটি যান্ত্রিক লিফটযুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে জাদুঘরে ঢোকে এবং পরে স্কুটারে পালিয়ে যায়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ঘটনাকে “ফ্রান্সের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত” বলে বর্ণনা করেছেন। এরপর থেকেই দেশটির সব সাংস্কৃতিক স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

তদন্তে জানা গেছে, ল্যুভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কক্ষে সিসিটিভি নেই এবং চুরির সময় অ্যালার্ম সিস্টেমও কাজ করেনি। ফরাসি বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। চোরেরা যেভাবে একটি ট্রাক নিয়ে সরাসরি জাদুঘরে ঢুকতে পেরেছে, তা ফ্রান্সের জন্য ভয়াবহ একটি চিত্র।”
তদন্তকারীরা মনে করছেন, এটি একটি অভিজ্ঞ পেশাদার দলের কাজ, কারণ পুরো অভিযানটি ছিল দ্রুত, পরিকল্পিত ও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন।

শিল্প পুনরুদ্ধার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি এক বা দুই দিনের মধ্যে গহনাগুলো উদ্ধার না করা যায়, তবে সেগুলো ‘চিরতরে হারিয়ে যাবে’। অনেকের ধারণা, গহনাগুলো ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং রত্ন ও মূল্যবান ধাতু হিসেবে দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে, যা বিক্রি হবে মূল দামের সামান্য অংশে।
ফরাসি প্রসিকিউটর বেকুয়ো আশা প্রকাশ করেছেন, গহনার উচ্চমূল্য প্রকাশের ফলে চোরেরা “দুইবার ভাববে” এবং এই ঐতিহাসিক অলংকারগুলো নষ্ট করবে না।